শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:০৬ অপরাহ্ন

ইসলামের দৃষ্টিতে বন্ধু নির্বাচন

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩
  • ১৩৫ Time View

ডেস্ক নিউজ : প্রতিটি মানুষেরই জীবন চলার পথে বন্ধু প্রয়োজন। সামাজিক সম্পর্ক তৈরিতে বন্ধুর ভূমিকা অপরিসীম। বন্ধুত্ব আমাদের একাকিত্ব জীবন থেকে উদ্ধার করে এবং আনন্দে পরিপূর্ণ করে তোলে। মানুষের জীবনে সে-ই প্রকৃত বন্ধু যে তার আপদে-বিপদে হাত বাড়ায়, ভুলত্রুটি সংশোধন করে দেয় এবং যে কোনো সংকটে পাশে থাকে। একজন চরিত্রবান ও ধর্মীয় বিশ্বাসে অনুরক্ত এ রকম বন্ধু একজন মুমিন বান্দার জন্য আল্লাহর নেয়ামত। তার সঙ্গেই বন্ধুত্ব হওয়া উচিত যে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে। যে সব সময় সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। তার থাকতে হবে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস। 

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, এরা ন্যায় কাজের আদেশ দেয়, অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকে। তারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত আদায় করে এবং সব কাজে আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে অনুসরণ করে।’ (সুরা তওবা, আয়াত ৭১)। 

ইমানদার ব্যক্তিরা কখনো ইমানদারদের বদলে কাফেরদের নিজেদের বন্ধু বানাবে না, যদি তোমাদের কেউ তা করে তবে আল্লাহর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কই থাকবে না। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ২৮)। 

সুতরাং বন্ধু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আমাদের যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। একজন অযোগ্য ও মন্দ বন্ধু থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। যার মধ্যে নীতিনৈতিকতা বলতে কিছু নেই, যে বন্ধু সেজে অযথা কুৎসা রটনা করে, কান কথা লাগায়, গিবত করে সে রকম ব্যক্তি কখনোই আপনার-আমার ভালো বন্ধু হতে পারে না। এদের কাছ থেকে দূরে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। এরা কখনোই আপনার কল্যাণ চায় না।

বন্ধুত্বের একটা গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো- সততা রক্ষা করা। বন্ধুকে সম্মান করাও বন্ধুত্বের নীতিমালার একটি বৈশিষ্ট্য। কিন্তু আমরা তা কজনই বুঝি। প্রযুক্তির কল্যাণে আজকাল মোবাইল ফোনে বন্ধুদের বিভিন্ন গ্রুপ বিদ্যমান। এসব গ্রুপের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আজেবাজে পোস্ট, নোংরামি আর অশ্লীল কথাবার্তা বিনিময় করে, যা কাম্য নয়। পাশাপাশি আবার ইসলামী মূল্যবোধের আলোকেও অনেক গ্রুপ আছে যা থেকে আমাদের ইসলামী জীবনধারায় জীবন গড়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। 

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ তোমরা যারা ইমান এনেছ তোমরা ইমানদারদের বাদ দিয়ে কাফেরদের নিজেদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না।’ (সুরা নিসা, আয়াত ১৪৪)।

মানুষ তার বন্ধুর দ্বারাই ভালো ও মন্দ কাজে প্রভাবিত হয়। তাই একজন মুমিন বান্দার জন্য সৎ ও ধার্মিক বন্ধুর সঙ্গ গ্রহণ করা উচিত। কারণ পৃথিবীতে খারাপ চরিত্রের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখলে পরকালে লজ্জা ও অনুশোচনার শেষ থাকবে না। আমরা যদি একজন আতর বিক্রেতার সঙ্গে ওঠাবসা করি তাহলে সবসময় তার কাছ থেকে সুঘ্রাণ পাব, আবার যদি একজন কর্মকারের সঙ্গে ওঠাবসা করি তাহলে যে কোনো সময় তার কাছ থেকে বিপদের আশঙ্কা (পুড়ে যাওয়ার ভয়) থাকবে। কোনো ভালো মানুষ যদি একজন অসৎ কর্মের ব্যক্তির সঙ্গে চলাফেরা করে কিংবা বন্ধুত্ব রাখে তাহলে তাকে কেয়ামতের ময়দানে পাপীদের কাতারে দাঁড়াতে হবে। আবুজর আল গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত, একাকী থাকার চেয়ে সৎ সঙ্গীর সঙ্গে থাকা উত্তম। তবে অসৎ সঙ্গীর চেয়ে একাকী থাকা উত্তম। 

আল্লাহ রব্বুল আলামিন কোরআনে বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমার, আমি যদি অমুক লোকটিকে আমার বন্ধু না বানাতাম।’ (সুরা আল ফোরকান, আয়াত ২৮)। 

এ আয়াত থেকে এটাই জানা গেল, যারা আল্লাহর অবাধ্য, কোরআন ও হাদিসের আলোকে জীবন গড়ার ক্ষেত্রে শৈথিল্য প্রদর্শন করছে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখা ঠিক নয়। কারণ বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে পথভ্রষ্ট হওয়ার একমাত্র কারণ হলো অসৎ ও খারাপ বন্ধুদের সঙ্গে চলাফেরা করা বা সম্পর্ক রাখা। খারাপ বন্ধু আপনার-আমার জীবনকে ভুল পথে পরিচালিত করে। জীবন চলার পথে আপনি ভালো ও খারাপ বন্ধু সহজেই চিনতে পারবেন। 

যার সঙ্গে চলাফেরা করলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার মধ্যে ভালো গুণগুলো প্রভাবিত হচ্ছে তাহলে মনে করতে হবে তিনি আপনার ভালো বন্ধু আর যার আচরণে বা প্রভাবে আপনার মধ্যে খারাপ আচরণগুলো প্রভাবিত হতে থাকে, তাহলে দ্রুত আপনি তাকে পরিত্যাগ করুন। জীবন চলার পথে ভালো বন্ধুর সাহচর্য জরুরি। ২০ জন খারাপ বন্ধু থাকার চেয়ে একজন ভালো বন্ধু থাকা অনেক উত্তম। তাই বন্ধু নির্বাচনে আমরা সতর্ক হই। 

আমাদের বন্ধু নির্বাচন করতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। এ দুনিয়ায় যারা চরিত্রবান, খোদাভীরু, দয়াবান, দেখা বা আলাপ হলে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, কথায় কথায় যারা আপনার দোষ খুঁজে বেড়ায় না, গিবত করে না, নোংরা আচরণ করে না, বরং আপনার দোষ-ত্রুটি সংশোধন করে দেয় তারাই আপনার জীবনে ভালো বন্ধু। তাদের সঙ্গেই আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধন অটুট থাকে সারাটা জীবন। 

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা কখনো ইহুদি খ্রিস্টানদের নিজেদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। কেননা এরা নিজেরা সব সময়ই একে অপরের বন্ধু।’ তোমাদের মধ্যে কেউ যদি এদের বন্ধু বানিয়ে নেয় তাহলে সে অবশ্যই তাদের দলভুক্ত হয়ে যাবে। আর আল্লাহতায়ালা কখনোই জালেম সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত ৫১)। 

সুতরাং আমাদের জীবনে বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আল্লাহর বাণী মেনে জীবনে বন্ধু নির্বাচন করলে তাহলেই আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারব। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

কিউএনবি/অনিমা/২৫ নভেম্বর ২০২৩,/দুপুর ২:১৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit