সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন

অর্চনা সাহা এর জীবনের খন্ডচিত্র : ছুটির বিয়ে

অর্চনা সাহা, ইন্সট্রাক্টর, পিটিআই, মানিকগঞ্জ ।
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০২২
  • ৫৪৩ Time View

ছুটির বিয়ে
————-

ছুটি যেদিন জন্মালো তার আগেরদিন বৌরানীকে হাসপাতালে নেয়া হলো। সাথে বাবা, মা, দাদা, মামী (যিনি সবার সাথেই থাকতেন) বাড়ির সিনিয়র আরও অনেকে ছিল। পরদিন দুপুরের পর পর পুলক (বৌরানীর ভাই) এসে আমায় বলল দিদি আপনাকে হাসপাতালে যেতে বলেছে। কেন? বলল জানিনা। গেলাম। গিয়ে শুনি ওটি হবে। আমরা অপেক্ষা করছি ওটির বাইরে। তখন আলট্রাসনো হতোনা। সবার ধারণা ছিল ছেলে হবে, বৌরানীরকে দেখে নাকি এমনই মনে হয়েছে। ওটির বাইরে থেকে কান্নার শব্দ শুনে আমি বললাম মেয়ে হয়েছে। কেউ মানল না আমার কথা, ডাক্তার বলার পর সবাই মানল।

আমি হাসপাতালেই থেকে গেলাম। পরদিন বৌরানী কিছুটা সুস্থ হলে জিজ্ঞেস করলাম আমাকে আসতে বলেছিলে কেন? কিছুতেই বলতে চাইল না। অনেক জোর করাতে বলল, আমার মনে হয়েছে মরে যাব, তাই আমি যদি মরে যাই তাহলে বাচ্চাটা তুমি দেখো। এইটা বলার জন্য তোমাকে ডেকেছিলাম।

বৌরানী সুস্থই ছিল কিন্তু ছুটি আমার সঙ্গী হয়ে গেল আমি না থাকলে আমার মা। সবচেয়ে বেশি হলো আমার বেকার সময়ে। এমএড শেষ করে ঢাকা এলাম। চাকরির চেষ্টা করি। অনুষ্ঠান, বন্ধুদের আড্ডা, পারিবারিক প্রোগ্রাম সব বাদ দিয়েছিলাম শুধু ছুটির সাথে সময় কাটে। দাদা – বৌরানী কাজে অকাজে ঘুরে বেড়ায় আমি আর ছুটি বাসায় থাকি। এই ছুটির জন্যই আমার বিয়ে করা। কিভাবে?

একদিন দুপুরে দাদা বৌরানী ওদের ঘরে ছুটিকে ডেকে নিয়েছে। প্রায় আধ ঘণ্টা হয়ে গেছে ছুটি আসে না। আমার কেমন একা লাগলো। ভাবলাম ছুটি তো ওদেরই মেয়ে, ওদের কাছে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এর আগে বাবুসোনাকে (দিদির ছেলে) নিয়েও একই অভিজ্ঞতা। ব্যস বিয়ের ব্যাপারে পজিটিভ ভাবতে বাধ্য হলাম।

চাকরিতে গেলাম, বিয়ে হলো। ঢাকা এলে তখনো ছুটি আমাদের মাঝখানে ঘুমায়। আমার মেয়েকে ভাগিদার মনে করলো। প্রথম প্রথম বাবুইকে মানতে পারত না। কম্প্লেইন করতো যেমন-তেল দেবার সময় হাত পা ছোরাছুরি করলে সে বলতো ‘ছোটো, বোন তোমাকে লাথি দিচ্ছে।’ আমি বুঝতাম বুঝাতাম। সেও বুঝেছিল বাবুইকে আমার থেকে আলাদা করা যাবে না। তাই বোনকে মেনে নিয়ে আমাদের সাথে একাত্ম হয়ে গেল এবং এখন পর্যন্ত দিদির দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে ব্যস্ততা বেড়েছে ওরও আমারও। কিন্তু ভিতরে ভিতরে সেখানেই আছি।

সেই ছুটি একটু একটু করে বড় হলো। প্লে, নার্সারি, কেজি, ওয়ান, টু, ও লেভেল, এ লেভেল, আইবিএ, এমবিএ, বর্তমানে একটি বিদেশী সংস্থায় উচ্চ পদে কর্মরত। অনার্স পাশের পর তাঁকে বলা হলো জীবনের আর একটি পার্ট যে বিয়ে তার খবর কী? তাঁর উত্তর ছিল, দু বছর পর। দুবছর পরে

র উত্তর দুবছর পর। বাস কন্ডাকটরদের বাস ছাড়ার সময় যেমন দশ মিনিট কখন শেষ হবে কেউ জানে না। তাঁরও দু বছর আর শেষ হয় না। মাঝে করোনা তাঁকে সহযোগিতা করলো। অবশেষে গত চার আগস্ট ২০২২ তারিখ আমাদের কাঙ্খিত দিনটি এলো, ছুটি আর পারাশার এক হয়ে ওদের নতুন জীবন শুরু করল। আসুন আমরা শুভানুধ্যায়ীরা আশির্বাদের হাতটি রাখি ওদের মাথায়।

 

লেখিকাঃ অর্চনা সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক ছাত্রী। বর্তমানে মানিকগঞ্জে পিটিআই এর ইন্সট্রাক্টর হিসাবে কর্মরত। জীবন ঘনিষ্ঠ লেখার অনুপম সৃষ্টিতে অর্চনা সাহা বিশেষ আবেদন সৃষ্টি করে থাকেন। এই পোস্টটি তাঁর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে সংগৃহিত।

 

 

 

কিউএনবি/বিপুল/২৩.০৮.২০২২/ দুপুর ১২.২১

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit