আমি তখন সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী, বছরের শেষ ভাগে পথিকৃৎ কুমিল্লা ছেড়ে মতলব জেবি হাইস্কুলে ভর্তি হয়ে নিউ হোস্টেলে স্বাধীন জীবনযাপনের চেষ্টা করলেও আমার মরহুম পিতার শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক মরহুম ওয়ালি উল্লাহ্ পাটোয়ারী স্যারের জন্য সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
আমি প্রতিদিন স্যারের ব্যতিক্রম ব্যক্তিত্ব ও ভালোবাসার শাসনের কাছে শৃঙ্খলিত হতে থাকি। পড়ার টেবিলে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বসতে থাকি নিয়মিত। ১৯৭৫ সালের কথা বলছিলাম। কুমিল্লা ঈশ্বর পাঠশালায় ছাত্র ইউনিয়ন পরিচালিত “খেলা ঘরের আসরে” প্রতিবেশী শিরিন আপা নিয়ে যেতেন, আমার ভালোই লাগতো। মতলবে এসে খেলাঘরের আসরকে খুব মিস্ করতাম। মতলবে পেয়ে গেলাম “সূর্যমুখী কচিকাঁচার মেলা”।
একটি উপজেলায় ব্রতচারী নৃত্য, প্যারেড, পিটি, ড্রাম্বেল, বিতর্ক, আবৃত্তি, বক্তৃতা শেখানো হয়, ক্যাম্প করে তাবুতে থাকতে হয় তা ভাবতেই অবাক লাগে। রত্নগর্ভা মায়ের সন্তান,মরহুম ওয়ালি উল্লাহ্ পাটোয়ারী স্যারের অত্যন্ত প্রিয় ছাত্র মাকসুদুল হক বাবলু ভাইয়ের নিরলস চেষ্টা, শ্রম ও ভালোবাসায় গড়ে ওঠে মতলবের পথিকৃৎ ” সূর্যমুখী কচিকাঁচার মেলা”।
আমিও এখানে প্যারেড করার,আবৃত্তি শেখার, ক্যাম্পে থাকার চেষ্টায় থাকি। তাঁদের কর্মকাণ্ডের সাথে মিশে যাই অবলীলায়। অর্ধ শতাব্দীর অধিক সময় ধরে এ প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে মতলবের শিশুদের পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার পথ দেখাচ্ছে মাথা উঁচু করে সুনামের সাথে।
আজ শৈশবের প্রিয় সূর্যমুখী কচিকাঁচা মেলার ৫৭ বছর পূর্তিতে চার দিন ব্যাপী কর্মসূচির প্রথম দিনে আমাকে অতিথি হিসেবে ডাকা হয়। বাল্যকালের প্রিয় আঙ্গিনায় বর্তমান প্রজন্মের সতীর্থ শিশুদের সাথে একটি চমৎকার সময় কাটানোর সুযোগ করে দিয়েছেন মেলার বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ, সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিবাদন ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
লেখকঃ জাকির হোসেন কামাল অবসরপ্রাপ্ত একজন সচিব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০’র দশকে আগুনঝরা ফাগুন দিনে মরুভূমির ওয়েসিস ধারার মত জীবনবোধ সৃষ্টিকারী একজন সাহিত্য,সংগীত, সংস্কৃতিসেবী অতঃপর প্রমিথিয়াস ছাত্রনেতা হিসাবে জাকির হোসেন কামাল ছিলেন সুপরিচিত। একজন কবি ও লেখক হিসাবে তাঁর প্রকাশনাও আছে।
প্রশাসনে দেশপ্রেমিক, প্রতিবাদী এবং জাতীয়তাবাদী হওয়ায় ২০০৯ সাল থেকে বঞ্চনার শিকার হয়েছিলেন। জুলাই বিপ্লব ২০২৫ এর পর তিনি সচিব পদ লাভ করেন। বর্তমানে নিজভূমি মতলব এর একটি মননশীল, আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষা ও সৃজনশীল কর্মকান্ড নিয়ে একটি তিনি এক আনন্দভুবনের বাসিন্দা।
কিউএনবি/রাজ চাকমা/০৫.১১.২০২৫/রাত ১১.৩০