জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি : তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ দ্রুত শুরু করার দাবিতে আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে উত্তরাঞ্চল। ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক, সাবেক উপমন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, অবিলম্বে মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে রংপুর বিভাগকে অচল ও স্তব্ধ করে দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার(১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলা- লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার ১১টি পয়েন্টে একযোগে তিস্তা নদীর ১০৫ কিলোমিটার জুড়ে মশাল প্রজ্জ্বলন কর্মসূচির উদ্বোধনকালে তিনি এই ঘোষণা দেন। লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহণে এই কর্মসূচি পালিত হয়।অধ্যক্ষ দুলু বলেন, তিস্তা শুধু উত্তরাঞ্চলের নয়, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। জনগণ তিস্তার ন্যায্য অধিকার আদায়ে রাস্তায় নেমেছে। তিস্তা সমস্যা কোনো স্থানীয় ইস্যু নয়, এটি একটি জাতীয় সমস্যা।
তিস্তার দীর্ঘ ১৩০ কিলোমিটার প্রবাহিত তিস্তা নদী রক্ষায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। দুলু অভিযোগ করেন, দীর্ঘ ষোল বছরের “ফ্যাসিবাদী শাসন” রংপুরের মানুষের বুকের ভিতরে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আছে। তিনি আরও দাবি করেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে এবং সরকারের ধীরগতির কারণে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “তিস্তা মেগা পরিকল্পনার বিপক্ষে যারা দাঁড়াবে, তারা জাতীয় শত্রুতে পরিণত হবেন।” তিনি সরকারকে নভেম্বরের মধ্যেই মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করার অনুরোধ জানান এবং জাতীয় নির্বাচনের তিন মাস আগে এই মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করে দেওয়ার দাবি জানান।যদি সময়মতো কাজ শুরু না হয়, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে রংপুর বিভাগ অচল ও স্তব্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি।
আন্দোলন সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাসে তিস্তার ভাঙন ও চর উত্থানের ফলে লক্ষাধিক মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষিজমি বিলীন হচ্ছে, বাড়িঘর ভাঙছে এবং পরিবেশগত ক্ষতি হচ্ছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিনের অবহেলায় তিস্তার বুকে অসংখ্য চর জেগে উঠেছে, যা লাখো মানুষের জীবনে চরম দুর্ভোগ নামিয়ে এনেছে।এর আগে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের পক্ষ থেকে লালমনিরহাটে গণমিছিল, গণসমাবেশ, পদযাত্রা ও স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। মশাল প্রজ্জ্বলন কর্মসূচিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, ছাত্র ও যুব সমাজের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। তাদের স্লোগান ছিল— “জাগো বাহে তিস্তা বাঁচই, তিস্তার ন্যায্য হিস্যা চাই।”
অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, নদী রক্ষায় জনগণের এই ঐক্যবদ্ধ অবস্থান প্রমাণ করে যে তিস্তা ইস্যুটি এখন আর কেবল পরিবেশগত বা অর্থনৈতিক বিষয় নয়, এটি উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন। তিনি সতর্ক করে দেন, এই অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ নেমে আসার আগেই সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের মানুষ খাদ্যের জন্য রাজধানী অভিমুখে লংমার্চ করতে বাধ্য হবে।এ সময় উপস্থিত ছিলেন রংপুর বিভাগের তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলন কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম হাক্কানী, তিস্তা নদীর রক্ষা আন্দোলনের লালমনিহাট জেলার সমন্বয়ক এ কে এম মমিনুল হক, আফজাল হোসেন, বাসার সুমন, সায়েদুল ইসলাম পাটোয়ারী সাজু, এবিএম ফারু সিদ্দিকী সহ লক্ষাদিক মানুষ।
কিউএনবি/অনিমা/১৬ অক্টোবর ২০২৫,/রাত ৯:১৫