গোলাপ বাগানে কালো সাপ
———————————
”সামি” তার নাম। যে আমাকে সবসময় ফলো করতো। খুব সকালে বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যেতাম। কখনো হেঁটে কখনো রিক্সায়। আমি খেয়াল করেছি কিন্তু সে যে আমাকে ফলো করতো তা জানতামনা। আমি ভাবতাম সে বুঝি তার কাজেই যায় এমন সময়।
বেশ কয়েকবছর পর ঈদের দিনে লুনার বাসায় আমাদের দেখা। সে জানতোনা লুনা আমার জুনিয়র ফ্রেন্ড। সে লুনাকে বললো প্লিজ ভাবি আপনার বান্ধবীর সাথে একবার কথা বলায় দেন। আমি তার সাথে একবার কথা বলবো। আমার স্বামী আর লুনার স্বামী এবং সে ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছে। লুনা আমাকে এসে বললো মিলি আপা সামি ভাই আপনার সাথে একটু কথা বলতে চায়। তার সাথে একটু কথা বলেননা প্লিজ। আমি জানতে চাইলাম কে সামি ভাই। বললো এহতেশামের বন্ধু। জানতে চাইলাম কি কথা !? বললো জানিনা। লুনা ঘর থেকে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পরে তাকে নিয়ে আসলো। আমি বেশ আড়ষ্ট হয়ে বসলাম। কেমন অস্বস্তি লাগছিল। অন্য দিকে তাকিয়ে আমার ছেলেদের সাথে কথা বলছিলাম। যেনো তার দিকে না তাকাই।
কেমন আছেন আপনি ? জানেন গত সাত বছর আমি আপনাকে অনেক খুঁজে বেড়িয়েছি ! কিন্তু পাইনি কোথাও পাইনি দেখতে আপনাকে ! ভীষণ মন খারাপ হতো। আমি আপনাকে তিন বছর ফলো করেছি। আমি বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকতাম কখন আপনি বের হবেন ছেলেকে নিয়ে। আর আমি আপনাকে দেখতে পারবো। আমি আপনাকে খুব পছন্দ করি, খুব পছন্দ করি খুব ভালোবাসি।
এক নিঃশ্বাসে সে কথা গুলো বলে গেলো। আমার হাত পা কেমন অবশ হয়ে আসছিল কি একটা অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল। চুপ হয়ে ছিলাম আমি কিচ্ছু বলিনি। সেদিন একটা পেস্ট কালারের রুপোলী পাথরের কাজ করা শাড়ি পরেছিলাম। বললো আজ আপনাকে আকাশ পরীর মতো লাগছে। অবশ্য আপনাকে সব কিছুতেই বেশ মানায় সুন্দর লাগে। আপনার কথা হাসি ব্যবহার আমার ভীষণ ভালো লাগে। সেদিন ঝুমুর বিয়ের দিনে ঘেমে নেয়ে আপনি বারবার টিস্যু পেপার দিয়ে মুখ মুছছিলেন। আমি দূরে একটা চেয়ারে বসে মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম। কি জানি কেনো আপনাকে এতো ভালো লাগে জানিনা।
আজ অনেক বছর পর তার কথা মনে হলো। জানিনা আজও বিয়ে করেছে কিনা কোথায় থাকে। কিংবা বেঁচে আছে কিনা। কি জানি !
আজ নিহারি রান্না করেছিলাম। রাতে একটা নিহারির হাড্ডি নিয়ে বেশ মজা করে হাড্ডি থেকে মাংস গুলো ছিড়ে খাচ্ছিলাম। হঠাৎ সামির কথা মনে হলো। আচ্ছা আজ যদি সে আমাকে এমন করে হাড্ডি চিবোতে দেখতো তাহলে কি বলতো ! বাহ্ আপনাকে দেখতে ভীষণ ভালো লাগছে ! কি সুন্দর করে হাড্ডি চিবোচ্ছেন ! নাহ্ আমার মনে হয়না তা বলতো। মনে হয় মনে মনে বলতো ইস মহিলাটা কি ! কেমন রাক্ষসীর মতো হাড্ডি থেকে মাংস গুলো চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে! ইস কি ভয়ংকর লাগছে দেখতে !
স্মৃতিরা ভীষণ মধুর। মন খারাপে মন ভালো করে দেয়। নিজেকে ভাবি। একদিন আমিও ছিলাম তোমাদের সবার মাঝে।
লেখিকাঃ নাসরিন খান এর বসবাস ঢাকার পল্লবীতে। শখের বসে লেখালেখি করেন। বন্ধু বৎসল একজন মানুষ। সহপাঠী বন্ধুদের নিয়ে ফেসবুকে গ্রূপ এক্টিভিটিজে যথেষ্ট সময় দেন। মানবিক আচরণের কারনে বন্ধু মহলে বিশেষ ভাবে সমাদৃত। নাসরিন খান এর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে এই জীবনালেখ্য টি সংগৃহিত।
কিউএনবি/বিপুল/১০.০৯.২০২২/সকাল ১০.৪৩