শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২৪ পূর্বাহ্ন

বেনাপোল চেকপোষ্টে কাস্টমস এর অনিয়মের কারনে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৪৪ Time View

মনিরুল ইসলাম মনি : শার্শা(যশোর)সংবাদদাতা : বাংলাদেশে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতের ভিসা জটিলতার কারনে বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে সব ধরনের পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত হ্রাস পেয়েছে। আর সেই সাথে নেমেছে রাজস্ব ধ্বস। এ পথে প্রতিদিন আগে ১০ থেকে ১২ হাজার পাসপোর্ট যাত্রী ভারতে যাতায়াত করত। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারের কমপক্ষে গড় ১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হতো। গত ১ বছরের বেশি সময় থেকে ভারতের ট্যুরিষ্ট ভিসা বন্ধ রয়েছে।

সেই সাথে মেডিকেল ও বিজনেস ভিসাও শিথীল করায় বেনাপোল দিয়ে বর্তমানে পাসপোর্ট যাত্রী প্রায় শুন্যের কোটায় নেমে এসেছে। আবার ভারতীয় পাসপোর্ট যাত্রীদের অধিকাংশ বিজনেস ভিসা থাকলেও তারাও বেনাপোল কাস্টমস এর খামখেয়ালী পনার কারনে বাংলাদেশে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। কাস্টমস স্কানিংয়ের পরও তাদের ব্যাগ খুলে দেখা হয়। ব্যাগের ওজন করা সহ নানান ধরনের টালবাহানা করে কোন এক অদৃশ্য কারনে। আর এসব কাহিনীর জন্য ভারতীয় যাত্রী আসাও অনেক কমে যাওয়ায় রাজস্ব ধ্বস নেমেছে। সে অনুযায়ী ভারতীয় যাত্রী প্রতিদিন যাতায়াত করলে সরকারের ২০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হত।

স্থানীয়দের দাবি এসব প্রতিবন্ধকতা নিরসন করা হলে সরকার একদিকে রাজস্ব পাবে অন্যদিকে বেকারত্বেরও অনেকটা সমাধান হবে। এ ছাড়া বেনাপোল চেকপোষ্ট ল্যাগেজ রুলস ব্যাতিরেকে পাসপোর্ট যাত্রী হয়রানি, স্বজনপ্রীতি উৎকোচ আদায়ের একাধিক অভিযোগ উঠেছে। যদি ল্যাগেজের অতিরিক্ত পণ্য থাকে তবে তা আইন অনুযায়ী ডিএম এর পরিবর্তে স্পট ট্যাক্সের দাবি তুলেছে পাসপোর্টযাত্রীরা। নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামত যাত্রীদের পণ্য আটক কিছু পণ্যর ডিএম স্লিপ আবার অনেক পণ্য স্লিপ বাদে রেখে দেওয়ারও অভিযোগ করেছে পাসপোর্টযাত্রীরা। সে কারনে ভারতীয় ভিসা জটিলতায় পাসপোর্ট যাত্রী হৃাস পাওয়ায় সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হৃাস পেয়েছে।

সরকারী বিধি মতে পাসপোর্ট যাত্রীরা বছরে একবার একটি মোবাইল ফোন আনতে পারবেন। যদি কোন যাত্রী বিদেশে ৬ মাস থাকে সে ক্ষেত্রে ওই যাত্রী শুল্ক বাদে ২টি মোবাইল আনতে পারবেন। এবং একজন যাত্রী বছরে ১০০ গ্রাম স্বর্ণ এবং ২০০ গ্রাম ওজনের রৌপ্য আনতে পারবেন। এছাড়া ল্যাপটপ একটি, ২৯ ইঞ্চি টেলিভিশন একটি, একটি ডেস্কটপ, স্ক্যানার প্রিন্টার, ভিডিও ক্যামেরা, ডিজিটাল ক্যামেরা, রাইস কুকার, মাইক্রোওয়েভ ও প্রেসার কুকার আনতে পারবে। ১২ বছর বা তার বেশী একজন যাত্রী ৬৫ কেজি ওজনের ব্যাগেজ শুল্কমুক্তভাবে আনতে পারবেন আর ১২ বছরের কম বয়সী যাত্রী ৪০ কেজি পর্যন্ত মালামাল আনতে পারবেন।

অভিযোগ রয়েছে ভারতীয় ও কিছু পাসপোর্ট যাত্রী বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর তাদের একটি মাত্র শাড়ী রেখে দিয়েছে। আর এসব যাত্রীরা তাদের ওই একটি শাড়ি ও কিছু ফল কাস্টমস রেখে দেওয়ায় দাঁড়িয়ে আছে সকাল ৮ টা থেকে বেলা ১ টা পর্যন্ত। তাদের পণ্য রেখে দিয়ে কাউকে ১ টা শাড়ীর স্লিপ দিয়ে কাউকে পরে তাদের আনিত পণ্য ফেরত দিয়ে দিবে এ আশ্বাসে ৫ ঘন্টা দাঁড়িয়ে রাখে স্কানিং মেশিন রুমের বাইরে। আর নারী পুরুষ যাত্রীরা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আবার অনেকে অভিযোগ করেছে তাদের পাসপোর্ট ও আটকে রেখেছে কাস্টমস সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এর এ আরও) সিরাজুল ইসলাম।

এ ব্যাপারে পাসপোর্ট যাত্রী অনিমা ঘোষ বলেন, আমি একটি শাড়ী ও ৫ কেজি ফল নিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। কিন্তু কাস্টমস তা রেখে দিয়েছে সকাল ৮ টার সময়। এখন বেলা ১ টা বাজে আমাকে ফল ও শাড়ী ফেরত দেয়নি। আমার মত এখানে প্রায় ভারত থেকে আসা বাংলাদেশী ও ভারতীয় যাত্রী ৪০ জন এর মত পাসপোর্ট যাত্রী দাঁড়িয়ে আছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতীয় পাসপোর্ট যাত্রী বলেন, আমার কাছে একটি মাত্র শাড়ি ছিল তা কাস্টমস ডিএম করে আমার হাতে স্লিপ ধরিয়ে দিয়েছে। আমি ওই শাড়ি কাস্টমস হাউস থেকে ছাড় করাতে জরিমানা দিতে হবে বলে কাস্টমস সুত্র জানায়। এরপর আবার টেবিল খরচ ও ভ্যাট আছে। আমার শাড়ির দাম ভারতীয় রুপীর মাত্র ৭০০ টাকায় ক্রয় করা যা বাংলাদেশী টাকায় আসে ১০০০ টাকা। আর ওই শাড়ি ছাড় করাতে গেলে লাগবে ৫ হাজারের উপরে।

ভারতীয় পাসপোর্ট যাত্রী ওয়াসীম রাজা বলেন, বাংলাদেশে আসার মত অবস্থা নেই। কাস্টমস এর হয়রানি চরমে উঠেছে। এর চেয়ে দুই দেশে যাত্রী আসা যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ। তবে আমাদের দাবি আমরা বাংলাদেশে প্রবেশ করলে যদি মনে হয় আমাদের সাথে থাকা কোন পণ্য বেশী আছে সে পণ্য স্পট ট্যাক্স নিলে আমরা সরকারী নিয়ম অনুযায়ি দিব।

বাংলাদেশ ও ভারতীয় পাসপোর্ট যাত্রীরা দাবি করে তাদের আনিত কোন পণ্য যদি ল্যাগেজ বহির্ভুত হয় তবে তা কাস্টমস স্পট ট্যাক্স নিয়ে ছেড়ে দিলে আমাদের কোন আপত্তি নাই। যাত্রীদের দাবি সমর্থন করে বেনাপোল চেকপোষ্ট ব্যাবসায়ি সমিতির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সোবহান বলেন যদি কাস্টমস স্পট ট্যাস্ক নেয় তাহলে দেশে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পায়। আমরাও চাই কাস্টমস স্পট ট্যাক্স নিয়ে ভারতীয় কিছু পণ্য যা বাংলাদেশে উৎপাদন হয়না সে সব পণ্য ট্যাক্স নিযে রাজস্ব খাতে উন্নয়ন আসুক। সে আরো জানায় কাস্টমস যে সব পণ্য ডিএম করে তা যাত্রীরা কাস্টমস থেকে ছাড় করিয়ে না নেওয়ায় অনেক পণ্য পচে যাচ্ছে। কাস্টমস হাউস থেকে পণ্য ছাড় করাতে গেলে ৩০০% জরিমানা দিতে হয়। এবং ফাইল খুলতে গেলে ৩,৫০০ টাকা লাগে। এর জন্য যাত্রীরা তাদের পণ্য না নেওয়ায় সিন্ডিকেটের মাধ্যেমে নিলামে অর্ধেক টাকায় বিক্রি হওয়ায় সরকার বড় ধরনের রাজস্ব হারাচ্ছে।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসে জায়গা সংকটের কারনে চেকপোষ্ট কাস্টমস এর গেষ্ট রুম সুপার এর রুম সহ বারান্দায় এসব পাসপোর্ট যাত্রীদের পণ্য রাখায় দেশের ভাবমুর্তিও ক্ষুন্ন হচ্ছে। কারন এ পথে প্রতিদিন দেশী বিদেশী শত শত যাত্রী ভারত বাংলাদেশ আসা যাওয়া করে। বেনাপোল সোনালী ব্যাংকে খোজ নিয়ে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে যে রাজস্ব আদায় হয়েছে পাসপোর্ট যাত্রীদের নিকট থেকে তা নেমে আগষ্ট মাসে অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে। মনে হয় সেপ্টেম্বরে আরো কমে যাবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেনাপোল চেকপোষ্ট কাস্টমস সুপার নাজমুল সিরাজীর কাছে একটি শাড়ী ডিএম করার নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন না একটি শাড়ি কোন যাত্রী আনলে তা ডিএম হবে না। তবে আজ কেন ১ টা শাড়ী ভারতীয় যাত্রীর নিকট থেকে ডিএম হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা করার কথা না। তবে যদি কোন অফিসার করে থাকে তবে সে ভুল করেছে । পরবর্তীতের যাতে একটি শাড়ী ডিএম না হয় সেদিকে আমরা খেয়াল রাখব।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, /রাত ১১:১২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit