রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২৭ পূর্বাহ্ন

রুপা মোজাম্মেল এর জীবনালেখ্যঃ বাতাসা

রুপা মোজাম্মেল। কানাডা।
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০২২
  • ১৩৪৪ Time View

 বাতাসা
———

ছোটবেলার বেশিরভাগ সুন্দর, দুরন্ত বা দস্যিপনার স্মৃতিগুলো সব আমার নানাবাড়ি নিয়ে। যেখানে নির্দ্বিধায় হাস বা মুরগির বাচ্চাগুলোকে পানিতে চুবিয়ে আদর করতে পারতাম! অসাধারণ সুন্দর একটা নানাবাড়ি ছিল আমার।

আম্মার মুখে শুনেছি, নানার পূর্বপুরুষরা নাকি পারস্য থেকে আসা। উনারা ইসলাম প্রচারের জন্য দেশবিদেশ ঘুরতেন। অবশেষে যেখানে এসে স্থায়ী হলেন, উনাদের নামানুসারে ঐ জায়গার নাম করণ করা হয় “পাঠানটোলা” কারণ উনারা পাঠান ছিলেন। উনাদের যে লিডার ছিলেন উনি মারা যাওয়ার পর সেখানে একটা মাজার স্থাপন করা হয়।

বংশ পরম্পরা ভাবে জেনেছি ওটা আমার নানাবাড়িরই মাজার।

যদিও নানাকে বেশিদিন পাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি, কিন্তু যত টুকু মনে আছে নানা উর্দু, পাশতু, ফারসি লিখতে ও পড়তে পারতেন। উনার ঘরে অনেক বই রাখা ছিল। বই খুলে খুলে দেখতাম, কিন্তু বুঝতাম না কিছুই।

আগেই বলেছি মাজারের কথা, নানার অনেক মুরিদ ছিল। প্রতি বছর শিরনী হতো অনেক বড় মেলার মত আয়োজনে।

 

‘পাঠানটোলা’ মাযার।

অনেক ভক্তরা ছিল মাজারের, যারা মানতকরে অনেক কিছু দিয়ে যেতো। যেমন সন্দেশ, বাতাসা, বিস্কুট, ফুল ফল আবার টাকাও।

আমার এক চাচাতো নানা ঐ মাজারের তদারকি করতেন। নানা এতো কিপটা ছিলেন যে আমাদের কখনোই বাতাসা খেতে দিতেন না। আর আমার লোভী মন পরে থাকতো ঐ বাতাসার কাছে।
মনে মনে সারাক্ষণ ফন্দি করতে থাকতাম কিভাবে ঐ বাতাসা পর্যন্ত পৌঁছানো যায়, আর কি ভাবে এর মালিক হওয়া যায়!

এলাকাটাতে হিন্দু সম্প্রদায় বেশি থাকায় মাজারের বেশির ভাগ ভক্ত ছিলেন হিন্দু। আর ভক্তরা যখন জানতে পারতেন আমরা মাজারের সাথে related, খুব স্নেহ আর ভক্তি করতেন।

বয়স তখন ১০/১১, দুপুরের ঘুম চুরি করে মাজারের সামনে গিয়ে দোয়া করতে থাকতাম “আল্লাহ্ কাউকে পাঠাও অনেক বাতাসা দিয়ে” কারণ মামা এখন ঘুমাচ্ছেন। আমি হতে পারবো সব বাতাসার মালিক

মাঝে মাঝে দোয়া কবুলও হয়ে যেতো! যখনই দেখতাম কেউ আসছেন মান্নতের জন্য, পিছনের দরজা দিয়ে এক দৌড়ে চলে যেতাম ভেতরে, আর এমন ভাব দেখাতাম যেনো এই সময়টার জন্য আমিই ইনচার্জ এ আছি

ভক্তের হাত থেকে বাতাসা নিয়ে, তাতে সূরা ফাতেহা পড়ে ফু ফু ফু করে দিয়ে আগরবাতি জ্বালিয়ে দিতাম। ভক্তরা মুগ্ধ হয়ে যেতো, “আহা এত ছোট বয়সেও কি দারুন শিক্ষা, হাজার হলেও পীরের বংশধর” যাওয়ার সময় মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করে যেতো।

একবার যদি বাতাসায় হাত লেগে যেত, আগামী কয়েকদিন মাজারের ধারে কাছেও যেতাম না। যদি মামা জেনে যায়, একদম তালা পরে যাবে পিছনের দরজায়! আর এটা কিছুতেই হতে দেয়া যাবে না।

সবার চোখ ফাঁকি দিতে পারলেও আম্মার চোখে একবার পরেই গেলাম বাতাসা নিয়ে বের হওয়ার সময় দেখি পিছনের দরজায় আম্মা দাড়ানো! একদম জ্বীন ভূত দেখার মত চমকে গেলাম! তার পর আর কি! আমার বেচারা কান আর পিঠের উপর দিয়ে চোটপাট গেলো। মনে পড়লে এখনও ব্যাথা করে।

লেখিকাঃ রুপা মোজাম্মেল। কানাডা প্রবাসী। দেশে লেখাপড়া শেষ করে কানাডায় বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কোর্স শেষ করেছেন। সেখানেই তাঁর কর্ম জীবন। লেখালেখি করেন নিয়মিত। জীবনের খন্ডচিত্র আঁকতে পারদর্শিনী রুপা মোজাম্মেল।

কিউএনবি/বিপুল/২০.০৬.২০২২/রাত ১১.৪৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit