সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন

হিজাবের জন্য তুর্কি নারীর লড়াই

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১১০ Time View

ডেস্ক নিউজ : একবিংশ শতাব্দীর প্রভাবশালী নারী রাজনীতিকদের অন্যতম তুরস্কের মারভে সাফা কাভাকি। তুরস্কের প্রথম হিজাবি নারী সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি বিশ্বে পরিচিত। তবে হিজাব পরার কারণে তাঁকে নানা ধরনের নিপীড়নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। ১৯৬৮ সালের ১৯ আগস্ট আংকারায় জন্ম নেন সাহসী এই নারী। তাঁর বাবা হলেন ইমাম ইউসুফ জিয়া কাভাকি। মা-বাবা উভয়ে ছিলেন আতাতুর্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তুরস্কে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে পড়াশোনা করেন।

রাজনৈতিক জীবন : তুরস্কে ফিরে মারভে রাজনৈতিক দলে কাজ শুরু করেন। এ সময় বাবার মতো তিনিও পবিত্র কোরআন হিফজ করেন। পরবর্তী সময়ে নাজমুদ্দিন এরবাকানের নেতৃত্বাধীন ফজিলত দলে কর্মী হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু রাজনৈতিক জীবনে হিজাব পরাসহ প্রচণ্ড ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলায় তাঁর পরিবারের ওপর নেমে আসে নির্যাতন ও নিপীড়ন। এসব সত্ত্বেও সামাজিক ও রাজনৈতিক বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে প্রথম হিজাবি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯৯ সালের ২ মে তুরস্কের সংসদে শতাব্দীর স্মরণীয় ঘটনার জন্ম দেন তিনি।

ভার্চু পার্টি থেকে তিনি নির্বাচিত হলেও হিজাব পরার অজুহাতে অন্য সংসদ সদস্যরা তাঁর শপথ গ্রহণে আপত্তি জানান। হিজাবের কারণে তিনি রাষ্ট্রের অন্যায় আচরণেরও মুখোমুখি হন। তুরস্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেমোক্রেটিক লেফট পার্টির প্রধান মোস্তাফা বুলেনত ইসেভিটের নেতৃত্বে কথিত ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে তাঁকে সংসদ ত্যাগে বাধ্য করা হয়। ২০০১ সালের মার্চে তিনি নিজ আসন হারান। এমনকি তাঁর তুর্কি নাগরিকত্বও কেড়ে নেওয়া হয়। জুন মাসে তাঁর পার্টিকে নিষিদ্ধ করেন দেশটির সাংবিধানিক আদালত।

শিক্ষকতা ও বক্তব্য প্রদান : দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেন মারভে সাফা। তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাবের আড়ালে মুসলিম নারীদের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য প্রদান শুরু করেন তিনি। অবশেষে ২০০৭ সালে ইউরোপিয়ান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটস জানান যে, তাঁর নাগরিকত্ব প্রত্যাহার ও সদস্যপদ বাতিলের বিষয়টি মানবাধিকার লঙ্ঘন। এ সময় তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় ও হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।

তুরস্কে হিজাব বিতর্ক : ১৯২৩ সালে মোস্তফা আতাতুর্কের নেতৃত্বে তুরস্ক একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে। সেই সময় ৯০ শতাংশের বেশি মুসলিম অধ্যুষিত তুরস্কে ইসলামী সংস্কৃতির বদলে পশ্চিমা চিন্তা ও সংস্কৃতির প্রসার করা হয়। তখন থেকেই সব ধর্মীয় চিহ্ন ও কার্যক্রমকে রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা শুরু হলেও স্পষ্টভাবে নারীর হিজাব পরার অধিকারকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। ১৯৮০ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর সর্বপ্রথম সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর ১৯৯৭ সালে দেশটির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়েও এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অবশেষে ২০১০ সালে দীর্ঘ এক যুগের বিতর্কের পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটে। অতঃপর ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সংবিধানের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তাদের হেডস্কার্ফের ওপর থেকে বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়া হয়। অতঃপর ২০১৪ সালে হাইস্কুল থেকে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।

সংসদে বোন ও মেয়ের দোভাষীর ভূমিকা : ১৯৯৯ সালে সংসদ সদস্যের পদ হারানোর ১৬ বছর পর মার্ভে সাফা কাভাকির বোন রাভজা কাভাকি তাঁর বোনের হিজাব পরেই সংসদে শপথ গ্রহণ করেন। ২০১৭ সালে মার্ভে সাফা কাভাকি মালয়েশিয়ায় তুরস্কের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর মেয়ে ফাতেমা আবু শানাব যুক্তরাষ্ট্রের বেকেটফান্ড  অর্গানাইজেশন ফর রিলিজিয়াস লিবার্টিসহ বিভিন্ন রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক গবেষণা সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তা ছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের বিভিন্ন বৈঠকে দোভাষী ছিলেন।

সূত্র : টিআরটি ওয়ার্ল্ড ও আলজাজিরা

 

 

কিউএনবি/আয়শা/৩০ ডিসেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/দুপুর ১:২৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit