আলমগীর মানিক,রাঙামাটি : এবার পাহাড়ের ট্যুরিজম উদ্দ্যোক্তা চাকমা রাজ পরিবারের সদস্যকেও চাঁদার জন্য হুমকি দিয়েছে আঞ্চলিকদলীয় সন্ত্রাসীরা। এরআগেও রাঙামাটিতে সন্ত্রাসীদের হুমকির কারণে বেশ কয়েকটি ট্যুরিজম উদ্যোগ মাঝপথে মুখ থুবড়ে পড়ে।
একারনেই রাঙামাটিতে বাঙ্গালী জনগোষ্টির কোনো ব্যবসায়ি বা পাহাড়ের বাইরে থেকে আসা কোনো উদ্দোক্তা বড় কোনো ট্যুরিজম বা শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে পারেনি। বর্তমানে রাঙামাটিতে বেসরকারিভাবে যে কয়েকটি ট্যুরিজম স্পট ও রিসোর্ট আছে সবগুলোর মালিক-ই পাহাড়িরা। খবর নিয়ে জানাগেছে, এসব উদ্যোগের সাথে বাঙ্গালী কোনো ব্যবসায়ির সম্পৃক্ততার খবর পেলেই সন্ত্রাসীরা তাদের হুমকি-ধামকি দিয়ে মাঝপথে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
এবার হুমকি দিয়েছে সদ্য উদ্বোধন হতে যাওয়া একটি রিসোর্টের মালিককে। পেশায় প্রবীণ আইনজীবি এবং রাঙামাটির পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট প্রতীম রায় পাম্পুর মালিকানাধীন কাপ্তাইয়ের নেভি ক্যাম্প সংলগ্ন হ্রদ বেষ্টিত পাহাড়ে নতুনভাবে গড়ে তোলা এই ট্যুরিজম রিসোর্টটি আগামী মাসে উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
কিন্তু সম্প্রতি রিসোর্টের পাশের জনৈক অমর কুমার চাকমা নামের এক ব্যক্তি প্রথমে ২৫/০৪/২০২৫ইং তারিখে রিসোর্টের ৩০শতক জায়গা অবৈধভাবে দখল করে নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত ঘটায়। এরপর ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক সংগঠনের নাম ব্যবহার করে জনৈক ব্যক্তি ০১৮৮৩৬০৪২৭৬ নাম্বার দিয়ে অ্যাডভোকেট প্রতীম রায় পাম্পুকে কল দিয়ে ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সিনিয়র অ্যাডভোকেট প্রতীম রায় পাম্পু প্রতিবেদককে বলেন, এই ঘটনার পরও আমি চুপ ছিলাম। কিন্তু এরপর ইউপিডিএফ’র নাম ব্যবহার করে রাঙামাটি শহরেই আমার নিজ বসতঘরে এসে আমাকে হুমকি দিয়ে বলে, ট্যুরিজম রিসোর্ট ব্যবসার সাথে যাতে কোনো বাঙ্গালীকে সম্পৃক্ত না করি। বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের লোকজনকে সাথে রেখে রিসোর্ট করলে পরিনাম খারাপ হবে।
এই ঘটনাটিতে আমি হতবাক হয়েছি। তিনি বলেন, আমার নিজস্ব পারিবারিক জমিতে আমি কাকে নিয়ে ব্যবসা করবো সেই স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ আমাকে ব্যথিত করে তুলেছে। তাই আমি বিষয়টি স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তিদের অবহিত করেছি। দেখি তারা কি ব্যবস্থা নেয়।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা প্রতিবেদককে বলেন, আমরা ঘটনাটি অবগত হয়েছি এবং এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি পাহাড়ে আঞ্চলিক সংগঠনের নাম দিয়ে ব্যাপকহারে চাঁদাবাজিতে নাভিশ^াস উঠছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। সামান্য খুদে ব্যবসায়ি থেকে শুরু করে ঠিকাদার, স্থানীয় দোকানী, ট্যুরিজম ব্যবসায়ি সর্বোপরি জেলার সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তাও এই চাঁদাবাজদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
ইতোমধ্যেই রাঙামাটির প্রায় সবগুলো উপজেলাতেই অনেকগুলো মোবাইল টাওয়ার চাঁদার দাবিতে বন্ধ করে দিয়েছে আঞ্চলিকদলীয় সন্ত্রাসীরা। শহরের মধ্যেই ইন্টারনেট সেবা অনেকটা-ই সংকুচিত হয়ে পড়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়িদের অভিযোগ বিগত বছরগুলোর ন্যায় এবছর আঞ্চলিকদলীয় সন্ত্রাসীরা ৫গুন বেশি হারে চাঁদা দাবি করছে। নির্ধারিত চাঁদা না পেলেই সশস্ত্র হামলার পাশাপাশি অপহরণের হুমকি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিচ্ছে আঞ্চলিকদলীয় সন্ত্রাসীরা।
এতোদিন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ঠিকাদারদের কাছে চাঁদা আদায় করে আসলেও এবার স্বয়ং চাকমা রাজ পরিবারের অন্যতম একজন জনপ্রিয় সদস্যের কাছে চাঁদা দাবির পাশাপাশি শহরের মধ্যেই সিসি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নিজ বসতঘরে ঢুকে হুমকি দিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে স্থানীয়দের মাঝে।