লেখক-গবেষক, রাজনীতিক ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ রোববার সকাল সকাল ১০টা ৫ মিনিটে রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। বদরুদ্দীন উমরের বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
প্রায় এক মাস ধরেই বদরুদ্দীন উমর অসুস্থ ছিলেন। তাঁকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে একাধিকবার। আজ সকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে আবার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বদরুদ্দীন উমরের মরদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে ফ্রিজিং গাড়িতে রাখা হবে। আগামীকাল বেলা ১১টার দিকে জাতীয় শহীদ মিনার বা অন্য কোনো স্থানে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ রাখা হবে। শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য স্থানটি এখনো ঠিক করা হয়নি। আগামীকাল দুপুরে জানাজার পর জুরাইনে তাঁর মা–বাবার কবরে বদরুদ্দীন উমরের দাফন সম্পন্ন হবে।
বদরুদ্দীন উমর মৃত্যুকালে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন। ছোট মেয়ে সারা আকতারই বদরুদ্দীন উমরের দেখাশোনা করতেন বলে জানান মুহাম্মদ কাইউম। তাঁর বড় মেয়ে লন্ডনে থাকেন। তিনি আগামীকাল দেশে আসবেন।
বদরুদ্দীন উমর লেখক-গবেষক ও বামপন্থী রাজনীতিক। ১৯৬১ সালে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে পিপিই ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে আসেন এবং ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। গভর্নর মোনায়েম খানের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদে ১৯৬৮ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে রাজনীতি ও লেখালেখিতে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর লেখা ‘পূর্ববাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ ভাষা আন্দোলনের ওপর প্রথম গবেষণাগ্রন্থ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালে চলা মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন সদ্য প্রয়াত বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, লেখক, গবেষক ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর।
বদরুদ্দীন উমরের এক জীবনের গবেষণা ও লেখালেখি কয়েক জীবনের সমান। উমর তাঁর কাজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত অনেক ধারণা ও চিন্তাকে ঝাঁকি দিয়েছিলেন। উনিশ শতকের কলকাত্তাই রেনেসাঁ ও তার মহাপুরুষদের নিয়ে মোহ কাটানোর বিপরীতে বদরুদ্দীন উমর দাঁড়িয়ে ছিলেন চীনের প্রাচীরের মত।
বদরুদ্দীন উমর ভাষা আন্দোলন থেকে আজ অবধি তাঁকে কেউ ক্ষমতার তাপে গলে যেতে দেখেনি, লাভের আশায় নুইয়ে পড়তে দেখেনি। বার্ধক্য অনেকের শরীর ও মনের শিরদাঁড়া বাঁকা করে ফেলে, অথচ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বদরুদ্দীন উমর ইতিহাসের সামনে সততা ও মনীষা নিয়ে খাড়া হয়েছিলেন।
লেখকঃ লুৎফর রহমান। রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট। নিউজ মিডিয়া সম্পাদক।
কিউএনবি/অর্চনা/০৮.০৯.২০২৫/রাত ১১.২৫