সিলেটের বিয়ানীবাজার গ্যাসক্ষেত্রের পরিত্যক্ত ১ নম্বর কূপে নতুন করে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কূপটিতে গ্যাসের মজুদ থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় বাপেক্স। কূপটি থেকে দৈনিক সাত থেকে আট মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এই গ্যাস শিগগিরই জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। বিষয়টি কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) সূত্রে জানা যায়, বিয়ানীবাজার ১ কূপটির তিন হাজার ৪৫০ মিটার গভীর থেকে ৩৫ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন শেষে ২০১৬ সাল থেকে পরিত্যক্ত ছিল। দেশে চলমান জ্বালানিসংকটের মধ্যে বাপেক্স গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে কূপটির ওয়ার্কওভার (পুনঃখনন) শুরু করে বিজয় ১১ রিগ দিয়ে। এসজিএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. শাহীনুর ইসলাম বলেন, ‘বিয়ানীবাজার ১ নম্বর কূপটির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম আজ (গতকাল) থেকে শুরু হয়েছে। কূপের তিন হাজার ৪৫৪ মিটার গভীর থেকে পরীক্ষা করে গ্যাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। পরীক্ষামূলক অবস্থায় ১০ মিলিয়ন গ্যাস প্রবাহ হচ্ছে এবং গ্যাসের চাপ রয়েছে তিন হাজার ১০০ পিএইচ। ’
এসজিএফএলের এমডি বলেন, ‘কূপটিতে আগামী তিন দিন পরীক্ষা চলবে। পরীক্ষা শেষে তখন এ কূপ থেকে কী পরিমাণ গ্যাস দিতে পারব তার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আপাতত মনে হচ্ছে দৈনিক সাত থেকে আট মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এবং প্রায় ১০০ ব্যারেল কনডেনসেট সরবরাহ করা যাবে। ’তিনি বলেন, ‘বিয়ানীবাজারে আমাদের থ্রিডি (ত্রিমাত্রিক) সিসমিক সার্ভে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে নতুন কূপ খননের পরিকল্পনা নেওয়া হবে। ’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসজিএফএলের অধীনে থাকা পরিত্যক্ত গ্যাস কূপগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চারটি কূপ (কৈলাশটিলা ২, রশীদপুর ২, রশীদপুর ৫ ও হরিপুর ৭) আবার খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের শেষের দিকে এই চারটি কূপের খনন শুরু হবে এবং সেখানেও গ্যাস পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
শাহীনুর ইসলাম জানান, এসজিএফএলের অধীন বিয়ানীবাজারের কূপ ছাড়াও গোলাপগঞ্জের কৈলাশটিলা ৮ ও গোয়াইনঘাট ১০ নম্বর কূপ খনন এবং রশীদপুরে একটি পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের কাজ শেষে এসজিএফএলের গ্যাস উৎপাদন আরো বাড়বে। এ ছাড়া দুটি প্রকল্পের আওতায় বিয়ানীবাজার ফিল্ড এবং বণ্টক ১৩ ও ১৪-এর আওতায় ডুপিটিলা, বাতচিয়া, হারারগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও সিলেট সাউথে ত্রিমাত্রিক সিসমিক জরিপকাজ সম্পন্নের পথে। ২০২৩ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। সব প্রকল্প বাস্তবায়নের পর ২০২৫ সালের মধ্যে এসজিএফএল থেকে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ১৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট বৃদ্ধি পাওয়ার আশা রয়েছে।
১৯৫৫ সালে সিলেটের হরিপুরে প্রথম গ্যাসের সন্ধান মেলে। এরপর আবিষ্কৃত হয় বেশ কিছু গ্যাসক্ষেত্র। দেশে বর্তমানে ২৮টি আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। এসব গ্যাসক্ষেত্রে প্রমাণিত মজুদের পরিমাণ ২১.৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস। আরো ছয় টিসিএফ রয়েছে সম্ভাব্য মজুদ।
কিউএনবি/আয়শা/১১ নভেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/দুপুর ২:৪৩