চাঁদাবাজি করার ক্ষেত্রে চাঁদাবাজরা হুমকিধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে, ত্রাস সৃষ্টি করে, হত্যা-খুন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়, বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে- এসবই সামাজিক অভিশাপ। কোরআন-হাদিসে প্রতিটি অপকর্মের জন্য ইহ ও পরকালে কঠিন শাস্তি ঘোষণা করেছে। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও রসুলের বিরুদ্ধাচরণ এবং দেশে সন্ত্রাস-অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তাদের শাস্তি হচ্ছে- তাদের হত্যা করা হবে অথবা ফাঁসিতে ঝোলানো হবে অথবা তাদের হাত-পা কেটে দেওয়া হবে অথবা দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। এটি হলো তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা, আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।’ (সুরা মায়িদাহ-৩৩)।
রসুলুল্লাহ (সা.) একদিন তাঁর সাহাবাদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমরা কি জানো, নিঃস্ব কে?’ তাঁরা বললেন, আমাদের মধ্যে নিঃস্ব ওই ব্যক্তি, যার কাছে কোনো দিরহাম এবং কোনো সামগ্রী নেই। তিনি বললেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে নিঃস্ব তো সেই ব্যক্তি, যে কেয়ামতের দিন নামাজ, রোজা ও পর্যাপ্ত জাকাত নিয়ে উপস্থিত হবে। সঙ্গে এমন পরিস্থিতি উদ্ভব হবে যে সে কাউকে গালি দিয়েছে, কারও প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে, কারও সম্পদ ভক্ষণ করেছে, কারও রক্তপাত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। অতঃপর এসবের বিনিময়ে কাউকে তার কিছু নেকি দেওয়া হবে। অপরজনকে কিছু নেকি দেওয়া হবে, এভাবে পাওনাদারের দাবি পূরণের আগেই তার সব নেকি শেষ হয়ে যাবে। তখন তাদের পাপের বোঝা ওই ব্যক্তির ওপরে তারা নিক্ষেপ করবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (সহিহ মুসলিম)। পরকালে পাওনাদারের পাওনা পরিশোধের পদ্ধতি হবে খুবই বিপজ্জনক পরিস্থিতি। যারা সেদিন পাকড়াও হবে তাদের মুক্তির কোনো উপায় হবে না। থাকবে না পার পাওয়ার কোনো সুযোগ। তাই এ পৃথিবীতে থাকাকালীন সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন। প্রয়োজন দায়মুক্ত হওয়া। পরকালে পাওনা পরিশোধ করা খুবই কঠিন। সেদিন ক্ষমা নেওয়ারও কোনো উপায় থাকবে না। থাকবে না কোনো ক্ষমতার দাপট।
পরিচ্ছন্ন হৃদয় ও আন্তরিক সন্তুষ্টি ছাড়া গ্রহণ করা সম্পদ কারও জন্য বৈধ হবে না। পরিস্থিতি সৃষ্টি করে অথবা অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক আদায় করা সম্পদ মানেই হারাম, যা চাঁদাবাজির অন্তর্ভুক্ত। এসব কাজে যে বা যারা জড়িত তাদের অবশ্যই তওবা করে সঠিক পথে ফিরে আসতে হবে। ওই সম্পদের মালিক অথবা তার উত্তরাধিকারীর কাছে তাদের সব পাওনা যে কোনো উপায়ে ফেরত দিতে হবে। তা অসম্ভব হলে তার নামে ওই সম্পদ সদকা করতে হবে। অন্যথায় কঠিন বিপদের সম্মুখীন হতে হবে পরকালে শেষ বিচারের দিন।
লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা