তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ এবং নারী থেকে। তারপর বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি এবং গোত্রে, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হতে পারো’ (সুরা আল হুজুরাত)। পৃথিবীর আদিম সেই পরিবার স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন স্বামী-স্ত্রী, মা-বাবা, ভাই-বোন, দাদা-দাদি, এমনকি নিকটাত্মীয় পর্যন্ত পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের একে অপরের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য, স্নেহ-ভালোবাসা পারিবারিক সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্বশীল এবং সবাই তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’ প্রত্যেকে তার পরিবারে দায়িত্বশীল তাই সবাইকে শেষ বিচারের দিনে জবাবদিহি করতে হবে।
স্বামীর প্রতি স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য: পরিবারে স্বামী-স্ত্রী কারও অবদানই কম বা বেশি নয়। পারিবারিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে একজনের নেতৃত্ব প্রয়োজন। তাই স্ত্রী হিসেবে উচিত স্বামীর নেতৃত্ব মেনে চলা, তার সম্পদ সংরক্ষণ করা, নামাজ আদায় ও সতীত্বের হেফাজত করা এবং পরিবারের যাবতীয় বিষয় তত্ত্বাবধান করা। সর্বোপরি আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করা।
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য: পিতা-মাতা সন্তানের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ নেয়ামত। সন্তান লালন-পালনের কষ্টের কারণে ইসলামে পিতা-মাতাকে এত বেশি মর্যাদা দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহতায়ালা তাঁর ইবাদতের পরই পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য পালনকে আবশ্যক করে দিয়েছেন। পিতা-মাতার ভরণপোষণ এবং তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার জন্য স্বয়ং আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি মানুষকে পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি’ (সুরা লোকমান)।
তারা বার্ধক্যে উপনীত হলে বিশেষভাবে সেবা-যত্ন করার ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাদের একজন অথবা উভয়ই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের উফ বলো না এবং তাদের ধমক দিও না’ (সুরা বনি ইসরাইল)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘তার নাক ধূলোয় ধূসরিত হোক যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়কে বা তাদের একজনকে পেল অথচ তাদের সেবা-যত্ন করার বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না।’ পিতা-মাতার জন্য সন্তান-সন্তানাদি কীভাবে দোয়া করবেন, তাও আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন সুরা বনি ইসরাইলের এক আয়াতে। সন্তানরা বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক, তাদের ওপর রহম করো যেমন শিশুকালে তারা আমাকে লালন-পালন করেছিল।’
সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য: পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের যেমন কিছু দায়িত্ব, কর্তব্য রয়েছে- তেমনি সন্তানের প্রতিও পিতা-মাতার দায়িত্ব রয়েছে। সন্তানদের ভরণপোষণ ও দ্বীনি শিক্ষা দেওয়া এর মধ্যে অন্যতম। নবি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের সন্তানদের বয়স যখন সাত বছর হয় তখন তাদের নামাজের আদেশ করো, আর দশ বছরে নামাজের তাগিদ দেবে এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দেবে।’ পিতা হিসেবে সন্তানকে লোকমান (আ.) কি উপদেশ দিয়েছিলেন তা পবিত্র কোরআন এসেছে। তিনি বলেছিলেন, ‘হে বৎস, নামাজ কায়েম করো, সৎকাজের আদেশ দাও মন্দ কাজ নিষেধ করো এবং বিপদে সবর করো নিশ্চয়ই এটি দৃঢ়তার কাজ’ (সুরা লোকমান, আয়াত, ১৭)
আত্মীয়স্বজনের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য: রক্ত সম্পর্কীয় সবচেয়ে কাছের মানুষ ভাই-বোন। পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে একে অপরকে সম্মান ও স্নেহ করা, অন্যায়, অবিচার না করে পারস্পরিক হক আদায় করা। আল্লাহতায়ালা সুরা বনি ইসরাইলে বলেন, ‘তুমি আত্মীয়স্বজনদের তাদের প্রাপ্য প্রদান কর।’ কোনো অবস্থাতেই কেউ কাউকে পরিত্যাগ করা উচিত নয়। অন্য সুরায় আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যে সম্পদ ব্যয় কর তা পিতা-মাতা ও আত্মীয়দের জন্য করো।’
আয়শা/৯ আগস্ট ২০২৫/রাত ১০:২২