বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০২ অপরাহ্ন

ইসলামের মহান খলিফা হজরত আবু বকর (রা.)

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৫ Time View

ডেস্ক নিউজ : ইসলামের প্রথম খলিফা শুধু নন, জীবিত অবস্থায় জান্নাতের সুসংবাদ যাঁরা পেয়েছেন হজরত আবু বকর (রা.) সেই আশারাতুল মুবাশশারার অন্তর্ভুক্ত। তিনি ছিলেন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শ্বশুর। মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশে ৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাল্যনাম আবদুল্লাহ, আবু বকর ডাকনাম। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি সিদ্দিক বা সত্যবাদী এবং আতিক বা দানশীল খেতাব লাভ করেন। আবু বকরের বাবার নাম ওসমান, কিন্তু ইতিহাসে তিনি আবু কুহাফা নামেই সুপরিচিত। মায়ের নাম উম্মুল খায়ের সালমা। আবু বকরের মা-বাবা উভয়েই বিখ্যাত কুরাইশ বংশের তায়িম গোত্রের ছিলেন। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের মধ্যে তিনি প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। এ বিষয়ে বাবা, স্ত্রী এমনকি ছেলের বিরোধিতার মুখে পড়েন আবু বকর (রা.)। তাঁর মা প্রথম দিকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং বাবা হিজরির অষ্টম বছরে ইসলামে দীক্ষিত হন।

আবু বকরের স্ত্রী কুতাইলা বিনতে আবদুল উজ্জা ইসলাম গ্রহণ করেননি। আবু বকর তাকে তালাক দেন। আবু বকরের ইসলাম গ্রহণ বিশিষ্টজনদের অনুপ্রাণিত করে। তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের ইসলাম গ্রহণে উৎসাহ জোগান। তরুণ বয়সে আবু বকর (রা.) একজন বণিক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি প্রতিবেশী সিরিয়া, ইয়েমেন ও অন্যান্য অঞ্চলে ব্যবসার সুবাদে ভ্রমণ করেন। এর মাধ্যমে তিনি সম্পদশালী হয়ে ওঠেন এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তিনি ছিলেন তাঁর গোত্রের একজন শীর্ষ নেতা। ইয়েমেন থেকে বাণিজ্য শেষে ফেরার পর তিনি মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ইসলাম প্রচারের সংবাদ পান। এরপর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। আবু বকরের (রা.) মেয়ে আয়েশার সঙ্গে রসুল (সা.)-এর বিয়ের ফলে তাঁদের দুজনের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। আবু বকর (রা.) একজন একনিষ্ঠ সহচর হিসেবে রসুল (সা.)-কে সহযোগিতা করেন। তাঁর জীবদ্দশায় বেশ কয়েকটি যুদ্ধে অংশ নেন। হুদায়বিয়ার সন্ধিতে আবু বকর অংশ নেন এবং তিনি ছিলেন এ চুক্তির অন্যতম সাক্ষী।

হজরত আবু বকর (রা.) ইসলামের সেবায় তাঁর অর্জিত অর্থ অকাতরে ব্যয় করেন। একবার রসুল (সা.) তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘তুমি তোমার পরিবারবর্গের ভরণপোষণের জন্য কী রেখেছ?’ তার উত্তরে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে।’ মদিনার মসজিদ ও মহানবীর বাসগৃহ নির্মাণ এবং তাবুক অভিযান ও অন্যান্য ব্যাপারে তিনি একাই ব্যয়ের বৃহত্তর অংশ বহন করেন। ইসলাম তথা মহানবীর জন্য আবু বকর (রা.) তাঁর সর্বস্ব বিলিয়ে দিতেও কুণ্ঠিত হননি। তাঁর সম্পর্কে মহানবী নিজেই বলেছেন, ‘আবু বকরের ধনসম্পদ ছাড়া অন্য কারও সম্পদ আমার এত উপকারে আসেনি।’ বিলালসহ যেসব গোলাম ইসলাম কবুল করে মনিবদের নির্যাতন ভোগ করছিলেন আবু বকর (রা.) তাঁদের অনেককে খরিদ করে মুক্ত করেন। ইসলাম প্রচারে তিনি সর্বশক্তি নিয়োগ করেন এবং হজরত ওমরের কথায়, ইসলামের সেবায় কেউ তাঁকে অতিক্রম করতে পারেননি।

রসুল (সা.)-এর মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়। মুহাজির ও আনসাররা নিজেদের মধ্য থেকে নেতা নির্বাচনের পক্ষে ছিলেন। কিছু গোত্র পুরনো প্রথা অনুযায়ী গোত্রভিত্তিক নেতৃত্ব ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চায়। আনসাররা সাকিফা নামক স্থানে একত্রিত হয়ে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন। এরপর আবু বকর, ওমর ও আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ সেখানে যান। সভার আলোচনায় একপর্যায়ে ওমর ইবনুল খাত্তাব আবু বকরের (রা.) প্রতি তাঁর আনুগত্য প্রকাশ করেন এবং আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহও একই পথ অনুসরণ করেন। এরপর বাকিরাও আবু বকরকে (রা.) নেতা হিসেবে মেনে নেন। আবু বকর (রা.) দুই বছরের কিছু বেশি সময় খলিফা থাকাকালে অস্থিতিশীলতার সম্মুখীন হন এবং তিনি তা সফলভাবে মোকাবিলা করেন। একাধিক ভণ্ড নবীর সমর্থকদের তিনি দমন করেন। তাঁর আমলে ইসলামি খেলাফত শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। এই মহান খলিফা ৬৩৪ সালের ২৩ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থতার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি শয্যাশায়ী হন। আবু বকর (রা.) তাঁর উত্তরসূরি মনোনয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন যাতে তাঁর মৃত্যুর পর মুসলিমদের মধ্যে সমস্যা দেখা না দেয়। অন্য সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-কে তাঁর উত্তরসূরি নিয়োগ দেন। ৬৩৪ সালের ২৩ আগস্ট আবু বকর (রা.) ইন্তেকাল করেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

কিউএনবি/অনিমমা/৩০ অক্টোবর ২০২৫,/রাত ৮:৩২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit