রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫১ পূর্বাহ্ন

ইসলামে মানুষের হক আদায়ের গুরুত্ব

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১৫ Time View

ডেস্ক নিউজ : শরিয়তের আমল প্রধানত দুই ধরনের। একটি হলো আল্লাহর হক, অন্যটি বান্দা বা মানুষের হক। এই দুই ধরনের আমলের মধ্যে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সা.) কর্তৃক যেগুলো আবশ্যক করা হয়েছে, সেগুলো ফরজ। আর যে কাজগুলো নিষেধ করা হয়েছে বা যেগুলো করলে পরকালে শাস্তির কথা ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো হারাম।

ইসলামের ফরজ ও হারাম বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অল্প কিছু আমল শুধু আল্লাহর হক। আর বাকি বেশির ভাগ বিষয় মানুষের হক বা মানুষের সঙ্গে জড়িত। নিম্নে বিশ্লেষণ করা হলো-

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যকার কাজগুলো বিশেষত আল্লাহর হক সম্পর্কিত। কিন্তু জাকাত আদায় করাটা বান্দার সঙ্গেও সরাসরি সম্পর্কিত। এগুলো ছাড়া অন্য সব শ্রেষ্ঠ বা নিকৃষ্ট আমলের সঙ্গে মানুষের হক বা মানুষের সঙ্গে সদাচরণ ও অসদাচরণের সম্পৃক্ততা আছে।

ইসলাম মানুষের অধিকার রক্ষার বিশেষ তাগিদ দেয়। রাসুল (সা.) বিভিন্ন হাদিসে সর্বোত্তম মানুষ বা সর্বোত্তম মুসলিমের পরিচয় তুলে ধরেছেন। আর এগুলোর বেশির ভাগই মানবাধিকার বা মানবকল্যাণ সংশ্লিষ্ট।

ক. উত্তম চরিত্র : আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, ‘তোমাদের মধ্যে যার স্বভাব-চরিত্র উত্তম, সেই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৩৫)।

খ. অন্য মুসলমানের নিরাপত্তা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমরা নিরাপদ থাকে সে ব্যক্তিই প্রকৃত মুসলিম। আর যাকে মানুষ তাদের জান ও মালের জন্য নিরাপদ মনে করে সে-ই প্রকৃত মুমিন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬২৭)।

গ. ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো ও সালামের প্রসার : আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করল, ইসলামে সর্বোত্তম কাজ কী? তিনি বলেন, ‘(ক্ষুধার্তকে) অন্নদান করবে এবং পরিচিত-অপরিচিত-নির্বিশেষে সবাইকে (ব্যাপকভাবে) সালাম দেবে।’ (রিয়াদুস সালেহিন, হাদিস : ৮৪৯)। অর্থাৎ মানুষের সঙ্গে সদাচার সর্বোত্তম মুসলিম হওয়ার উপায়।

ঘ. ধ্বংসকারী সাত গুনাহ : রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি হাদিসে ধ্বংসকারী সাতটি হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকতে বলেছেন। যার মধ্যে বেশির ভাগই মানুষের হক জড়িত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ধ্বংসকারী সাতটি কাজ থেকে তোমরা বেঁচে থেকো। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! সেগুলো কী? তিনি বলেন, আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, জাদু করা, আল্লাহ যাকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করা, এতিমের মাল অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করা, সুদ খাওয়া,  যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা এবং সাধ্বী, সরলমনা ও ঈমানদার নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করা। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৬৩)।

ঙ. আত্মীয় ও প্রতিবেশীর হক : ইসলাম রক্তের সম্পর্ক রক্ষার প্রতি সর্বোচ্চ নির্দেশনা দিয়েছে। পাশাপাশি এতিম, মিসকিন, প্রতিবেশী, পথচারী, দাস-দাসী সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার আবশ্যক করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রক্ত সম্পর্কে মূল হলো রাহমান। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যে তোমার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখবে, আমি তার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখব। আর যে তোমা হতে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আমিও সে লোক হতে সম্পর্ক ছিন্ন করব।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৮৮)।

চ. মা-বাবার হক আদায় করা : আল্লাহ তাআলা মা-বাবার হক আদায় করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করো। আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকিন, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গে বসা (বা দাঁড়ানো) ব্যক্তি, পথচারী এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও (সদ্ব্যবহার করো)।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৬)।

ছ. এতিম, বিধবা ও মিসকিনদের প্রতি সদয় : জান্নাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সবচেয়ে কাছাকাছি থাকার উপায় হলো, এতিমের দেখাশোনা করা। সাহল ইবনু সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, আমি ও এতিমের দেখাশোনাকারী জান্নাতে এভাবে (একত্রে) থাকব। এ কথা বলার সময় তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলদ্বয় মিলিয়ে ইঙ্গিত করে দেখালেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০০৫)।

কোনো মানুষের প্রতি জুলুম করাকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। এ ছাড়া মিথ্যা বলা, চুরি করা, গিবত করা, অপবাদ দেওয়া, ঘুষ খাওয়া, হিংসা করা ইত্যাদি মানুষের হকসংশ্লিষ্ট কবিরা গুনাহ। তাই প্রকৃত মুসলিম হওয়ার জন্য আল্লাহর হক আদায়ের পাশাপাশি মানুষের হক রক্ষায়ও সচেষ্ট থাকতে হবে।

কিউএনবি/অনিমা/১৯ অক্টোবর ২০২৫,/সকাল ৮:০৭

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit