ধর্ম ডেস্ক : ইসলামী দাওয়াহ বলতে বুঝায়
‘দাওয়াহ’ (الدعوة) শব্দটি এসেছে আরবি “دعا – يدعو – دعوةً” ধাতু থেকে, যার অর্থ ডাকা, আহবান করা, আমন্ত্রন জানানো, নিমন্ত্রন করা, প্রচার করা, প্রার্থনা করা, সাহায্য কামনা করা ইত্যাদি। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো call, invitation, publicity, announcement, preaching etc. The Hanswehr Dictionary of Modern Written Arabic এ দা‘ওয়াহ শব্দের অর্থ করা হয়েছে Missionary activity, Missionary work, Propaganda.
পরিভাষায়: কোনো ব্যক্তির নিজস্ব মতবাদ, চিন্তাধারা বা জীবন প্রণালীর দিকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে অন্যকে আহবান করা, সে আহবান মেনে নিতে প্রভাবিত করা, মেনে নেয়ার পর সেটি বাস্তব জীবনে চর্চার দিক নির্দেশনা দানের যাবতীয় প্রচেষ্টাকে দাওয়াহ বলা হয়।
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বহু জায়গায় দাওয়াহর নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ
“তুমি তোমার প্রভুর পথে আহ্বান কর হিকমত ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে।” (সুরা নাহল, আয়াত: ১২৫)
وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ
“তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল থাকা উচিত যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৪) অর্থাৎ, সমাজে সর্বদা এমন মানুষ থাকতে হবে যারা দাওয়াহর কাজ করবে– অন্যদের কল্যাণ ও সত্যের পথে ডাকবে।
وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ
“যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে আহ্বান করে, তার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে?” (সুরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩৩) দাওয়াহকারী ব্যক্তিকে কুরআন ‘সর্বোত্তম বক্তা’ বলে অভিহিত করেছে।
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُوْلاً أَنِ اعْبُدُواْ اللهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوْتَ
“আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়ে এ নির্দেশ দিয়েছি যে, আল্লাহর ‘ইবাদাত কর এবং তাগুতকে (খোদাদ্রোহী) বর্জন কর।” (সুরা নাহল, আয়াত: ৩৬)
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র জীবন দাওয়াহর কাজে ব্যয় করেছেন। নবুওয়াতের শুরু থেকেই তিনি মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করেছেন, অত্যাচার, নিপীড়ন ও কষ্ট সহ্য করেছেন, কিন্তু দাওয়াহ থেকে বিরত হননি।
بلغوا عني ولو آيةً
من دعا إلى هدى كان له من الأجر مثل أجور من تبعه
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنهما أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم بَعَثَ مُعَاذًا رضى الله عنه إِلَى الْيَمَنِ فَقَالَ ادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَأَنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوْا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللهَ قَدِ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِيْ كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوْا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً فِيْ أَمْوَالِهِمْ، تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ
ইবনু আববাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) মুআয (রা.)-কে ইয়ামান দেশে (শাসক হিসাবে) প্রেরণ করেন। এ সময় তাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘সেখানকার অধিবাসীদেরকে এ সাক্ষ্য দানের প্রতি আহবান জানাবে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রসুল। যদি তারা তা মেনে নেয় তবে তাদেরকে অবগত করাবে যে, আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যদি সেটাও তারা মেনে নেয় তবে তাদেরকে অবগত করাবে যে, আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পদে ছাদাক্বা (জাকাত) ফরজ করেছেন। যা তাদের ধনীদের নিকট থেকে গ্রহণ করা হবে আর দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করা হবে।
কিউএনবি/আয়শা/৩০ অক্টোবর ২০২৫,/বিকাল ৫:৫৩