সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১৫ অপরাহ্ন

জুলুমের সমাপ্তিই ইনসাফের পথ তৈরি করে

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫
  • ৪৫ Time View

ডেস্ক নিউজ : পৃথিবীতে একের পর এক পরস্পরবিরোধী শক্তির শাসন চলে আসছে। রাতের পর দিন হয়, আঁধারের পর আসে আলো। অমাবস্যার ঘোর অমানিশার পরে পূর্ণিমা যথা নিয়মেই আত্মপ্রকাশ করে। পৃথিবীর ইতিহাসে দেশ ও সরকারের ক্ষেত্রেও এ নীতির ব্যতিক্রম হয়নি। যখনই কোনো জালেম সরকারের পতন হয়েছে, এক ন্যায়পরায়ণ সরকার তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। অত্যাচারের অবসান মানেই ইনসাফের আবির্ভাব। রাতের বিদায় মানেই দিনের উদয়। অত্যাচারী জাতির শক্তি যখন লোপ পায়, তখনই এক ন্যায়পরায়ণতার শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। কালের সাক্ষী হয়ে আছে ফেরাউনের স্বৈরশাসন। তার অত্যাচারমূলক শাসনের অবসান এক ন্যায়পরায়ণ সরকারের আবির্ভাবের পূর্বাভাস ছিল। তাই ফেরাউনের অনিবার্য ধ্বংসের সংবাদের সঙ্গে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠার সুসংবাদও এসেছে পবিত্র কোরআনে। ফেরাউন কর্তৃক পৃথিবীতে ঔদ্ধত্য প্রকাশ, তার অধিবাসীদের পৃথক-পৃথক দলে বিভক্তকরণ ও তাদের এক শ্রেণিবিশেষকে অত্যন্ত দুর্বল করে রাখা ইত্যাদির ফলে কোরআনের ভাষায় সে পৃথিবীতে ‘অনর্থ সৃষ্টিকারী’ খেতাবে ভূষিত হয়েছে। আর যাদের সে দুর্বল করে রেখেছিল, আল্লাহতায়ালা তাঁদের প্রতি অনুগ্রহ করলেন, পৃথিবীর নেতৃত্ব তাঁদের হাতে এলো। সে দেশের ভূমি ও সম্পদের উত্তরাধিকারী তাদেরই বানানো হলো (সুরা কাসাস : ৪-৫)।

ফলে তারাই হলেন বড় বড় তখ্ত ও তাজের মালিক। তাদের রাজত্বই প্রতিষ্ঠিত হলো। একসময় ফেরাউন ও হামানরা যেসব ব্যাপারে ঠকিয়ে তাদের দুর্বল করে রাখত, পরে সেসব অবস্থা তাদের ভাগ্যেই দেখা দিল। এ ছিল ফেরাউনের রাজত্বে বিপ্লব সৃষ্টির কাহিনি। কিন্তু ভেবে দেখুন, এ ঘটনার নিমিত্তে কোরআন কী এক চিরন্তন খোদায়ী বিধানের সংবাদ বয়ে এনেছে। পবিত্র কোরআন বলছে, পৃথিবীটা যেন জাঁকজমক ও শক্তি প্রতিপত্তি দেখানোর কেন্দ্রস্থল। সেই সঙ্গে দুর্বলদের নিধনের যজ্ঞশালা। শক্তিশালী জাতিগুলো দুর্বল জাতিগুলোকে দাস বানিয়ে রাখে, তাদের ভিতর বিভেদ সৃষ্টি করে তাদের বিভিন্ন দল ও শ্রেণিতে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হতে দেয় না। কারণ তারা সংহত হয়ে গেলে আর দুর্বল থাকবে না। ঐক্যবদ্ধ শক্তি নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলবে এবং জালিমের তখ্ত উল্টে ফেলবে। এ নজিরই প্রতিষ্ঠা করেছিল মিসরের বনি ইসরাইলরা।

আবার এমনও হয়, যখন অত্যাচার ও অহংকার সীমা ছাড়িয়ে যায়। তখন পৃথিবীটা শক্তিশালীদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে দুর্বলদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তখন যে মাটিতে দুর্বলের বলিদান করা হতো, সেখানে সবলদের নিধনযজ্ঞ গড়ে তোলা হয়। সেদিন ছোটকে বড় এবং বড়কে ছোট করে দেওয়া হয়। যারা দুর্বল, অসহায়, যারা শুধু কান্না, হাহাকার, মাতম তোলা ও গড়াগড়ি যাওয়ার লোক, তখন তাদের ওপরই আল্লাহর অনুগ্রহ বর্ষিত হয়। শক্তিবানদের দুর্বল করা হয়, সামর্থ্যবানদের করা হয় অসহায়। আনন্দ-উল্লাসকারীরা কান্নাকাটি করে, বিলাসীরা হয় মাতমকারী। আর লুণ্ঠকদের লুণ্ঠিত সামগ্রী সাজিয়ে গোটা পৃথিবীকে দেখানো হয়। পবিত্র কোরআনে এ কথাই বলা হয়েছে, ‘বলুন, হে আল্লাহ! সার্বভৌম শক্তির মালিক! আপনি যাকে চান ক্ষমতা দান করেন, আর যার থেকে চান ক্ষমতা কেড়ে নেন। যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন এবং যাকে চান লাঞ্ছিত করেন। সমস্ত কল্যাণ আপনারই হাতে। নিশ্চয়ই আপনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান (সুরা আলে ইমরান-২৬)। আল্লাহ কাউকে রাজত্ব দিয়ে সম্মানিত করেন। আবার কাউকে করেন পরীক্ষা। যারা ন্যায় ইনসাফের সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনা করে ক্ষমতা তাদের জন্য সম্মানের। আর যারা ক্ষমতাকে নিজের অর্জন মনে করে ইচ্ছাধীন অপপ্রয়োগ করে, ইতিহাস তাদের জন্য মহা সত্যের পরম শিক্ষা।

এমনটা মনে করার সুযোগ নেই, এই গদি আমার অধিকার। যখনই কোনো সরকার দমনপীড়নে বেপরোয়া হয়ে উঠবে, শাসনের নামে শোষণ শুরু করবে, প্রজাদের নৈতিক অধিকার হরণ করে তাদের তার হুকুমের দাস বানিয়ে রাখবে, তার পতন সুনিশ্চিত। আজ হোক কাল হোক, সে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ হয়ে ক্ষমতার গদি ছেড়ে পালিয়ে জীবন বাঁচাতে বাধ্য হবে।

কোরআনের শিক্ষা মনে রাখবেন, ফেরাউন ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায়নি। কেয়ামত পর্যন্ত আগত শাসকদের জুলুমের ভয়াবহ পরিণতির কথা সে মনে করিয়ে দেয় এবং তার মতো না হওয়ার অনুরোধ জানায়। এটা এমনই এক মহাসত্য বিষয়, যার মৃত্যু নেই।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, ফেরাউনের এই উপদেশ কেউ গ্রহণ করে না। রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার পর সব শাসকই এ সত্যটা ভুলে যায়। ফলে তাদের পতনও হয় একই কারণে।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

কিউএনবি/অনিমা/১৭ জুলাই ২০২৫,/সন্ধ্যা ৭:২৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit