প্রতিদিন চিরকুট, টফি অথবা ইভিনিংটাস
————————————————–
শেষ বিকেলের সূর্যটা কমলা আলো ছড়িয়ে যখন যায় যায় করতো আমি ছাদে দাঁড়িয়ে শুধু অপলক চেয়ে রইতাম এই বুঝি গলিতে ঢুকছো তুমি! চারপাশের আলো কমতে শুরু করেছে যে যার বাড়িতে ঢুকতে ব্যস্ত, ঠিক তখন পেতাম তোমার দেখা! প্রতিদিনের রুটিন ছিলো সেটা। এলোমেলো চুলে বইয়ের ব্যাগ ঝুলছে ঘাড়ে।
তুমি আর তোমার সাথে তোমার আরেক বন্ধু দুজনে সেই জহুরুল হক হল থেকে সেন্ট্রালরোডে। ভার্সিটি, টিউশনি সেরে সারাদিনের ক্লান্ত শরীরেও আমার বাড়ি পাশের বাড়ির সকল লোকের চোখকে আড়াল করে একনজর দেখবে বলে দেয়ালের ওপাড়ে এসে দাঁড়াতে।
অসময়ে তোমাদের আগমনে কুকুরের ডাকাডাকি যেতো বেড়ে। সবাই ছাদ থেকে নেমে যেতো যে যার ঘরে, আর আমি একদৌড়ে গেটে যেনো কুকূর তোমার সাথে বাড়াবাড়ি না করে। কথার তো কোন সময় থাকতো না কেমন আছি জানতে চেয়েই দুই লাইনের চিরকুট আর ইভিনিং টাস হাতে দিয়ে দূরথেকে হাত নেড়ে আবার ফিরে যেতে। ঘরে ফিরে চুপি চুপি চিরকুট খুলেই চোখ উঠতো কপালে!
আশা থাকতো ভালোবাসার কতোশত কথা মেশানো লেখা একটা চিঠি পড়বো বান্ধবী নীলার প্রেমিকের লেখা চিঠির মতো। কিন্তু না ক্লাস ফাকি দেবেনা একদম। আমি জানি তুমি খুব পড়া চোর। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। খাওয়া আর পড়া করবে ঠিক মতো, সন্ধ্যায় এসো কিন্তু সাদে ব্যাস এই থাকতো চিরকুটে। ভাবতাম একি কোন প্রেমিকের লেখা!এতো আদর আর ভালোবাসায় মিশানো আদেশ! এ যেনো কোন ভাইয়ের উপদেশ।
তার পরেও সেই একই অপেক্ষা আবার সেই গোধূলি সন্ধ্যা আর তোমার অপেক্ষা। কখনো সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হঠাৎ কুকুরের ডাক! আমি বুঝে যেতাম।
কিন্তু কি করি এখন তো আর কারো চোখ ফাকি দিয়ে গেটে নাহি যেতে পারি। দৌড়ে যাই কিচেনে চাম্পার কাছে পারলে ওর পায়ে ধরি, ওদিকে বাড়ছে কুকুরের ডাকা ডাকি, দয়া হয় চাম্পার। মুহূর্তেই বুদ্ধি খাটিয়ে ছুটতো মোরের দোকনটায় চা, চিনি, লবন কিছু একটা যেনো তার খুব প্রয়োজন। যতোক্ষণ ও না ফিরতো আল্লাহর নাম ঠোঁটে থাকতো।
তারপর যখন প্রতিদিনের ঐ একই চিরকুট নিয়ে ও ফিরতো ওর চোখ চকচক করতো, কাছে এসে চুপিচুপি বলতো, আফা ভাইয়া খুবই ভালো মানুষ আমারে এই বিস্কুট টা দিছে আর আপনারে তার চিন্তা না কইরা পড়তে কইছে। আমি মনে মনে বলি আবার সেই পড়া! এইডা তো চিরকুটেই লেখা আছেরে চাম্পা! কিন্তু আমার তো পড়তে মোটেও মন চায় না, আমার তো তারে নিয়া সংসার করতে মন চায়। সারাক্ষণ আমি মনে মনে কত কি ভাবি মজার মজার বিভিন্ন রকম রান্না রাঁধিবো বাচ্চাকাচ্চা শশুর- শাশুড়ি, দেবর-ননদ নিয়া ভরা সংসারে আনন্দে সংসার করিবো নায়িকা শাবানা ববিতাগো মতো। ইহাই তো আমার স্বপ্ন সারাক্ষণ।
খাও চাম্পা আমার পছন্দের ইভিনিং টাস বিস্কুট টা আজ তুইই খাও! এভাবেই দিন, ক্ষণ,মাস, বছর, পার হইলো কতো গোধূলি লগন গেলো। আত্মীয় ও আপার বন্ধু হওয়ার সুবাদে মাঝে মাঝে অংক আর অনেক গল্প হতো তাহার সনে।
তারপর তাহার সাথেই সংসার হইলো, সন্তান হইলো, আত্মীয় পরিজনের সাথে কতশত দায়িত্ব বাড়িলো ববিতা শাবানার সংসার করতে দেখা সেই সংসারের সাধও মিটিলো। একে একে সব ইচ্ছাই পূরণ হইলো। কেবল শাবানা ববিতাদের ছবির সংসারের সাথে জীবন সংসারের মিল নাহি চোখে পরিল।
লেখিকাঃ গুলশান আরা ইসলাম’ এর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে পোস্টটি সংগ্রহ করা হয়েছে। ঢাকার মোহাম্মদপুরের গুলশান আরা ইসলাম নিয়মিতভাবে চমৎকার লেখনীর মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক চমৎকার পোস্ট উপহার দিয়ে থাকেন।
কিউএনবি/বিপুল/১৮.০৮.২০২২/ দুপুর ১.৩০