বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২৭ অপরাহ্ন

কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইসলামি দাওয়াহর গুরুত্ব

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১২ Time View

ধর্ম ডেস্ক : ইসলামী দাওয়াহ বলতে বুঝায়

‘দাওয়াহ’ (الدعوة) শব্দটি এসেছে আরবি “دعا – يدعو – دعوةً” ধাতু থেকে, যার অর্থ ডাকা, আহবান করা, আমন্ত্রন জানানো, নিমন্ত্রন করা, প্রচার করা, প্রার্থনা করা, সাহায্য কামনা করা ইত্যাদি। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো call, invitation, publicity, announcement, preaching etc. The Hanswehr Dictionary of Modern Written Arabic এ দা‘ওয়াহ শব্দের অর্থ করা হয়েছে Missionary activity, Missionary work, Propaganda.

ইসলামী দাওয়াত অর্থ ইসলামের দিকে আহ্বান করা। ইসলামের অগ্রগতির জন্য দাওয়াত অপরিহার্য। কেবল অগ্রগতি নয়; ইসলামী সমাজকে তার ভিত্তির ওপর সঠিকভাবে টিকিয়ে রাখার জন্য ইসলামী দাওয়াত জরুরি। 

পরিভাষায়: কোনো ব্যক্তির নিজস্ব মতবাদ, চিন্তাধারা বা জীবন প্রণালীর দিকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে অন্যকে আহবান করা, সে আহবান মেনে নিতে প্রভাবিত করা, মেনে নেয়ার পর সেটি বাস্তব জীবনে চর্চার দিক নির্দেশনা দানের যাবতীয় প্রচেষ্টাকে দাওয়াহ বলা হয়।

ড. আবদুল খালেক বলেন, কথা ও কাজের মাধ্যমে মানুষকে কোন বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট করাকে দা‘ওয়াহ বলা হয়।
আধুনিক অভিধানগুলোতে যে কোন ধর্ম বা ভাল-মন্দ যে কোন লক্ষ্য অর্জন সম্পর্কিত প্রচার-প্রচারণা অর্থে দাওয়াহ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। ফলে দাওয়াহ যে কোনো মত বা পথের দিকে হতে পারে। ইসলামের দৃষ্টিতে সকল প্রকার দাসত্ব, মত ও পথ পরিহার করে কেবল আল্লাহর দাসত্ব বা গোলামী করার আহবানকে ইসলামী দাওয়াহ বলা হয়।
অন্যকথায় আল্লাহর দীনের প্রচার প্রসারের লক্ষ্যে ইসলামের বিধি-বিধান অন্যের নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য নিজের বাকশক্তি এবং কর্মক্ষমতাকে সার্বিকভাবে প্রয়োগ করাকে ইসলামী দাওয়াহ বলা হয়।
ড. রউফ শালাবীর মতে, দাওয়াহ হলো সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন। যার দ্বারা মানবসমাজকে কুফুরী হতে ঈমানী অবস্থায়, অন্ধকার হতে আলোতে এবং জীবনে সংকীর্ণতা হতে পার্থিব ও পারলৌকিক জীবনের প্রশস্ত অবস্থায় রূপান্তরিত করা হয়।

অতএব, ইসলামী দাওয়াহ বলতে বোঝায়, ‘মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করা, তাওহিদের দিকে ডাকা এবং কুফর, শিরক ও গোমরাহি থেকে মুক্ত করে সৎপথে ফিরিয়ে আনা।’

দাওয়াহর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা কোরআনের আলোকে

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বহু জায়গায় দাওয়াহর নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন,

ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ

“তুমি তোমার প্রভুর পথে আহ্বান কর হিকমত ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে।” (সুরা নাহল, আয়াত: ১২৫)

এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, দাওয়াহ একটি পরিকল্পিত ও জ্ঞানভিত্তিক কাজ– যেখানে হিকমত, যুক্তি ও কোমল উপদেশের প্রয়োগ অপরিহার্য।
আরেক আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,

وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ

“তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল থাকা উচিত যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৪) অর্থাৎ, সমাজে সর্বদা এমন মানুষ থাকতে হবে যারা দাওয়াহর কাজ করবে– অন্যদের কল্যাণ ও সত্যের পথে ডাকবে।

মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ

“যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে আহ্বান করে, তার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে?” (সুরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩৩) দাওয়াহকারী ব্যক্তিকে কুরআন ‘সর্বোত্তম বক্তা’ বলে অভিহিত করেছে।

ইসলামী দা‘ওয়াহ মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া পবিত্র দায়িত্ব। মহান আল্লাহ এ দা‘ওয়াত পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে মানবজাতির নিকট পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

 

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُوْلاً أَنِ اعْبُدُواْ اللهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوْتَ

“আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়ে এ নির্দেশ দিয়েছি যে, আল্লাহর ‘ইবাদাত কর এবং তাগুতকে (খোদাদ্রোহী) বর্জন কর।” (সুরা নাহল, আয়াত: ৩৬)

দাওয়াহর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সুন্নাহর আলোকে

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র জীবন দাওয়াহর কাজে ব্যয় করেছেন। নবুওয়াতের শুরু থেকেই তিনি মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করেছেন, অত্যাচার, নিপীড়ন ও কষ্ট সহ্য করেছেন, কিন্তু দাওয়াহ থেকে বিরত হননি।

তিনি বলেছেন,

 

بلغوا عني ولو آيةً

 

“আমার পক্ষ থেকে পৌঁছে দাও, তা এক আয়াতই হোক।” (সহিহ বুখারি) অর্থাৎ, যে পরিমাণ জ্ঞানই থাকুক না কেন, মুসলমানের দায়িত্ব হলো তা অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
আরেক হাদিসে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

 

من دعا إلى هدى كان له من الأجر مثل أجور من تبعه

 

“যে ব্যক্তি কাউকে হিদায়াতের দিকে আহ্বান করে, তার জন্য তত পুরস্কার থাকবে যতজন তার অনুসরণ করবে।” (সহিহ মুসলিম)
দাওয়াহ শুধু সওয়াব অর্জনের মাধ্যমই নয়, বরং পরকালে চিরস্থায়ী পুরস্কারের কারণ।
দ্বীনের দাওয়াত দিতে হবে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে। প্রথমে তাওহীদের প্রতি মানুষকে আহবান করতে হবে। কেননা ইসলামের মূল ভিত্তি হচ্ছে তাওহীদ। পরে ইসলামের যাবতীয় বিধান সম্পর্কে ছহীহ সুন্নাহর আলোকে মানুষকে দাওয়াত দিতে হবে। হাদিসে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنهما أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم بَعَثَ مُعَاذًا رضى الله عنه إِلَى الْيَمَنِ فَقَالَ ادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَأَنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوْا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللهَ قَدِ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِيْ كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوْا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً فِيْ أَمْوَالِهِمْ، تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ

ইবনু আববাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) মুআয (রা.)-কে ইয়ামান দেশে (শাসক হিসাবে) প্রেরণ করেন। এ সময় তাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘সেখানকার অধিবাসীদেরকে এ সাক্ষ্য দানের প্রতি আহবান জানাবে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রসুল। যদি তারা তা মেনে নেয় তবে তাদেরকে অবগত করাবে যে, আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যদি সেটাও তারা মেনে নেয় তবে তাদেরকে অবগত করাবে যে, আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পদে ছাদাক্বা (জাকাত) ফরজ করেছেন। যা তাদের ধনীদের নিকট থেকে গ্রহণ করা হবে আর দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করা হবে।

ইসলামী দা‘ওয়াত চিরন্তন ও শাশ্বত। এটি ইসলাম প্রচার ও মানবতার কল্যাণের প্রাণশক্তি। নবী-রসুলগণ এই মহান দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে এনেছেন। তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত নিজের জীবনকে দাওয়াহমুখী করা, পরিবারের সদস্য, সমাজ ও জাতিকে ইসলামের পথে আহ্বান করা। কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী পরিচালিত দাওয়াহই পারে বিশ্বে ন্যায়, শান্তি ও মানবতার আলোক ছড়াতে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/৩০ অক্টোবর ২০২৫,/বিকাল ৫:৫৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit