কে এই নাহিদ-রুমকী ?
—————————-
অনেকেই আমার কাছে জানতে চায়, কে এই নাহিদ-রুমকী? কেউবা মোবাইলে ফোন করে জিজ্ঞাসা করে, কেউবা মেসেঞ্জার,হোয়াটস আপে টেক্সট অথবা কল দিয়ে জানতে চায়। কিন্তু আমি কাউকেই সুনির্দিষ্ট ভাবে বলতে পারিনা কে এই নাহিদ-রুমকী ?
”নাহিদ-রুমকীর অসমাপ্ত কথপোকথন” অথবা ”ক্যাম্পাস উপাখ্যান”এর কেন্দ্রীয় চরিত্র নাহিদ-রুমকীর কথা, চিন্তাধারা, আলাপচারিতা অথবা তাদের মানসিকতা ফেসবুকের মাধ্যমে কয়েক বছর যাবৎ বেশ কিছু মানুষ জানতে পেরেছে। তাদেরকে নিয়ে ধারাবাহিক কাহিনী অনেকেই পড়েছে। সংগত কারণে এই চরিত্র দুটির আসল পরিচয় জানতে অনেকেই আগ্রহ পোষণ করে থাকতে পারে।
এবারে দেখা যাক কে এই নাহিদ-রুমকী ?
সময়টা ‘৮০ এর দশকে কোন একদিন দুপুর বেলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র নাহিদ কোমরে কাটা রাইফেল নিয়ে দ্রুত হল থেকে বের হল। ক্যাম্পাসে কানাঘুষায় শুনেছে পুলিশ রেইড করবে হলে। কাজেই নিরাপদে রাইফেলটা সরাতে হবে মুহসিন হল থেকে। নাহিদ দ্রুত হলে ঢুকে কোমরে রাইফেলটি গুঁজে নিয়ে হল থেকে বের হয়ে আসল। আই ই আর বিল্ডিঙের দেয়াল টপকে সে রেজিস্টার বিল্ডিঙে ঢুকে পড়ল। মল এলাকা দিয়ে শা শা করে পুলিশের লরি গুলো ছুটছে। কিছু যাচ্ছে সূর্যসেন ও জসিমুদ্দিন হলের দিকে। আর কিছু যাচ্ছে মুহসিন হলের দিকে।
ক্যাম্পাসের সকল প্রবেশদ্বারে পুলিশি তল্লাশি চলছে। এটা আগেই জেনে গেছে নাহিদ। এখন রাইফেল নিয়ে বের হওয়া তার কাছে খুব কঠিন মনে হচ্ছে। দেয়াল ঘেসে মাথা নিচু করে নাহিদ ল্যাবরেটরি স্কুলের পাশ দিয়ে দ্রুত ভিসির বাসার সামনে পৌঁছে গেল। ছাত্রী হল থেকে অধিকাংশ ছাত্রীরা ব্যাগ নিয়ে হল থেকে বের হচ্ছে। কেউ হেটে যাচ্ছে, কেউ রিকশায়। নীলক্ষেত মুখী অধিকাংশ ছাত্রী। হটাৎ নাহিদ দেখতে পেলো রুমকী ব্যাগ নিয়ে রিকশায় যাচ্ছে। নাহিদ চিৎকার করে ডাকল। রুমকী একটু থাম। রিকশা থেমে গেল। নাহিদ এক লাফে রুমকীর রিকশায় উঠে পড়ল।
কি খবর নাহিদ, তুমি কোথায় যাবে ? আমার রিকশায় উঠলে যে? নাহিদ ভনিতা না করে বলে ফেলল, আমার রাইফেলটা তুমি ক্যাম্পাসের বাইরে বের করে দাও রুমকী, প্লিজ না করিও না। দ্রুত সব শুনে রুমকী রাইফেলটা তার ব্যাগের ভিতর ভরে ফেলল। তার হাত পা কাপলেও খুব শক্ত হয়ে গেল নিমিষেই। জহুরুল হক হলের সামনে নেমে পড়ল নাহিদ। হাটা ধরল নীলক্ষেতের দিকে। নীলক্ষেতে ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। অনেক ভিড় লেগে গেছে। শুধু ছেলেদের ব্যাগ তল্লাশি করছে পুলিশ। ছাত্রী আর পথচারীদের দিকে তাদের নজর নেই। বিনা বাধায় পার হয়ে গেল রুমকী । হাফ ছেড়ে বাঁচল নাহিদ। বলাকা সিনেমা হলের সামনে রিকশায় বসা অবস্থায় রুমকীকে পেল নাহিদ। আবার সে রুমকীর রিকশায় উঠে পড়ল। রিকশা পংখীরাজের গতিতে ছুটল কলাবাগানের দিকে।
রিক্সায় যেতে যেতে রুমকী নাহিদকে বললো, কাজটা কি ভালো করলে তুমি ? যদি ধরা পড়তাম ? নাহিদ বলল, এর ব্যবস্থা আমি আগেই ঠিক করে ফেলেছিলাম, আমিতো হেঁটেই আসছিলাম। তুমি ধরা পড়লে আমি নিজেই পুলিশের কাছে যেয়ে আসল ঘটনা খুলে বলতাম। আমি জোড় করে তোমার ব্যাগে রাইফেল ঢুকিয়ে দিয়েছি। অবাক দৃস্টিতে রুমকি তাকিয়ে থাকে নাহিদের দিকে।
শুক্রাবাদে নেমে পড়ল নাহিদ। ফুটপাথে হকারের কাছ থেকে একটা নিউজ পেপার কিনল । দ্রুত রাইফেলটা রুমকীর ব্যাগ থেকে বের করে পেপারে মুড়ে বিদায় নিল সে। নিমিষেই হারিয়ে গেল শুক্রাবাদের গলিতে।
ক্যাম্পাস রণাঙ্গনের এক সাহসী যুবক নাহিদ। বেশ কিছুদিন পর ক্যাম্পাস স্বাভাবিক হলে তাকে এখন প্রায় দেখা যায় রোকেয়া হলের সামনে। প্রহর গুনে সে রুমকীর জন্যে। রুমকী তার ইয়ারমেট। একই ডিপার্টমেন্টে না পড়লেও তাদের দেখা হয় নিয়মিত । সম্পর্কটা সহজ সরল হলেও কখন যে এই দুজন আলগা একটা সম্পর্কে জড়িয়ে যায়, বুঝতে পারেনা দুজনের কেউ। সময়ের কালস্রোতে ক্যাম্পাস উপাখ্যানের এই নায়ক আর নায়িকা বিপ্লব আর সংগ্রামের মধ্যে ভালোবাসা খুঁজে নেয় পরস্পরের মধ্যে। এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অনেক মেধাবী ছাত্রই ঘটনাক্রমে জড়িয়ে যায় সন্ত্রাসের নিকষ কালো থাবায়। এদের অনেকেরই জীবনে হেরে যায় বিপ্লব, হেরে যায় প্রেম।
জীবনের পাদ প্রদীপে হেরে যাওয়া বিপ্লব আর হেরে যাওয়া প্রেমের পরাজিত নায়ক নায়িকা নাহিদ-রুমকী। খুব সহসাই হয়ত তারা মুখোশের আড়ালে ঢেকে রাখা তাদের মুখাবয়ব প্রকাশ করবে। দেখা যাবে তাদের আপন মহিমায়।
লেখকঃ লুৎফর রহমান। রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট।
কিউএনবি/বিপুল/ ২৬.০৭.২০২২/ রাত ৯.৫২