আনিছুর রহমান মানিক, ডোমার (নীলফামারী) প্রতিনিধি : বাংলাদেশের ৫১ বছর পর প্রাথমিক শিক্ষা খাতের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে অর্ন্তভূক্তিমূলক প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়কে রাষ্ট্রায়ত্ত করেন। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ অনুসরণ করে তারেই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধাপে ধাপে মাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত তা সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। জাতীয় এই নীতি বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার ধারাবাহিতভাবে প্রাথমিক উপবৃত্তিকে গুরুপ্তপূর্ণ মাধ্যমে হিসেবে বেছে নিয়েছে। শুরুতে শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়ার হার কমাতে এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুমে ধরে রাখার জন্য উপবৃত্তি চালু করা হয়। পরে মাঠ পর্যায়ে চাহিদা অভিজ্ঞতা ও সামর্থ্যের ভিত্তিতে উপবৃত্তি কর্মসূচির ধরণ আকার পরিধি বেড়েছে।
২০২০ সালে প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তির আকার দাঁড়ায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। মূলত দরিদ্র পরিবার গুলোর শিক্ষার্থীদের পারিবারিক খরচ খানেকটা সাশ্রয়ে ও ঝড়ে পড়ার হার কমাতে প্রাথমিক স্তরে এই উপবৃত্তি দেওয়া হয়। আর উপকার ভোগীরা সবাই প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ও তাদের পরিবার। এর বড় অংশটি মেয়ে শিক্ষার্থী। প্রাথমিক পর্যায়ে ঝড়ে পড়ার হার কমাতে, শিশুদের ক্লাসরুমে ধরে রাখতে ও নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বড় রকমের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখছে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘নগদ’ প্রাথমিক উপবৃত্তির টাকা সরাসরি শিক্ষার্থীর মায়ের মোবাইল নম্বরে যায়।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীর নামের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মায়ের মোবাইল নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর থাকায় এখানে শিক্ষার্থীর বাবার নামযুক্ত করার সুযোগ নেই। উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতা বিতরনের এই ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া একদিকে যেমন গ্রামের নারীদের আর্থিক সক্ষমতা বাড়িয়েছে অন্যদিকে আবার শিক্ষার্থীর ঝড়ে পড়ার হার অনেকাংশে কমিয়েছে বলে মনে করেছেন এই খাতে সংশ্লিট কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন দেশের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়া রোধে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান কার্যক্রম ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ২০২১ সালের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারি (এ পি এস সি) পরিচালনা করে, যা চলতি বছরের মার্চে প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা হয়। শুমারিতে দেখা গেছে, এবার ঝরে পড়ার হার এক লাফে ৩ শতাংশ কমেছে। ঝড়ে পড়ার হার এখন ২৪ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ১৭ দশমিক ২০ শতাংশ। করোনা মহামারিতে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়াার হার ছিল আশংকা জনক। সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের আবার বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে সরকারের উপবৃত্তি প্রদান কার্যক্রম। প্রাথমিকে উপবৃত্তির অর্জুন সমূহ –
* ভর্তির হার বৃদ্ধি পেয়েছে
* সুবিধা ভোগী ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতির হার ৯১% এ বৃদ্ধি পেয়েছে।
* ঝরে পড়ার হার কমেছে।
* শিশু শ্রম রোধ ও দারিদ্র বিমোচন।
* পাশের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
* প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে।
* নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। “মা” এর হাতে উপবৃত্তির টাকা প্রদান করায় শিক্ষার্থীরা সরাসরি উপকৃত হচ্ছে।
* হাজিরা রেজিস্টার ক্যাশবই ফলাফল রেজিস্টার ও বই বিতরণ রেজিষ্টার হালনাগাদ হয়েছে।
* প্রাথমিক শিক্ষা চক্রের সমাপ্তির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
* উপবৃত্তি প্রদান কার্যক্রম এক সময় জটিল ও কিছুটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার’ ছিল। এই দৃশ্যটিতে -আমূল পরিবর্তন এনেছে ডাক বিভাগের নগদ এখন যে কোন জায়গা থেকে খুব সহজেই অভিভাকরা তাদের সন্তানের উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করতে পারেন। উপবৃত্তির টাকা তোলার বিষয়ে নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার গড়ধর্মপাল গ্রামের আরজিনা বেগম ও সোনালী রানী বলেন, উপবৃত্তির টাকা সরাসরি মোবাইল ব্যাংকিংয়ে চলে আসায় তাদের – আর কোথাও যেতে হয় না । চাইলেই টাকা যে কোন জায়গা থেকেই তোলা যায়। পরিশেষে বলব, প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষা মন্ত্রনালয় এ ব্যাপারে পথিকৃৎ ভূমিকা পালন করছে উপবৃত্তির মাধ্যমে। উপকারভোগীদের জন্য স্বাধীন ভাবে নিজেদের এম এফ এস অপারেটরদের সেবা বাছাইয়ের সুযোগ রাখার বিষয়টি একটি ভালো সিদ্ধান্ত। প্রাথমিক শিক্ষ অধিদপ্তরে সাম্প্রতিক এই সিদ্ধান্তকে প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রম বাস্তবায় নির্দেশনা ২০২১) আমি অভিনন্দন জানাই। ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এই নির্দেশনা অনুমোদিত হয়েছে।
(মো: মাহবুব হাসান)
উপজেলা নির্বাহী অফিসার
জলঢাকা, নীলফামারী।
কিউএনবি/আয়শা/২১ সেপ্টেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/দুপুর ১২:৫৫