সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন

তারেক রহমানের বক্তব্য সম্প্রচার করায় কারাগারে যেতে হয় ইটিভি চেয়ারম্যানকে

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৬ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৪৬ Time View

ডেস্ক নিউজ : জনমুখী সাংবাদিকতা ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের কারণে বারবার শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে একুশে টেলিভিশন। দেশের গণমাধ্যমের ইতিহাসে কলঙ্কজনক একটি দিন ৬ জানুয়ারী। গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার স্বপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য সম্প্রচারের কারনে এ দিন কারাবন্দী করা হয় একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান আব্দুস সালামকে। দখল করা হয় একুশে টেলিভিশনও। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার এই ঘটনাকেই দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরে দেশের অন্যান্য গণমাধ্যমকেও রাখে নিজের কব্জায়। এমনটাই বলছেন গণমাধ্যম ও মানবাধিকারকর্মীরা।

২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারী। ঘড়ির কাটায় ভোররাত ৩টা ২৭ মিনিট। দাপ্তরিক কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান ও সিইও আব্দুস সালামের গাড়ির পথরোধ করা হয়। কালো জ্যাকেট ও মুখে মাস্ক পরা অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের একটি দল ঘিরে ধরে গাড়ির চারদিক।

কিছুক্ষণ বাকবিতন্ডা। তারপর হাত ধরে টানাহেঁচড়া। একুশের কর্ণধারকে গাড়ি থেকে বের করতে ব্যর্থ হয় দলটি।

এক সময় তাদেরই কয়েকজন জোর করে উঠে বসে গাড়িতে। ফিল্মি স্টাইলে অপহরণ করে নিয়ে যায় একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান ও সিইও আব্দুস সালামকে।

রাত পেরিয়ে সকাল হলেও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছিলো না তাকে আটক করা হয়েছে কি-না। একুশের সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে ব্যর্থ হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরী করেন তেজগাঁও থানায়।

উদ্দেশ্য ছিল আব্দুস সালামকে গুম করার। কিন্তু সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত অপহরণের সেই দৃশ্য একুশে টেলিভিশনসহ বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে প্রচার এবং প্রকাশ হলে তাদের সে অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়। অবশেষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এই গ্রেফতার প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন ডিবির তৎকালীন এসি মাহফুজুল ইসলাম, এডিসি নুরুন নবী ও এডিসি মেহেদী হাসান।

পরে মাহফুজুল ইসলাম কক্সবাজার জেলা পুলিশের এসপি পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াবা বদির মাদক ব্যবসার সহযোগী ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

খন্দকার নুরুন্নবী ফেনীর এসপি থাকাকালে তার বিরুদ্ধে ছিল নানা অভিযোগ। সে শেখ হাসিনার লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করে। এরপর সে ডিবির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগ দেয়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও গুলিতে নুরুন্নবী এবং মেহেদী মাস্টারমাইন্ড ডিবি প্রধান হারুনের নেতৃত্বে কাজ করে। ডিবি প্রধান হারুনের সহযোগী হয়ে ৬ সমন্বয়ককে আটক করে।

৫ আগষ্টের পর থেকে এই হারুনসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা পলাতক আছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ইশারায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের নির্দেশে আটক করা হয় আব্দুস সালামকে। আর এসবে ইন্ধন দেয় একাত্তর টিভির মোজাম্মেল বাবু, যিনি পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন দেশের মিডিয়া নিয়ন্ত্রক। ওই তিন পুলিশ কর্মকর্তা মোজাম্মেল বাবুর ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত।

গ্রেফতার দেখানোর পর, বেশ কয়েকটি মিথ্যা মামলায় প্রায় আড়াই বছর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে রাখা হয় দেশের এই গণমাধ্যমযোদ্ধাকে।

সাধারন মানুষের অধিকার আদায়ের প্লাটফর্ম হিসেবে একুশে টেলিভিশন ছিলো দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। অথচ মুক্ত মনের সেই খোলা জানালা একুশে দখল করা হয় ২০১৫ সালের ২৫ নভেম্বর। টেলিভিশন জগতের অনুসরনীয় এই কর্ণধারকে আটক করে শুধু একুশকেই পঙ্গু করা হয়নি। এ ঘটনাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে রেখে চোখ রাঙানীতে রাখা হয় অন্যান্য গণমাধ্যমকেও।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের মধ্য দিয়ে মানবাধিকার পরিস্থিতিরও চরম অবনতি হয়।

৫ আগষ্ট গণ অভ্যুত্থানের পর একুশে আবারো ফিরে পায় অধিকার। ফিরে আসেন আবদুস সালাম। বাক স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র চর্চায় একুশে আবারো পথ প্রদর্শক হিসেবে অগ্রনী ভুমিকা রাখবে বলে আশা গনমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মীদের।

কিউএনবি/অনিমা/০৬ জানুয়ারী ২০২৫,/রাত ৯:৪৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit