ডেস্ক নিউজ : তীব্র শীত, ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে ভূরুঙ্গামারীর মানুষ। গত দুই দিন থেকে দুপুর পর্যন্ত মিলছেনা সূর্যের দেখা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত শুরুর পরই উপজেলা জেলা জুড়ে নামছে শীতের পারদ। রাত জুড়েই ঝরছে টিপটাপ ঝড় পরছে বৃষ্টির মতই শীত। ঘন কুয়াশায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। উত্তরের সীমান্তঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে পৌষের শেষ ভাগে শীতের তীব্রতা ও হিমেল হাওয়ার সঙ্গে ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন জীবন-জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া শ্রমজীবী মানুষ। কনকনে ঠাণ্ডায় শিশু ও বৃদ্ধরা কাবু হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বলছে, শীতের তীব্রতা বেড়ে সোমবার (জানুয়ারি ০৩) থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে উপজেলাজুড়ে। এতে ছিন্নমূল মানুষের চরম ভোগান্তি বেড়ে যেতে পারে। তবে শীত মোকাবিলায় সরকারের সকল প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্র জানায়, পৌষের শুরু থেকেই ক্রমান্বয়ে তাপমাত্রা হ্রাস পেয়েছে। মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ফলে এ উপজেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। এ মৃদু শৈত্যপ্রবাহ সপ্তাহ জুড়েই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার।
এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় বাড়ছে। সামর্থ্যবানদের চাহিদা থাকায় বৈদ্যুতিক দোকানগুলোতে গিজার আর ইলেকট্রিক ক্যাটলির বিক্রিও বেড়েছে। তবে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রান্তিক কৃষক ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। আবহাওয়ার এই বৈরী আচরণে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। উপজেলার চরভরঙ্গামারী ইউনিয়নের ভ্যানচালক দুলাল মিয়া জানান, ঘন কুয়াশা আর এমন কনকনে শীত ও ঠাণ্ডা থাকলে ভ্যান চালানে খুবই কষ্টকর হয়ে যায়। তারপরও জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যেও বের হতে হচ্ছে।
প্রতিদিন চারশত টাকা জমায় ভাড়াতে অটো চালান রিয়াজুল। তিনি জানান, অটো নিয়ে রাস্তায় বেড় হইছি কিন্তু যাত্রী সংখ্যা একে বারে কম। অটো মালিকের জমার টাকা রোজগার করতে পারি নাই। তাই পরিবারের জন্য খাবার কিনতে কষ্ট হবে। অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক আমজাদ হোসেন (৬৫) জানান, গত দুই দিন সকাল থেকে ঘন কুয়াশায় আর হিমেল হাওয়ায় শীতের তীব্রতা একটু বেশিই মনে হচ্ছে। প্রান্তিক মানুষের এমন কষ্টের কথা ভেবে স্থানীয় প্রশাসন শীত নিবারণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসনের প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভাগ। এ ছাড়া বেসরকারি পর্যায়েও শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জয়মনিরহাট ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ ও চরভূরঙ্গামারী ইউপি চেয়ারম্যান মানিক উদ্দিন বলেন, শীতার্তদের মাঝে বরাদ্দকৃত শীতবস্ত্র পর্যাপ্ত নয়। যতটুকু বরাদ্দ আমরা পেয়েছি সেটুকু বিতরণ করতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহীনুর আলম বলেন, শীত মোকাবিলায় এ উপজেলায় চার হাজার পিস কম্বল বরাদ্দ এবং শীতার্তদের পোশাক ও কম্বল ক্রয়ের জন্য দশ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে উপজেলার দশটি টি ইউনিয়নে চার হাজার পিস কম্বল বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। শীতার্তদের বরাদ্দের টাকায় শীতবস্ত্র ক্রয় করা হচ্ছে। সেগুলো শীতার্তদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) দীপক কুমার দেব শর্মা বলেন, শীত মোকাবেলায় আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শীতে উপজেলার মানুষ যেন কষ্ট না পান, সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাদ্দকৃত শীতবস্ত্র উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে বিভাজন করে দেওয়া হয়েছে। আরো শীত বস্ত্র ক্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শীতে মানুষ যেন কষ্ট না পায় সেজন্য জন্য যা দরকার সব কিছুই করা হবে।
কিউএনবি/আয়শা/৪ঠা জানুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৬:২৭