إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ যারা চায় মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রচার ঘটুক, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি (সুরা নুর:১৯)
এই আয়াতটি নাজিল হয়েছিল আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. এর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ঘটনার পর। তখন কিছু মুনাফিক মুসলমানদের মধ্যে অপবাদ ছড়িয়ে দিয়েছিল, আর আল্লাহ তাআলা তাতে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন যে, এই কাজ মুমিনের কাজ নয় বরং এটি ঈমানের বিপরীত।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ! অধিক সন্দেহ থেকে বিরত থাকো। কারণ কিছু সন্দেহ গুনাহ। পরস্পরের গোপন দোষ অনুসন্ধান করো না এবং কেউ কারও পশ্চাতে নিন্দা করো না।(সুরা হুজুরাত:১২) এই আয়াতে মিথ্যা সন্দেহ, গিবত ও তোহমত,তিনটি ধ্বংসাত্মক সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে সতর্ক করা হয়েছে।
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَن بَهَتَ مُسْلِمًا أَوْ مُسْلِمَةً أَوْ قَالَ فِيهِ مَا لَيْسَ فِيهِ أَقَامَهُ اللَّهُ عَلَى رَدْغَةِ الْخَبَالِ حَتَّى يَخْرُجَ مِمَّا قَالَ যে কোনো মুসলিম পুরুষ বা নারীর বিরুদ্ধে এমন কথা বলে যা তার মধ্যে নেই, আল্লাহ তাআলা তাকে রদঘাতুল খাবাল’-এর (জাহান্নামের পুঁজের) স্থানে দাঁড় করাবেন যতক্ষণ না সে নিজের কথার জন্য শাস্তি ভোগ করে। (সুনানু আবি দাউদ:৩৫৮৩) এ হাদিসটি প্রমাণ করে যে, মিথ্যা অপবাদ শুধু দুনিয়ায় নয়, আখিরাতেও ভয়াবহ শাস্তির কারণ হবে।
মিথ্যা আপবাদ সামাজিক বিপর্যয়
একটি মিথ্যা তোহমত মানুষের ইজ্জত, পরিবার, এমনকি পুরো সমাজের বিশ্বাস ভেঙে দিতে পারে। যে সমাজে মানুষ পরস্পরের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, সেখানে শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের স্থলে জন্ম নেয় ঘৃণা, সন্দেহ ও বিভাজন।
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ، لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يَخْذُلُهُ وَلَا يَحْقِرُهُ মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার প্রতি অন্যায় করে না, তাকে অপমান করে না, এবং তাকে অবজ্ঞা করে না। (সহিহ মুসলিম:২৫৬৪) মিথ্যা তোহমত এই ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিকেই ধ্বংস করে দেয়।
ঈমানের ওপর প্রভাব
যে ব্যক্তি মিথ্যা তোহমত দেয়, সে আসলে নিজের ঈমানের মর্যাদা নষ্ট করে ফেলে। কারণ সত্যবাদিতা হলো ঈমানের মূল বৈশিষ্ট্য, আর মিথ্যা ও অপবাদ হলো নিফাক বা কপটতার বৈশিষ্ট্য।
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ: إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ মুনাফিকের তিনটি চিহ্ন আছে, যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, প্রতিশ্রুতি দিলে ভঙ্গ করে, আর আমানত পেলে খিয়ানত করে। (সহিহ বুখারি,: ৩৩; সহিহ মুসলিম:৫৯)
পরিত্রাণের পথ
মিথ্যা তোহমতের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে হলে ১. জিহ্বাকে সংযত রাখা, ২. যাচাই ছাড়া কিছু না বলা, ৩. অন্যের ইজ্জতকে নিজের মতো সম্মান করা, ৪.আল্লাহর ভয় হৃদয়ে জাগ্রত রাখা, ৫. গিবত, সন্দেহ ও অপবাদ থেকে তাওবা করা,এই পাঁচটি গুণকে ধারণ করা জরুরি।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ মানুষের মুখ থেকে যে কোনো কথা উচ্চারিত হয়, তার পাশে রয়েছে একজন প্রস্তুত রক্ষক (ফেরেশতা), যিনি তা লিখে রাখেন। (সুরা কাফ:১৮)
মিথ্যা তোহমত এমন এক বিষ, যা সমাজের আস্থা ও ঈমানের শিকড়কে পুড়িয়ে দেয়। একজন সত্যনিষ্ঠ মুমিন কখনোই কাউকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পারে না, কারণ সে জানে, যে অন্যের ইজ্জত নষ্ট করে, সে নিজের ঈমান ধ্বংস করে।
আমরা আমাদের মুখ ও মনকে পবিত্র রাখি, সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকি, হে আল্লাহ! আমাদের জিহ্বাকে সত্যনিষ্ঠ করো, হৃদয়কে পবিত্র করো এবং আমলগুলোকে তোমার সন্তুষ্টির জন্যে খাঁটি করো।