ডেস্কনিউজঃ করোনাকালেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমেনি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ ও গুমের ঘটনাও থামেনি। বছরজুড়ে নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, নির্বাচনী সহিংসতা, সাংবাদিক নির্যাতন, ডিজিটাল নিরাপত্তার অপব্যবহার, গণপিটুনির মতো ঘটনাও ছিল উদ্বেগজনক।
গতকাল শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে এসব পর্যালোচনা তুলে ধরে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ও মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)।
আসকের তথ্য মতে, বরাবরের মতোই বিদায়ি বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ছিল বেশি। বিশেষ করে ‘বন্দুকযুদ্ধ’সহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও সরকার অস্বীকার করেছে। আসকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৮০ জন। এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে ‘ক্রসফায়ার’, ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ও ‘গুলিবিনিময়ে’ নিহত হন ৫১ জন।
এমএসএফের তথ্য মতে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভাষ্য ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৪৮ জন। এর মধ্যে ১৩ রোহিঙ্গা, সন্দেহভাজন ২২ মাদক কারবারি, বিভিন্ন মামলার আসামি ৯ এবং সন্দেহভাজন ১১ ডাকাত ও ছিনতাইকারী নিহত হন। বাকি ছয়জন অন্যান্য পেশার।
এমএসএফের তথ্য মতে, গুম ও নিখোঁজও ছিল উল্লেখযোগ্য। এক বছরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পরিচয়ে ১১ জনকে তুলে নেওয়া হয়। পরে সাতজনকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলেও চারজন এখনো নিখোঁজ।
ধর্ষণ বেড়েছে
বিদায়ি বছরে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের মতো ঘটনা বেড়েছে। আসকের হিসাব মতে, সারা দেশে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ১ হাজার ৩২১ নারী। এর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৪৭ জনকে, আত্মহত্যা করেন ৯ জন। এ ছাড়া যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তের শিকার হন ১২৮ নারী। উত্ত্যক্তের কারণে আত্মহত্যা করেন ১২ নারী। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিন নারী ও পাঁচ পুরুষ খুন হন। পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন ৬৪০ নারী। নির্যাতনে মারা যান ৩৭২ জন এবং আত্মহত্যা করেন ১৪২ জন। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হন ২১০ নারী। এ সময় হত্যা করা হয় ৭২ নারীকে, আত্মহত্যা করেন ১৩ নারী।
রাজনৈতিক সহিংসতা
আসকের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সংঘর্ষ, ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে বিরোধী দল এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ১৫৭ জন নিহত হন। ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় ১১৩ জন এবং পৌর ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৩ জন নিহত হন।
সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের তিনজন নিহত হন। বিদায়ি বছরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কমপক্ষে এক হাজার ১৩৪টি মামলা হয়েছে। বেশির ভাগ মামলায় সাংবাদিকদের হয়রানি করা হয়েছে। এ ছাড়া শারীরিক নির্যাতন, হামলা, মামলা, হুমকি, হয়রানিসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হন ২১০ সাংবাদিক।
কিউএনবি/বিপুল/১লা জানুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ | দুপুর ২:১১