মো. সাইদুল আনাম, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মার দুর্গম চরে খড়ের মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে দুই সন্ত্রাসী বাহিনীর গোলাগুলি ও হামলায় তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। মন্ডল পক্ষের নিহত আমান মন্ডলের বাবা মিনহাজ মন্ডল বাদী হয়ে বুধবার বিকেলে দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় প্রতিপক্ষ কাকন বাহিনীর প্রধান কাকনসহ ২৩ জনের নাম উল্লেখসহ ২০ থেকে ৩০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
হত্যাকান্ডের দু’দিন পর এ মামলা দায়ের করা হলো। এর আগে সোমবার দুপুরে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, রাজশাহীর বাঘা ও নাটোরের লালপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী দৌলতপুরের মরিচা ইউনিয়নের চৌদ্দহাজার মৌজার নিচ খানপাড়া এলাকায় বিস্তীর্ণ চরের খড়ের মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে বাঘা উপজেলার মন্ডল বাহিনী ও দৌলতপুরের কাকন বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ গোলাগুলি ও হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে।
কয়েক ঘন্টা ধরে চলা সংঘর্ষে গুলি ও ধারাল অস্ত্রের আঘাতে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের নিচ খানপাড়া এলাকার মিনহাজ মন্ডলের ছেলে আমান মন্ডল (৩৬) এবং শুকুর মন্ডলের ছেলে নাজমুল মন্ডল (২৬) গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। নিহতরা মূলত কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বাসিন্দা ছিলেন। নদীভাঙনের শিকার হয়ে তারা বাঘার নিচ খানপাড়ায় অস্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে চাঁন মন্ডলের ছেলে মন্ডল বাহিনী প্রধান মুনতাজ মন্ডল (৩২) ও আরশাদ মন্ডলের ছেলে রাকিব মন্ডল (১৮) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এছাড়াও এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের চৌদ্দহাজার মৌজার চর এলাকায় পদ্মা নদী থেকে লিটন আলী (২৬) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে নৌ-পুলিশ। সে ভেড়ামারা উপজেলার রায়টা ঘোষপাড়া এলাকার জামরুল ইসলামের ছেলে। তার শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পেশায় তিনি কসমেটিকস ব্যবসায়ী এবং কাকন বাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পাবনার ঈশ্বরদী নৌ-পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এস আই শফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গোলাগুলি ও সংঘর্ষের পর পদ্মার চর থেকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ গুলির খোসা, কয়েক রাউন্ড তাজা গুলি ও রক্তমাখা ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করে। তবে ঘটনাস্থলটি কোন থানার আওতাধীন তা নির্ধারণ করতে রাজশাহী ও খুলনা রেঞ্জের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মঙ্গলবার দিনভর ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন, যারফলে মামলা কার্যক্রমে বিলম্ব হয়। পরে ঘটনাস্থলটি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার আওতায় পড়ে। দু’দিন পর বুধবার এ মামলা দায়ের করা হয়। এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান শেখ বলেন, নিহত আমান মন্ডলের বাবা মিনহাজ মন্ডল বাদী হয়ে মামলা করেছেন। পদ্মার চরাঞ্চলটি অত্যন্ত দুর্গম হওয়ায় এখনো কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
তবে পুলিশ অভিযানে রয়েছে। এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলের সীমানা নিয়ে জটিলতা ছিল, আমরা সরোজমিনে তা নির্ধারণ করেছি। এটি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার আওতাধীন এলাকা। ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণে গুলির খোসা ও রক্তাক্ত ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে কাকনসহ ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে ও ২০ থেকে ৩০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন মন্ডল গ্রুপের নিহতের পরিবার। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
উল্লেখ্য, অভিযুক্ত কাকন বাহিনীর প্রধান কাকন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের মাঝদিয়াড় গ্রামের মৃত জমির উদ্দিনের ছেলে। তিনি স্থানীয় প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে পদ্মা নদীর বালুমহাল ও চরাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতেন। বালুমহাল দখল ও আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে গড়ে তোলেন সশস্ত্র কাকন বাহিনী। বর্তমানে এ বাহিনীর সক্রিয় সদস্য সংখ্যা ৪০ জনের বেশি। তারা দীর্ঘদিন ধরে কুষ্টিয়া, পাবনা, রাজশাহী, বাঘা ও নাটোরের পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে।
কিউএনবি/আয়শা/২৯ অক্টোবর ২০২৫,/রাত ১১:৪৩