সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০২:১৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
‎কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে শ্যামাপূজায় লালমনিরহাট সীমান্তে দুই বাংলার আবেগাপ্লুত পুনর্মিলন লালপুরে তিন দফা দাবি আদায়ে  শিক্ষকদের বিক্ষোভ মিছিল আইসিসির বিবৃতি নিয়ে আপত্তি পাকিস্তানের ‎কালীগঞ্জে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হয়রানি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ জয়পুরহাট চিনিকলের অবসরপ্রাপ্ত  শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মানববন্ধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন জয়পুরহাটে তিন দফা দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতিবাদ সমাবেশ ভারতকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড মেঘনায় জেলেদের হামলায় মৎস্য কর্মকর্তাসহ আহত ১৫ দুধ দিয়ে গোসল কি কোনো রীতি? হাসিনাকে নিয়ে ‘চাঞ্চল্যকর তথ্য’ ফাঁস করলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা

‎কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে শ্যামাপূজায় লালমনিরহাট সীমান্তে দুই বাংলার আবেগাপ্লুত পুনর্মিলন

জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি ।
  • Update Time : সোমবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৫ Time View

‎জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, ‎​লালমনিরহাট প্রতিনিধি : ‎লালমনিরহাট সীমান্তে জারিধরলার শ্যামা মন্দিরের পুজোয় দু’দেশের মানুষের মিলন মেলা বসেছে। এ পূজোয় পুরোহিত বাংলাদেশের আর পূজারী ভারতের হয়ে থাকে। ‎​রবিবার (১৯ অক্টোবর) দিনব্যাপী শ্যামা পুজা বা ‘বুড়ির মেলা’ উপলক্ষে আজ লালমনিরহাট সীমান্ত ছিল একেবারে উন্মুক্ত। ২০০৮ সালের পর এই প্রথম দুই দেশের মানুষ বিনা পাসপোর্ট, বিনা ভিসায় অবাধে মেলায় অংশ নিয়েছে।

‎​মেলা হতে ফিরে আসা যুবক শ্রী হৃদয় কুমার (৪৫) জানান, মেলায় দুই বোনকে একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে দেখা যায়। প্রায় দুই যুগ পর আবার দেখা দুই বোনের— বাংলাদেশের শুসিলা রানী (৬০) এবং ভারত হতে নিয়তি রানী (৫৮) এসেছেন মেলায়। এই মেলা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দুই সপ্তাহ ধরে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা করেছে প্রভাবশালী মহল।
‎​

লালমনিরহাটের দুর্গাপুর ও মোগলহাট সীমান্তে ধরলা নদীর পাড়ে ৯২৭ নম্বর সীমান্ত পিলারের কাছে রবিবার দিনভর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত মিলন মেলায় দেখা হয় তাদের। একে অপরকে দেখার পর দশ-পনের মিনিট ধরে কেবল কান্না, আর কান্না। চোখের জল বলে দেয় কতটা প্রশান্তি ছিল এই মিলনে। ‎​বড় বোন বাংলাদেশের শুসিলা রানী এনেছিলেন মিষ্টি, ইলিশ মাছ আর টাঙ্গাইলের শাড়ি। ছোট বোন নিয়তি রানী ভারত থেকে এনেছিলেন মিষ্টি, মসলা ও ভারতের প্রিন্ট শাড়ি এবং জামদানী শাড়ি। উপহার বিনিময়ের সময়ও দুই বোনের চোখে অশ্রু ঝরেছে অনর্গল।
‎​

বাংলাদেশের শুসিলা রাণী কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, “প্রায় ২৪ বছর থাকি বোনের সাথে মোর দেখা স্বাক্ষাত হয় না। ২০০৯ সালের পর মোবাইল ফোনে কথা হয়। তাতে মন ভরে না। ২০২১ সালের পর ভিডিও কলে কথা হয়। ভিডিও কলোত কথা বলার সময় বুকটা ফেটে যায়। বুড়ির মেলাত আসি বোনের দেখা পেয়া মনটা জুড়ি গ্যালো।”

‎​বাংলাদেশের আদিতমারী উপজেলার দেওডোবা গ্রামের শুসিলা রানী এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার গিদালদহ গ্রামের নিয়তি রানী। নিয়তি রানী জানান, প্রায় ৩৫ বছর আগে তিনি ভারতে চলে আসেন। মা-বাবাকে রেখে এসেছিলেন, তারা মারা গেছেন— দেখতে পাননি। এখন বাংলাদেশে শুধু দিদি বেঁচে আছেন। এমন হাজার পরিবারের গল্প বুনেছে এই মেলায়।
‎​

প্রতি বছরই ধরলা নদীপাড়ে সীমান্তের কোলঘেঁষে ভারতের কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার দড়িবাস এলাকায় শ্রী শ্রী মা বৃদ্ধেশ্বরী দেবীর পূজা উপলক্ষে বসে এই সীমান্ত মেলা। স্বাধীনতার আগে থেকে পূজা ও মিলন মেলা একসাথে চলছে এখানে। ১৯৯২ সালে কড়াকড়ির কারণে বাংলাদেশ হতে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। এ বছর পুনরায় উন্মুক্ত হয়ে গেছে।

‎​একটি সূত্র বলছে, এ বছর এই পূজার বিশেষত্ব— মন্দিরের পুরোহিত আসেন বাংলাদেশ থেকে আর পূজারী ভারতের। দুই দেশের মানুষ একসাথে পূজা দেন, একসাথে প্রসাদ খান, আর একদিনের জন্য হলেও ভুলে যান সীমান্ত রেখার বিভাজন। বাংলাদেশের পুরোহিত বিকাশ চন্দ্র চক্রবর্তী এবং ভারতের পূজারী জ্যোতিষ চন্দ্র রায় জানান, এই আয়োজন সম্প্রীতির প্রতীক। দুই দেশের ভক্তরা মিলেই মন্দির পরিচালনা করেন। রবিবার দিনভর পূজা উপলক্ষে মিলন মেলায় ২০-২৫ হাজারের বেশি ভক্ত ও দর্শনার্থী সমবেত হন। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি মেলায়।

‎​মেলায় শুধু লালমনিরহাট নয়, রংপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রাম সহ দেশের নানা জেলা হতে মানুষ এসেছে। শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয়, মুসলিম, খৃষ্টান সহ নানা সম্প্রদায়ের মানুষ আসে। কারণ দেশভাগের কারণে ভাগ হয়ে যাওয়া স্বজনরা এই মেলায় একত্রিত হতে পারে। এখানে এসে আত্মীয়দের বুকে জড়িয়ে ধরেছে। সীমান্তের এই মেলায় কাঁদে সবাই, কিন্তু সেই কান্নায় থাকে আনন্দের সুর— এটা সীমান্ত পেরোনো প্রেমের এক অফুরন্ত চিত্র।

‎কিউএনবি/আয়শা/২০ অক্টোবর ২০২৫,/রাত ২:০০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit