খোরশেদ আলম বাবুল,শরীয়তপুর প্রতিনিধ : পদ্মাসেতুর উদ্বোধন ঘিরে যখন দেশবাসী উৎসবমূখরিত ঠিক সেই সময়ে সুনসান নিরবতায় নিমজ্জিত সেতুর দক্ষিণ পাড়ের মঙ্গল মাঝির ঘাট এলাকা। এই ঘাটটি ছিল শরীয়তপুর-মুন্সিগঞ্জের সেতুবন্ধন। ফেরি, লঞ্চ, স্পীডবোট ও ট্রলার পারাপার হয়ে রাজধানীর সাথে ছিল শরীয়তপুরবাসীর যোগাযোগ। প্রতিনিয়ত অর্ধলাখ মানুষ সহ বিভিন্ন জেলার যানবাহনের যাতায়াত মাধ্যম ছিল এই ঘাট। এই মঙ্গল মাঝির ঘাট ঘিরে গড়ে উঠেছিল হোটেল, রেস্তোরা, শপিং মল। বাস, সিএনজি, মোটরসাইকেল, অটোবাইক, ভ্যান, রিক্সা, নছিমন সহ বিভিন্ন ধরণের হাজার হাজার ছোট ছোট যানবাহন ছিল মানুষের যাতায়াত মাধ্যম। লঞ্চে ও ফেরিতে ঝালমুড়ি, চিড়া ভাজা, ছোলা, চানাচুর, সিদ্ধ ডিম, পুরি, সিঙ্গারা, দইসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করে পরিবারের খরচ চালাতেন শত শত পরিবার। প্রতিটি ফেরি ও লঞ্চে ভিক্ষাও করতেন অনেকে।
এই পথে জীবীকা নির্বাহ হতো হাজার হাজার পরিবারের। কাল থেকে কি হবে তাদের এই নিয়ে চিন্তা। তবে কেউ কেউ ভরসা করছেন সৃষ্টিকর্তার সেরা সৃষ্টি হিসেবে। কোন সৃষ্টিকে সৃষ্টিকর্তা অভুক্ত রাখেন না।মঙ্গলমাঝি ঘাট বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, এই লাইনে ৮৭টি লঞ্চ, ৩০০টি স্পীডবোট, ১৪টি ফেরি নিয়মিত চলাচল করত। এর বাইরেও মানুষ ট্রলার যোগে পার হতো। এক প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলমাঝির ঘাট ইনচার্জ আব্দুল্লাহ ইনযাম জানায়, যাত্রির চাহিদা থাকলে হয়তো লঞ্চ, ফেরি ও স্পীডবোট সার্ভিস চালু থাকতে পারে। এই বিষয়ে এখনও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোন সিদ্ধান্ত তাদের কাছে পৌঁছেনি।মঙ্গল মাঝি লঞ্চঘাট ইজারাদার মোকলেছুর রহমান মাদবর জানায়, পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবী ছিল। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেই দাবী পুরণ করে মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে মঙ্গল মাঝির ঘাটের সাথে সম্পৃক্ত প্রায় ২০ হাজার পরিবার বেকার হয়ে পড়বে। যাদের পুঁজি আছে তারা হয়তো অন্য ব্যবসায় ধাবিত হবে। আর যারা দিনমজুর ছিলেন তাদের কোন উপায় থাকবে না।
লঞ্চ মালিকদের একজন জানায়, সৃষ্টিকর্তাই তার সৃষ্টির রিজিকের ব্যবস্থা করবেন। তবে পদ্মাসেতু মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। লঞ্চে ঝালমুড়ি বিক্রেতা জাকির জানায় সে পূর্বের পেশা পোশাক কারখানায় চলে যাবে। কিন্তু সিএনজি চালক সামসুদ্দিন জমি বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সিএনজি গাড়ি কিনেছে সে যাবে কোথায়। এমন প্রশ্ন হাজার মানুষের। তবে জমি, বসত ভিটা ও ব্যবসা বাণিজ্য হারিয়ে হতাশ হলেও পদ্মাসেতু পাওয়ার আনন্দ সকলের চোখে ফুটে উঠেছে। একদিন পরেই পদ্মাসেতু দিয়ে পারাপার হবে এমন আনন্দ ছিল যাত্রিদের মধ্যে।
কিউএনবি/অনিমা/২৪.০৬.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/রাত ৮:৩২