শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৩৯ পূর্বাহ্ন

যখন ও যাদের স্বপ্ন সত্য হয়

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৫৯ Time View

ডেস্ক নিউজ : মানুষ মাত্রই স্বপ্ন দেখে। মানুষ ঘুমের ভেতর যেসব স্বপ্ন দেখে তার কিছু সত্য হয়, আবার কিছু মিথ্যা। আবার কিছু মানুষের স্বপ্ন বেশি সত্য হয় এবং কিছু মানুষের স্বপ্ন বেশির ভাগই মিথ্যা হয়। প্রশ্ন হলো, কার স্বপ্ন বেশি সত্য হয় এবং কোন সময়ের স্বপ্ন সত্য হয়।

স্বপ্ন তাৎপর্যহীন নয়

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের স্বপ্ন তাৎপর্যহীন নয়, বরং মুমিনের স্বপ্ন বিশেষ গুরুত্ব রাখে। রাসুলুল্লাহ (সা.) সত্য স্বপ্নকে নবুয়তের অংশ বলেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কেবল মুবাশশিরাত (সুসংবাদ) ছাড়া নবুয়তের আর কিছু অবশিষ্ট নেই। সাহাবিরা প্রশ্ন করেন, মুবাশশিরাত কী? তিনি বলেন, ভালো স্বপ্ন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৯৯০)

অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, ‘মুমিনের স্বপ্ন ৪৬ ভাগের এক ভাগের সমান।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫০১৮)

সব স্বপ্ন সত্য নয়

ভালো স্বপ্ন যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে, তেমনই মন্দ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে। তবে স্বপ্নের ভালো-মন্দ নির্ধারণে জ্ঞানী ব্যক্তিদের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। নবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যদি এমন কোনো স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে, তাহলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। সুতরাং তার উচিত আল্লাহর প্রশংসা আদায় করা এবং অন্যদের স্বপ্ন সম্পর্কে বলা। কিন্তু সে যদি এমন স্বপ্ন দেখে যা সে অপছন্দ করে, তাহলে তা শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং তার উচিত এর ক্ষতি থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া এবং কাউকে এ স্বপ্ন সম্পর্কে না বলা। এরূপ করলে তার কোনো ক্ষতি হবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৯৮৫)

যাদের স্বপ্ন সত্য হয়

নবি-রসুলদের স্বপ্ন ছিল সন্দেহাতীতভাবে সত্য। তাদের স্বপ্ন ওহি। সহিহ বুখারির বর্ণনা মতে, নবিজি (সা.)-এর ওপর স্বপ্ন সত্যের মাধ্যমেই নবিজি (সা.)-এর ওপর ওহি নাজিলের সূচনা হয়। আর উম্মতের ভেতর তাদের স্বপ্নই বেশি সত্য হয়, যারা কথা ও কাজে অধিক সত্যবাদী। 

নবি করিম (সা.) বলেছেন, ‘সময় যখন কাছাকাছি হবে তখন মুসলিমের স্বপ্ন মিথ্যা হবে না এবং যে যত সত্যবাদী হবে তার স্বপ্নও তত সত্য হবে। স্বপ্ন তিন প্রকার : ক. উত্তম স্বপ্ন, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ, খ. ভীতিপ্রদ স্বপ্ন, যা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে, গ. যা মানুষ চিন্তা-ভাবনা ও ধারণা অনুপাতে দেখে থাকে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫০১৯)

যাদের স্বপ্ন সত্য হয় না

প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, স্বপ্ন সত্য হওয়া ও মিথ্যা হওয়ার বিবেচনায় মানুষ তিন শ্রেণির। তারা হলো—

১. নবী-রাসুল (আ.) : আম্বিয়ায়ে কিরামের সব স্বপ্ন সত্য। তাদের স্বপ্নের উদ্দেশ্যও তাদের কাছে স্পষ্ট। ফলে এর কোনো ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয়।

২. নেককার মানুষ : সৎ মানুষের বেশির ভাগ স্বপ্ন সত্য হয়। তাদের কিছু স্বপ্নের ব্যাখ্যার দরকার হয় এবং কিছু স্বপ্নের ব্যাখ্যা ছাড়াই তার উদ্দেশ্য বোঝা যায়।

৩. অন্যদের স্বপ্ন : নবী-রাসুল ও নেককার বান্দা ছাড়া অন্যদের স্বপ্নের সত্য ও মিথ্যার মিশ্রণ থাকে। তারা আবার তিন শ্রেণির : ক. যারা প্রকাশ্যে পাপ করে না, পাপ গোপন করে চলে। তাদের স্বপ্ন তাদের আমল অনুপাতে হয়ে থাকে; খ. যারা প্রকাশ্যে পাপ করে, তাদের স্বপ্ন বেশির ভাগ সময় মিথ্যা হয়, কখনো কখনো সত্য হয়; গ. যাদের ইমান নেই, তাদের স্বপ্ন সত্য হয় না বললেই চলে। (রুয়াল আম্বিয়া ওয়াস সালিহিন, পৃষ্ঠা-২৬)

যে সময়ের স্বপ্ন সত্য হয়

দিন ও রাতের যেকোনো সময়ের স্বপ্ন সত্য হতে পারে। কোনো সময়কে সত্য স্বপ্নের জন্য নির্ধারণ করা হয়নি। তবে রাতের স্বপ্ন দিনের স্বপ্নের তুলনায় অধিক শক্তিশালী। আল্লামা মুহাম্মদ ইবনে সিরিন (রহ.) বলেছেন, দিনের স্বপ্ন রাতের স্বপ্নের মতো হয়। ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে উভয়ের বিধান এক। পুরুষ ও নারীর স্বপ্নের মধ্যেও কোনো পার্থক্য নেই। (তাফসিরুল আহলাম মিন কালামি আইম্মাতিল আলাম, পৃষ্ঠা-৯৩)

তবু মহানবী (সা.) এমন কিছু সময় উল্লেখ করেছেন যে সময়ের স্বপ্ন অধিক সত্য হয়। যেমন—

১. যখন দিন-রাতের পরিধি সমান হয় : যখন দিন ও রাতের ব্যাপ্তি সময় বা কাছাকাছি হয়, তখন মুমিনের স্বপ্ন সত্য হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সময় যখন কাছাকাছি হবে তখন মুসলিমের স্বপ্ন মিথ্যা হবে না।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫০১৯)

ইমাম বাগাভি (রহ.) এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, বসন্ত ও শরৎকালের স্বপ্ন অধিক সত্য হয়। যখন গাছে ফল আসে ও তা পরিপক্ব হয়। কেননা তখন সময় নিকটবর্তী থাকে এবং দিন-রাতের পরিধি সমান থাকে। (তাজিলুস সুকয়া ফি তাবিরির রুয়া, পৃষ্ঠা-১৩)

২. শেষ রাতের স্বপ্ন : প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, রাতের শেষ অর্ধাংশের স্বপ্ন বেশি সত্য হয়। চাই তা ফজরের আগে হোক বা পরে। কেননা এ সময় মহান আল্লাহ পৃথিবীর আসমানে অবতরণ করেন এবং এটা ফেরেশতাদের ছড়িয়ে পড়ার সময়। আর প্রথম অর্ধাংশের স্বপ্ন বেশির ভাগ সময় মিথ্যা হয়। কেননা এটা শয়তানের বিচরণ করার সময়। (তাজিলুস সুকয়া ফি তাবিরির রুয়া, পৃষ্ঠা-১৩)

এ বিষয়ে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘শেষ রাতের স্বপ্ন অধিক সত্য হয়।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২২৭৪)

৩. কিয়ামতের পূর্ববর্তী সময় : কিয়ামতের পূর্বে মুমিনের স্বপ্ন অধিক পরিমাণে সত্য হবে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন কিয়ামতের সময় নিকটবর্তী হবে, তখন মুমিনের স্বপ্ন খুব কমই মিথ্যা হবে।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২২৭০)

এর কারণ ব্যাখ্যায় আল্লামা সিন্ধি (রহ.) বলেন, কিয়ামত হলো সেই সত্য প্রকাশকারী, যা সব সত্য প্রমাণ করবে। সুতরাং যে জিনিস তার যত বেশি নিকটবর্তী হবে তা তত বেশি বাস্তব হবে। (মুসনাদে আহমদ (টীকা) : ১৩/৮২) 

যে সময়ের স্বপ্ন দ্রুত প্রতিফলিত হয়

আল্লামা দিনওয়ারি (রহ.) বলেন, প্রথম রাতের স্বপ্ন বিলম্বে বাস্তবায়িত হয়। রাতের অন্য অংশের তুলনায় শেষ অর্ধাংশের স্বপ্ন দ্রুত প্রতিফলিত হয়। সবচেয়ে দ্রুত প্রতিফলিত হয় সাহরির (শেষ রাত) সময়ের স্বপ্ন, বিশেষ করে ফজর উদিত হওয়ার সময়। (ফাতহুল বারি : ১৬/৩৩৯)

স্বপ্নের ব্যাপারে মহানবী (সা.)-এর হুঁশিয়ারি

আবু রাজিন উকাইলি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, স্বপ্নের ব্যাপারে যে পর্যন্ত আলোচনা করা না হয় সে পর্যন্ত এটা পাখির পায়ে (ঝুলে) থাকা জিনিসের মতো। আলোচনা করার সঙ্গে সঙ্গে তা যেন পা থেকে পড়ে গেল। তাই স্বপ্ন দ্রষ্টা ব্যক্তি যেন জ্ঞানী ব্যক্তি অথবা পছন্দীয় ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো কাছে স্বপ্নের ব্যাপারে আলোচনা না করে। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২২৭৮)

আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।

কিউএনবি/অনিমা/০৯ জানুয়ারী ২০২৫,/রাত ৯:৫৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit