সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫, ০২:২৬ অপরাহ্ন

গাজীপুরে ৭ মাসে ১০১ খুন..

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৪ আগস্ট, ২০২৫
  • ৬ Time View

 নিউজ ডেক্সঃ  পারিবারিক কলহ, পরকীয়া, জমিসংক্রান্ত বিরোধ, ছিনতাই ও পূর্বশত্রুতার জেরসহ নানা কারণে গাজীপুরে হত্যা-খুন বেড়েছে। এ ছাড়া জেলায় ভাসমান মানুষের সংখ্যার পাশাপাশি বিভিন্ন বাসাবাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছেন পোশাক শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। জনসংখ্যার তুলনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপ্রতুলতা, ঘন শাল-গজারি বেষ্টিত বন,-জঙ্গল থাকায় অপরাধীরা সহজেই তাদের মিশন বাস্তবায়ন করতে এ জেলাকে বেছে নেন। এ অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের মরদেহ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডের প্রতিটি ঘটনা গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের পাশাপাশি অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রোববার (৩ আগস্ট) ভোরে গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা ইউনিয়নের ইদ্রবপুর গ্রামে স্বামীর বিরুদ্ধে ঘর তালাবদ্ধ করে আগুন লাগিয়ে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর অভিযুক্ত স্বামী পালিয়ে যান। নিহত পোশাক শ্রমিক মারুফা আক্তার (৪৫) উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের ইদ্রবপুর গ্রামের মো. মিজানুর রহমানের স্ত্রী। তিনি স্থানীয় মোশাররফ স্পিনিং মিলস শ্রমিকের কাজ করতেন।

এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, আনুমানিক রাত আড়াইটার দিকে স্ত্রীকে হত্যার পর দুটি থাকার ঘর ও মূল ফটক তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায় ঘাতক স্বামী। এ বিষয়ে মামলা দায়ের ও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।

এর আগে, গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার বরিষাব ইউনিয়নের কীর্তনিয়া গ্রামে ছুরিকাঘাতে স্কুল দপ্তরি আরিফ হোসেন (৩২), কালীগঞ্জ বাইপাস সড়কের মূলগাঁওয়ে ছিনতাইকারীর হাতে অটোচালক আনোয়ার হোসেন (৫৫) এবং গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়িতে কারখানার কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম (৪৮) খুন হন। গত ২০ জুলাই একইদিনে এই তিনটি খুনের ঘটনা ঘটে। ঢাকার পাশের শিল্পনগর গাজীপুর জেলার পাঁচটি উপজেলা ও মহানগরে এভাবেই অহরহ খুনের ঘটনা ঘটছে।

পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে গাজীপুর জেলা ও মহানগরে ১০১টি হত্যা মামলা করা হয়েছে। তার মধ্যে জেলার পাঁচটি থানায় ৬০টি এবং গাজীপুর মহানগরীতে ৪১টি হত্যা মামলা করা হয়। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, পারিবারিক বিরোধ, পরকীয়া প্রেম, মাদক কারবার নিয়ে বিরোধেই ঘটেছে বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ড।

এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার আসফাকুজ্জামান বলেন, গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত জেলার পাঁচটি থানায় ৬০টি হত্যা মামলা করা হয়েছে। তার মধ্যে ৪৮টি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পেরেছে পুলিশ। এসব ঘটনার পর গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫২ জন আসামি।

তিনি বলেন, হত্যা মামলার পর তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন, জমি জমা সংক্রান্ত পারিবারিক বিরোধ, পরকীয়া প্রেম, মাদক কারবারকে কেন্দ্র করে বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এসব ঘটনায় পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে অপরাধীদের ধরতে কাজ করছে।

এদিকে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উত্তর বিভাগের উপকমিশনার মো. রবিউল ইসলাম জানান, মহানগরে সংঘটিত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পেছনে ভিন্ন ভিন্ন কারণ রয়েছে। তবে মূল কারণ হচ্ছে একজন অপরজনকে দমানো। প্রতিটি ঘটনা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিরোধের জেরে খুনের ঘটনা ঘটেছে।

বিভিন্ন ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গণপিটুনিতেও গাজীপুরে হত্যাকাণ্ড বাড়ছে। গত ১৮ জুলাই জেলার কাপাসিয়ার সেলদিয়া গ্রামে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে দিনদুপুরে পিটিয়ে হত্যা করা হয় মো. শাহজাহানের ছেলে মো. নূরুল ইসলামকে। গত ২৭ জুন রাতে গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়িতে গ্রীনল্যান্ড গার্মেন্টসের ভেতর চোর সন্দেহে মেকানিক মো. হৃদয়কে (১৯) হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ধরনের ঘটনায় মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘন হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষকরা।

জেলায় ছিনতাইকারীদের হামলায়ও হত্যাকাণ্ড হয়েছে। বিশেষ করে টঙ্গী অঞ্চলে ছিনতাইয়ের ঘটনায় হতাহত বেড়েছে। গত ১১ জুলাই রাতে টঙ্গীর সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের সামনে ছিনতাইকারীর হামলায় খুন হন কলেজ শিক্ষার্থী মো. মাহফুজুর রহমান। তিনি বরিশালের সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি টঙ্গীতে একটি ভাড়া বাসায় থেকে একটি কারখানায় চাকরি করতেন। ঘটনার রাত সাড়ে ১২টার দিকে টঙ্গীর সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের সামনে পৌঁছলে একদল ছিনতাইকারী মাহফুজুরের পথ রোধ করে তার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিতে চায়। মাহফুজুর সেগুলো দিতে অস্বীকৃতি জানালে ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে। পরে আহত অবস্থায় তাকে টঙ্গী হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সম্প্রতি টঙ্গী স্টেশন রোড, বাটা গেট ও বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ছিনতাইকারীদের অপতৎপরতা বেড়েছে। গত ১৭ মে টঙ্গী ফ্লাইওভারে ছিনতাইকারীর হাতে খুন হন রঞ্জ (৩০) নামের এক যুবক। তিনি পাবনা জেলার মজিদপুরের শামসুল হক খানের ছেলে। টঙ্গীর সাতাইশের নাজমা সিকদারের বাড়িতে ভাড়া থেকে ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন তিনি। ঘটনার রাত ১২টায় কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। টঙ্গী বাটা গেটে পৌঁছলে ছিনতাইকারীরা তার মোটরসাইকেলের গতি রোধ করে। ওই সময় ছিনতাইকারীদের সঙ্গে রঞ্জুর ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করলে গুরুতর আহত হন রঞ্জু। স্থানীয় লোকজন আহত রঞ্জুকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি থানার জরুন এলাকার বৃদ্ধ নাসির পালোয়ানের (৯০) কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে আসছিলেন স্থানীয় কিশোর গ্যাং লিডার ওয়াসিফ সালিম। গত ২৭ মে রাত সাড়ে ১১টায় তার নেতৃত্বে ওই বৃদ্ধের বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা ও লুটপাট চালায় কিশোর গ্যাং সদস্যরা। হামলায় নাসির পালোয়ানসহ পরিবারের ছয়জন আহত হন। দায়ের কোপে নাসির পালোয়ানের মাথার খুলি ১৮ টুকরো করে দুর্বৃত্তরা। লাইফ সাপোর্টে থাকার পর গত ২ জুলাই নাসির মারা যান। এ ঘটনায় কিশোর গ্যাং লিডার ওয়াসিফ সালিমকে (২২) প্রধান আসামি করে কোনাবাড়ি থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।

নাসির পালোয়ানের ছেলে মামলার বাদী শাহ আলম পালোয়ান জানান, চাঁদা না দেওয়ায় কিশোর গ্যাং সদস্যরা দায়ের কোপে তার বাবার মাথার খুলি ১৮ টুকরা করে। অস্ত্রোপচারের পর প্রথমে আইসিইউতে এবং পরে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছিল তার বাবাকে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এপিপি আব্দুল আলীম বলেন, দুর্বল পারিবারিক বন্ধন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক অবক্ষয়, স্বার্থপরতা, মাদকাসক্তিসহ বিভিন্ন কারণে গাজীপুরে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে মামলা দায়ের হলেও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে সময় লাগে।

অনলাইন নিউজ ডেক্সঃ

কুইক এন ভি /রাজ/৪আগস্ট ২০২৫/দুপুরঃ ০২.২০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

August 2025
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit