আলমগীর মানিক,রাঙামাটি : রাঙামাটি শহরে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে চাঁদাবাজ চক্র। সম্প্রতি আঞ্চলিকদলের নাম ভাঙিয়ে ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ব্যাপকহারে চাঁদা দাবি করছে একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ।স্থানীয় ব্যবসায়ী মহল ও একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, কখনো তারা জেএসএস, জেএসএস সংস্কার, কখনো ইউপিডিএফ কিংবা ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক পরিচয়ে যোগাযোগ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবি করছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চক্রটি মোবাইল ফোন কিংবা সরাসরি দূত পাঠিয়ে কোটি টাকার চাঁদা দাবির পাশাপাশি চাহিদা পূরণ না করলে নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে। এতে ব্যবসায়ী ও ঠিকাদাররা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
রাঙামাটির বেশ কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “প্রতিদিনই ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করে তারা টাকা দাবি করছে। টাকা না দিলে ব্যবসা চালানো কঠিন হয়ে পড়বে বলে হুমকি দিচ্ছে। আমরা আতঙ্কে আছি, প্রকাশ্যে কিছু বলতে সাহস পাই না।”এছাড়াও বিদেশী একটি সংস্থার অর্থায়নে রাঙামাটি শহরে চলমান একটি প্রকল্পের নির্মাণ সাইটে মাইক্রোযোগে এসে সম্প্রতি ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে আঞ্চলিকদলীয় সন্ত্রাসীরা। শহরের দোয়েল চত্বরেই এই ঘটনা ঘটে।
এদিকে, চাঁদাবাজি কে কা কাহারা করছে বা দাবি করছে সেই বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ কেউ করেনি বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন রাঙামাটি কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সাহেদ উদ্দিন।তিনি বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো। এছাড়া আদৌ এসব চাঁদাবাজির সাথে কে বা কাহারা জড়িত আদৌ ঘটনাগুলো সত্য কিনা সেটিও আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি।অপরদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে নিজেদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ মাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী উপজাতীয়দের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ইউপিডিএফ।
রাঙামাটিতে চাঁদা দাবির বিষয়টি স্বীকার করে নিজেদের প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি উল্লেখ করে “ইউপিডিএফের সাধারণ সম্পাদকের নাম দিয়ে চাঁদাবাজি সম্পর্কে সতর্ক থাকুন”ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সাধারণ সম্পাদক রবি শংকর চাকমা ও সংগঠক “অর্কিড” পরিচয় দিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি রাঙামাটি শহরের ব্যবসায়ী ও চাকুরীজীবীসহ অনেকের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করছে, যা ইউপিডিএফের গোচরীভূত হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি।ইউপিডিএফের মুখপাত্র অংগ্য মারমা শনিবার (২৩ আগস্ট ২০২৫) এক বিবৃতিতে বলেন, “গত কয়েকদিন ধরে কতিপয় অজ্ঞাত ব্যক্তি নিজেদেরকে ইউপিডিএফের সাধারণ সম্পাদক রবি শংকর চাকমা পরিচয় দিয়ে মোবাইল নম্বর ০১৮৬৩৯১০২১, ০১৮৪৬৮৯৪৫০৮ ও ০১৫৭৫৬৪৬১৩৩ থেকে পাহাড়ি-বাঙালি ব্যবসায়ী ও চাকুরীজীবীসহ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করছে।
“একইভাবে ০১৮৫৮০৩৯৬১৩ ও ০১৮৮৮২৩২৫৯১ নম্বর থেকেও “ইউপিডিএফের নেতা অর্কিড” পরিচয় দিয়ে এবং ০১৮৬৭৫৭০৩২৩ নম্বর থেকে ইউপিডিএফের বিভিন্ন নেতার নাম দিয়ে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে।”ইউপিডিএফের সাধারণ সম্পাদক রবি শংকর চাকমার নাম দিয়ে চাঁদা দাবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে মন্তব্য করে অংগ্য মারমা বলেন, “পার্টিতে তিনি আর্থিক বিষয়াদির সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট নন। অপরদিকে ইউপিডিএফের সদস্য তালিকায় “অর্কিড” নামে কেউ নেই।” রবি শংকর চাকমা তথা পার্টির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে এভাবে লোকজনের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে বলে ইউপিডিএফ নেতা মনে করেন এবং তার বা অন্য কোন ইউপিডিএফ নেতার পরিচয় দিয়ে কেউ চাঁদা দাবি করলে তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি অবৈধ চাঁদা দাবিকারীর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের শরাণাপন্ন হতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেন।
রাঙামাটির সচেতন মহল মনে করছে, দ্রুত এসব চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ নষ্ট হয়ে পড়বে এবং বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হবেন। ব্যবসায়ী সমাজ প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে এ ধরনের চাঁদাবাজ চক্রকে শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হোক, যাতে সাধারণ ব্যবসায়ীরা নিরাপদে কাজ করতে পারেন।
কিউএনবি/অনিমা/২৪ আগস্ট ২০২৫/দুপুর ১:১৮