শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:১৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
ঢাবি শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে সংস্কারকৃত মসজিদ ও ডিজিটাল সাইকেল গ্যারেজ উদ্বোধন ধনশ্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলেন চাহাল নরসিংদীতে আগ্নেয়াস্ত্র ও ককটেল উদ্ধার বাফুফের অনূর্ধ্ব-২৩ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ক্যাম্পে প্রবাসী ফুটবলার একজন মালয়েশিয়া যেতে আগ্রহীদের সতর্ক করলো হাইকমিশন মুখের দুর্গন্ধ এড়াতে যা করবেন ভারতের চেয়ে কম শুল্ক আরোপ, রপ্তানিতে সুবিধাজনক অবস্থানে বাংলাদেশ ৫ আগস্টের মধ্যে শহীদ ও আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে: জোনায়েদ সাকি ইনস্টাতে সালমানের রহস্যময় পোস্ট ঘিরে নতুন জল্পনা দাপুটে জয়ে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই ফাইনালে যুবারা

পাহাড়ে আধুনিক শিক্ষাবঞ্চিতদের জন্য স্যাটেলাইট এডুকেশন সিস্টেম চালু করবো; উপদেষ্টা সুপ্রদীপ

আলমগীর মানিক,রাঙামাটি
  • Update Time : শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০২৫
  • ৩১ Time View

আলমগীর মানিক,রাঙামাটি : আয়তন ও জনসংখ্যার তুলনায় নানান প্রেক্ষাপটে অনাদিকাল থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত সীমিত সংখ্যায় গড়ে উঠেছে। পাহাড়ি জনপদে শিক্ষার চাহিদা দিন দিন বাড়লেও প্রয়োজনীয় শিক্ষা অবকাঠামো ও আধুনিক ব্যবস্থাপনার ঘাটতি আজও প্রকট।পার্বত্য চুক্তির পরবর্তী সময়ে সচেতন মানুষজন নিজস্ব উদ্যোগে কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেও সেসব প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ এখনো সরকারীকরণের আওতায় আসেনি। তদুপরি, এসব প্রতিষ্ঠানকে সরকারের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় আনা হয়নি, ফলে অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষাসামগ্রী ও প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার ছোঁয়া লাগেনি। প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ, পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, তথ্যপ্রযুক্তি ল্যাব ও বিজ্ঞানাগারের অভাব শিক্ষার মানোন্নয়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় রাঙামাটির মাধ্যমিক লেভেলের প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থী বঞ্চিত হচ্ছে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে।

বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপকালে জানিয়েছেন, পার্বত্য এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে অত্রাঞ্চলে কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিতে কাজ করছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়।তারই ধারাবাহিকতায় আগামী ৫ মাসের মধ্যেই পার্বত্য এলাকায় অন্তত একশোটি স্কুলকে আমরা ডিজিটালাইজ করবো। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকে দিয়ে আমি এসব স্কুলগুলোকে ওপেন করাবো এবং প্রধান উপদেষ্টা নিজে উক্ত স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদের সাথে প্রযুক্তির সহায়তায় সরাসরি কথা বলবেন। পাহাড়ে পড়ালেখার মান বাড়াতে তথা কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিতের লক্ষ্যেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও প্রতিবেদককে জানিয়েছেন পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই পার্বত্য তিন জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডকে এখন থেকে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে সময়োপযোগি প্রকল্প নেওয়ার জন্য বলে দিয়েছি।

পার্বত্য উপদেষ্টা মি. সুপ্রদীপ চাকমা প্রতিবেদককে বলেন, আমার নিজস্ব পরিকল্পনা হচ্ছে দূর্গম পাহাড়ে স্যাটেলাইট এডুকেশন সিস্টেম দাঁড় করিয়ে দেওয়া। এখন থেকে উপজেলা লেভেলে ২/৩টা করে আবাসিক হোস্টেল নির্মাণ করা হবে। পরবর্তীতে আমরা জেলা লেভেলে আবাসিক ছাত্র হোস্টেল নির্মাণ করবো।  সেগুলোতে শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে থেকে তাদের পড়ালেখা নির্বিঘেœ চালিয়ে যেতে পারে সেলক্ষ্যে হোস্টেলগুলোতে রাজস্ব খাত থেকে ২ বাবুর্চি, ২ সুপাভাইজার ও অন্তত ২ জন সিকিউরিটি নিয়োগের পাশাপাশি এসব আবাসিক শিক্ষার্থী হোস্টেলগুলোর জন্য এবং বিভিন্ন এতিমখানা, শিশুসদনে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিতে সম্ভব হলে একটি প্রবিশনের মাধ্যমে আমি প্রতিবছর ২শ/৩শ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ রাখা যায় সেটা নিশ্চিত করে দিয়ে যাবো। এই বিষয়ে ইতিমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টার সাথে এই বিষয়টি জোরালো ভাবে আলোচনা করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদককে জানিয়েছেন পার্বত্য উপদেষ্টা।

এদিকে, রাঙামাটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজক চাকমা জানিয়েছেন, বর্তমানে আমাদের অধীনে বর্তমানে প্রায় ৮/১০টি প্রকল্প চলমান আছে। ইতোমধ্যেই চারতলা বিশিষ্ট্য ৭টি একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। চারটি শেষ করা হয়েছে বাকি তিনটি শেষের পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়াও পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ১০টি স্কুলের উর্দ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এরবাইরেও মাদ্রাসা প্রকল্পের অধীনেও উন্নয়ন বাস্তবায়ন শেষের পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়াও রাজস্বখাতের মাধ্যমেও কিছু কিছু স্কুলের নতুন ভবন করা হচ্ছে। এরবাইরেও সরকার কর্তৃক কারিগরি শিক্ষার প্রসারে টেকনিক্যাল স্কুল সম্প্রসারণ প্রকল্পের অধীনে কাউখালীতে ভবন নির্মাণ কাজ চলছে এবং বেশ কয়েকটি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল ভবন নির্মাণে জায়গা নির্ধারণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।বিজক চাকমা জানান, শিক্ষার মানোন্নয়নে বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে আবাসন বৃদ্ধির প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে সেটিও টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাবো, এছাড়াও রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়েও একাডেমিক, প্রশাসনিক ও দুটি ছাত্রাবাস নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

এসব উন্নয়ন কাজগুলো বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়ে গেলে পাহাড়ে শিক্ষা মান আরো অনেকটা বৃদ্ধি পাবে জানিয়ে তিনি বলেন, মূলত: আমাদের পাহাড়ে প্রকল্প নেয়া হয়, এমপিও ভিত্তিতে। বৃহৎ জেলা হওয়া সত্বেও একটি মাত্র সংসদীয় আসনের কারনে আমাদের এখানে অনেক প্রকল্প থেকে আমরা রাঙামাটিবানী বঞ্চিত হয়ে যাচ্ছি। যার প্রেক্ষিতে এখনো পর্যন্ত আমাদের ৭৫টির মতো স্কুল এখনো উন্নয়নের আওতায় আসেনি। যার প্রেক্ষিতে প্রতন্ত এলাকাগুলোতে শিক্ষার মানোন্নয়ন হয়নি। বিজক চাকমা বলেন, আমাদের দূর্গম এলাকাগুলোতে হোস্টেল বেশি প্রয়োজন; কারণ প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদের অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো নয়; তাই ছেলে-মেয়েদেরকে টাকা খরছ করে শহরে পাঠিয়ে পড়ালেখা করাতে পারেনা।এদিকে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের রাঙামাটি জেলা শিক্ষা অফিসারের দায়িত্বে থাকা সরিৎ কুমার চাকমা জানিয়েছেন, জেলা শিক্ষা অফিসের অধীনে মাধ্যমিক পর্যায়ে ২৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলোতে প্রায় ৫০ হাজারের মতো শিক্ষা রয়েছে। তিনি বলেন, পাহাড়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে দুর্গম এলাকাগুলোর বিদ্যালয়গুলোতে আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিতের পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রার্ন্তিক পর্যায়ের ছেলেমেয়েদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন করা প্রয়োজন। তাহলেই পাহাড়ের সর্বত্র শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব।

রাঙামাটি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট্য সরকারী দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে জেলায় এখনো পর্যন্ত প্রায় ৭৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এখনো পর্যন্ত রাজস্ব খাতে নেয়া হয়নি। রাঙামাটি জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নতুন প্রকল্প প্রস্তাব(ডিপিপি) প্রণয়নের জন্য জরিপকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে, রাঙামাটি সদর উপজেলায় ১৮টি, বাঘাইছড়িতে-৮, রাজস্থলীতে-২, জুরাছড়ি-২, বিলাইছড়ি-১, কাউখালী-৭, বরকলে-৪, কাপ্তাইয়ে-৫, নানিয়ারচরে-১০ ও লংগদু উপজেলায়-৭টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এখনো পর্যন্ত রাজস্ব খাতে আনা হয়নি। পাহাড়ের ভারত সীমান্তবর্তী বর্ডার এলাকাগুলোসহ বিভিন্ন দূর্গম এলাকায় স্থাপিত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবেশ গড়ে উঠেনি। যারফলশ্রুতিতে সেসব এলাকাগুলোর শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় মানসম্পন্ন শিক্ষার আওতায় নিজেদেরকে আনতে পারেনি।রাঙামাটি জেলা শিক্ষা অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ইআইআইএন’ভূক্ত (এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) মাধ্যমিক ও নিন্ম মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সর্বমোট-১৪৩টি। তারমধ্যে সরকারি ১১টি, এমপিওভূক্ত-৯৩টি এমপিওবিহীন-৩৯টি বিদ্যালয়, থাকলেও ইআইআইএন বিহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩৪টি। এছাড়াও স্বতন্ত্র মাধ্যমিক ভোকেশনাল/কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে-৪টি। ইআইআইএন’ভূক্ত মাদ্রাসা রয়েছে-১৪টি। তারমধ্যে এমপিওভূক্ত-১৩টি (দাখিল-১১, আলিম-১, ফাজিল-২) এমপিও বিহীন রয়েছে-১টি। ইআইআইএন বিহীন মাদ্রাসা রয়েছে-১টি। রাঙামাটি জেলায় ই’আই’আই’এনভূক্ত কলেজ রয়েছে-২১টি(সরকারি-৯টি, এমপিওভূক্ত-৩টি, এমপিও বিহীন-৫টি, স্কুল এন্ড কলেজ-৪টি।

স্থানীয় সচেতনমহল মনে করছেন, পার্বত্য অঞ্চলে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হলে দ্রুত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারীকরণ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় আনা এবং প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন জরুরি। অন্যথায় পাহাড়ের প্রজন্ম শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়বে, যা জাতীয় উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।

কিউএনবি/অনিমা/১ আগস্ট ২০২৫/বিকাল ৫:৫৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

August 2025
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit