ডেস্ক নিউজ : দেশে ভয়াবহ রূপ নিতে শুরু করেছে ডেঙ্গু। চলতি মাসের ৯ দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৯১৫ জন রোগী। এ সময় মারা গেছে ১০ জন। চলতি বছর ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে আগস্টে মাসে। বরাবরের মতোই রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। ঢাকার ৫০টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৭৭০ জন রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে মিটফোর্ড হাসপাতালে ৬০ জন এবং মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫০ জন রোগী ভর্তি আছে। অন্যান্য হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।
ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছে। এর মধ্যে ৬২ জনই কক্সবাজারের। চলতি বছর কক্সবাজারে মোট ১৫ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে গেলে হটস্পট অর্থাৎ মশার প্রজননস্থল চিহ্নিত করে ফগিং করতে হয়। সে ক্ষেত্রে কোন এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাচ্ছে চিহ্নিত করতে হবে এবং হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু রোগীর ডাটা নিয়ে বাড়ির চারদিকে মশা নিধনের ওষুধ ছিটাতে হবে। কিন্তু সিটি করপোরেশনকে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। হটস্পট ব্যবস্থাপনায় সিটি করপোরেশন ব্যর্থ হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, সেপ্টেম্বরজুড়েই ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ থাকবে। এ বছর অক্টোবরেও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থাকবে। কারণ বৃষ্টি হলে তার পরের ২০ থেকে ২৫ দিন পর ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়। ডেঙ্গু রোগীকে মশারির মধ্যে রাখা ও হটস্পট ম্যানেজমেন্ট করতে হবে। শুধু সিটি করপোরেশনের অপেক্ষায় না থেকে ব্যক্তিগতভাবেও জমে থাকা পানি পরিষ্কার করতে হবে।
এদিকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২৫ শতাংশ শিশু জ্বর নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ শিশু ডেঙ্গু নিয়ে আসছে। আর ডেঙ্গুতে শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো তারা একেবারে শেষ সময়ে আসছে বলে জানিয়েছেন শিশু হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, শিশুদের জ্বর হলে এক দিনও বিলম্ব করা যাবে না। যেসব শিশু কিডনি-লিভার জাতীয় রোগে ভুগছে তাদের যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। পাশাপাশি ফার্মেসি থেকে অনুমানের ভিত্তিতে শিশুকে ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।
দেশে সব শেষ ২৪ ঘণ্টায় (গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) নতুন ১৪৫ রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। নতুন ভর্তি রোগীর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৪০ জন এবং অন্যান্য বিভাগের পাঁচজন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ২৭৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর অন্যতম কারণ দেরিতে হাসপাতালে আসা। জ্বর, বমি ও গা ব্যথাসহ যেকোনো লক্ষণ হলেই দেরি না করে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে। জ্বর কমে গেলেই অনেকে মনে করছে রোগী সুস্থ হয়ে গেছে। কিন্তু ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে জ্বর কমে গেলেই রোগী ক্রিটিক্যাল পর্যায়ে চলে যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানায়, গত আগস্ট মাসে তিন হাজার ৫২১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং ১১ জনের মৃত্যু হয়। দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে মোট ৮৮৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৭২১ ও ঢাকার বাইরে অন্যান্য বিভাগে মোট ১৬৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছে।
চলতি বছর ৩১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে সাত হাজার ৯৫১ জন রোগী। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি হয় ছয় হাজার ৪৪৮ জন। আর ঢাকার বাইরে অন্যান্য বিভাগে এক হাজার ৫০৩ রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে সাত হাজার ৩৪ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।
কিউএনবি/আয়শা/১০ সেপ্টেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/দুপুর ১:৫৩