বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২০ অপরাহ্ন

ছুটির দিনে বইমেলায় উপচে পড়া ভিড়

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৬২৪ Time View

সাহিত্য ডেস্ক : যতই দিন যাচ্ছে অমর একুশে বইমেলায় পাঠক-দর্শনার্থীদের ভিড় ততই বাড়ছে। শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় মেলা প্রাঙ্গণে পাঠক-ক্রেতা-দর্শনার্থী এবং লেখক-প্রকাশকের উপচে পড়া ভিড় ছিল। বেলা ৩টা থেকে প্রবেশ মুখে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির আশপাশের এলাকায় প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে।    

শুক্রবার ফাল্গুনের প্রথম দিন ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষ্যে পাঠক-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মেলা কানায়-কানায় পূর্ণ ছিল। এদিন ফাগুনের ছোঁয়ায় হলুদ, বেগুনি, লাল-নীল শাড়ি পরে তরুণীরা ও হরেক রঙের পাঞ্জাবিতে সেজে মেলায় এসেছিলেন ছেলেরা। নারীদের মাথায় ছিল ফুল। শনিবারও ফাগুনের এমন আমেজ দেখা গেছে প্রাণের মেলায়। ক্রেতার উপস্থিতির সঙ্গে বিক্রিও খুব ভালো বলে জানালেন বিক্রেতারা।

অন্যপ্রকাশের এক বিক্রয়কর্মী জানান, মেলা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঠকের ভিড় ছিল বেশ। পাশাপাশি বই বিক্রিও ভালো হয়েছে। কাকলী প্রকাশনীর সামনে পাঠকের ভিড় দেখা গেছে বেশি। জানতে চাইলে বিক্রয়কর্মীরা জানান, কয়েক দিন ধরে প্রকৃত পাঠকরা আসছেন। তাই তারা পছন্দ করে বই কিনছেন। উপন্যাস ধরনের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। পাঞ্জেরী পাবলিকেশনের সামনেও ভিড় দেখা গেছে। সেখানে ধানমন্ডি থেকে আসা একটি পরিবারকে ছেলেমেয়েদের জন্য বেসিক আলী ও সুপার হিরু বই কিনতে দেখা গেছে। মেলায় ইসলামি বই বিক্রি হয় এমন স্টলগুলোতে ভিড় দেখা গেছে। রুহামা পাবলিকেশনে ইসলামি বই কিনতে পাঠকের ভিড় ছিল বেশি। মেলায় শনিবার নতুন বই এসেছে ১৭৫টি।

বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জীবন ও কর্ম : সৈয়দ আলী আহসান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুহম্মদ আবদুল বাতেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন তারেক রেজা ও মহিবুর রহিম। সভাপতিত্ব করেন যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার।

প্রাবন্ধিক বলেন, কবি, মনীষী সৈয়দ আলী আহসান আমাদের দেশ, জাতি ও ভাষার একজন সেরা পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব। তিনি একই সঙ্গে কবি ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে দেশ ও দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সম্মান অর্জন করেছেন। জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তার বিচরণ ছিল অবাধ। শিক্ষাবিদ, গবেষক, সাহিত্য ও শিল্প সমালোচক হিসেবে অসামান্য অবদান রেখেছেন। আধুনিক বাংলা কবিতায় ভাষা ও ভাবের স্বাতন্ত্র্য সৃষ্টিতে সৈয়দ আলী আহসান পথিকৃতের ভ‚মিকা পালন করেছেন। বিশ্ব সাহিত্যের সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের সংযোগকে পরিপূর্ণতা দিয়েছিলেন সৈয়দ আলী আহসান।

সভাপতির বক্তব্যে কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, সৈয়দ আলী আহসান ছিলেন বহুমাত্রিক, বহুবর্ণিল প্রতিভার অধিকারী। তিনি বাংলা সংস্কৃতির একজন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ছিলেন। ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতা ও বিশ্বাসের সঙ্গে বিজ্ঞানকে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে সৈয়দ আলী আহসান ছিলেন অনন্য। তার অসাধারণ কাজ ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত’। এগুলো অনেক দায়িত্বশীল কাজ। কোনো ভাবাবেগ দ্বারা তাড়িত হয়ে, মতলব দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সম্পন্ন করা কোনো কাজ নয়।

সৈয়দ আলী আহসানের অতুলনীয় সম্পাদনা ‘পদ্মাবতী’। পদ্মাবতী ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ও সম্পাদনা করেছিলেন। কিন্তু দুটির মধ্যে পার্থক্য আছে। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর সময় তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি ছিল। সৈয়দ আলী আহসানের সময় তা ছিল না। তার অনুবাদের কথা বলা যায় হযরত আলী (রা.)-এর বক্তব্য সংকলন ‘নাহজুল বালাগাত’। এর চেয়েও শ্রেষ্ঠ গ্রিক সাহিত্যের বই ইডিপাস। সৈয়দ আলী আহসান কর্তৃক বাংলায় নাটকটির অনুবাদটি সর্বশ্রেষ্ঠ।

তিনি বলেন, একটি দেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও সাংস্কৃতিক নীতিমালা তৈরি করা হয়নি। দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন পরিচালিত হচ্ছে কিছু অধ্যাদেশ ও ডিরেকশনের আওতায়, আন্দাজের ভিত্তিতে। এর ফলে ভারতীয় আধিপত্যবাদীরা সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালানোর অবারিত সুযোগ পেয়েছে। দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও বীরদের নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো নাটক লেখা হয়নি। এদেশে হাজী শরীয়তুল্লাহ, মহান মুক্তিযুদ্ধ, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে কোনো নাটক পাওয়া যায় না। টিভিতে যা নাটক দেখানো হয়, সস্তা কাহিনীতে ভরপুর।

তিনি বলেন, ভারতে বাংলাদেশের একটা চ্যানেলও দেখানো হয় না। নিষিদ্ধ করে দেওয়া আছে। কিন্তু বাংলাদেশে ভারতের সব চ্যানেলের জন্য দরজা উন্মুক্ত করে দেওয়া আছে। গলিত পুঁজের মতো এদেশে ভারতীয় সংস্কৃতি প্রবেশ করছে। আমি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে বলব, আল্লাহর দোহাই, এবারের মতো নিজেদের আকাশকে আবৃত করুন। অনেক হয়েছে, এবার আর নয়। সৈয়দ আলী আহসান রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন।

কলকাতার চামচ দিয়ে চিনি খাওয়া লোকেরা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। কলকাতা যেটাকে সঠিক বলে, পরদিন তারাও বলে, সেটা সঠিক। বাংলা একাডেমির প্রমিত বাংলা বানানের নামে পুরোটাই আনন্দবাজারের ফটোকপি করা হয়েছে। এসব লোকেরাই সৈয়দ আলী আহসান সম্পর্কে কুৎসিত কথা বলে গেছেন। বাংলা একাডেমিতে সৈয়দ আলী আহসানের নামে একটি অডিটোরিয়ামের নামকরণ করার দাবি জানাচ্ছি। এটা হলো ঋণ স্বীকার। সৈয়দ আলী আহসানের নামে একটা স্মারক গ্রন্থ তৈরির দাবি জানাচ্ছি।

শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা : শনিবার সকাল ১০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অমর একুশে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন শিল্পী সুমন মজুমদার, শিল্পী প্রিয়াংকা গোপ ও শিল্পী রেজাউল করিম। এদিন লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি শহীদুল্লাহ ফরায়েজী এবং কবি ও গবেষক মহিবুর রহিম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি তারিফ রহমান, কবি জাহিদ হায়দার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী সায়েরা হাবীব, শারমিন জুঁই ও শাহনাজ পারভীন লিপি।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫,/রাত ১০:২৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit