খোরশেদ বাবুল, শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি : খাল-বিল পুকুর ও জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। মাছ চাষ ও শিকার পদ্ধতিতে পরিবর্তণ এসেছে। ‘গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ’ প্রবাদ এখনও রয়েছে গ্রাম বাংলায়। তবে মাছ চাষের আওতায় আসায় মাছ শিকারের পদ্ধতি বদলে গেছে। এখন মাছ শিকারের ক্ষেত্রে খেপলা জাল আর দেখা যায় না।
প্রাকৃতিক জলাশয়ে অবারিত মাছ শিকারের সুযোগও হয় না। মুক্ত জলাশয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে আর মাছ শিকারের আয়োজন হয় না। বর্ষার পানিতে প্লাবিত জলাশয়ে কিছুটা মাছ ধরার প্রচলন থাকলেও তা সচরাচর দেখা যায় না।
মাছ শিকারের কৌশলেও বড় ধরণের পরিবর্তণ এসেছে। গ্রামাঞ্চলের একটি পরিবারও খেপলা জাল বিহীন পাওয়া যেত না। দিনে অন্তত একবার হলেও খেপলা জাল পানিতে ফেলে প্রয়োজনীয় মাছ ধরে আনা হত। মাছ আর ভাতের সাথে এই জাতির একটা নিবিড় সম্পর্ক ছিল। সেই থেকেই মাছ ভাতে বাঙ্গালী উপাধি মিলেছিল। আজ আমরা সেই সময়ের চাইতে বেশী মাছ খাই। তবুও মাছে ভাতে বাঙ্গালীর স্বাদ উপভোগ হয় না।
মাছ শিকারের ইচ্ছে থাকলেও উপায় নাই। কারণ হিসেবে দেখা গেছে, জলাশয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে জলাশয় ভড়াট হয়েছে আবার কোথাও মাছ চাষের জন্য দখল হয়েছে। এখন জাল যার জলাশয় তার নিয়মও কেউ মানছে না। শরীয়তপুরের কয়েকটি বন্দর ও বাজার খুরে মাছ ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নদী বেষ্টিত এই জেলায় প্রত্যেক পরিবারের ঘরে মাছ শিকারের উপকরণ পাওয়া যেত। তার মধ্যে খেপলা জালের ব্যবহার ছিল খুব বেশী। বর্তমানে উন্মক্ত জলাশয় নাই। মাছ শিকারের সে উপকরণও আর দেখা যায় না। মাছ চাষ এক প্রকার ব্যবসায়ীদের মাঝে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। তাই এখন আর মাছ শিকার হয় না। বাজার থেকে মাছ কিনতে হয়। নতুন প্রজন্মও মাছ শিকারের কৌখল জানে না।
প্রবীণদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, খেপলা জালের ব্যবহার সকলে জানে না। এর জন্য কৌশল ও শারীরিক সক্ষমতা লাগে। নিজের মতো করে এই জাল বুনন করতে হয়। জলাশয়ে জাল ফেললে প্রচুর মাছ ধরা পরত। পরিবারের চাহিদা পূরণ করে বিক্রি করেও অনেক টাকা পেতেন অনেকে। এখন জলাশয় এক শ্রেণির লোকের কাছে জিম্মি। এখন উন্মক্ত জলাশয়ও নাই আর মাছ শিকারের সেই উপকরণও নেই।
উন্মক্ত জলাশয় না থাকায় এখন শখ পূরনের জন্যও মাছ শিকার করে না কেউ। দেখা যায় না মাছ শিকারের খেপলা জালও। হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেপলা জাল ও মাছ শিকার। জনপ্রিয় এই ঐতিহ্যটি টিকিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন মাছ শিকারে আগ্রহীরা।
কিউএনবি/আয়শা/২৪ নভেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৪:৩৮