শান্তা ইসলাম নেত্রকোণা প্রতিনিধি : নেত্রকোণা জেলার বারহাট্টা উপজেলার বাউসী ইউনিয়নের ছালিপুরা গ্রামের শিক্ষার্থী মুক্তি রাণী বর্মন হত্যা মামলার আসামী কাওছার মিয়ার মৃত্যুদণ্ড রায় প্রদান করেছেন বিজ্ঞ বিচারক। আজ মঙ্গলবার (২৭মে) বিকেলের দিকে নেত্রকোণা জেলা ও দায়রা জজ মোঃ হাফিজুর রহমান এ রায় দেন। রাষ্ট্র পক্ষে আইনজীবী ছিলেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবুল হাসেম। আসামি পক্ষে আইনজীবী ছিলেন দেলুয়ার বেগম।
ভিকটিম নিহত মুক্তি রাণী বর্মন নেত্রকোণা জেলার বারহাট্টা উপজেলার বাউসী ইউনিয়নের প্রেম নগর গ্রামের নিখিল চন্দ্র বর্মনের মেয়ে। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি কাওছার মিয়া একই এলাকার মোঃ শামছুদ্দিনের ছেলে। মামলা সূত্রে নিহত মুক্তি রাণী বর্মনের মামা শ্রীকান্ত বর্মনসহ সাক্ষীগণ বারহাট্টা থানায় লিখিত অভিযোগে মামলা দায়ের করে জানান, মুক্তি রানী বর্মন (১৬) বারহাট্টা থানাধীন প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণীতে পড়ালেখা করতো।
মুক্তি রানী বর্মন প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার পথে আসামি মোঃ কাওছার মিয়া প্রেম নিবেদন করার উদ্দেশ্যে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করে আসছিলো। বিষয়টি আসামির পরিবারবর্গকে জানাইলে আসামি কাওছার মিয়া আরও বেপরোয়া হয়ে মুক্তি রাণী বর্মন কে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। মামলার লিখিত অভিযোগে আরও জানান, ২০২৩ সালের ২মে সকাল ৯টা ৪৫মিনিটে মুক্তি রাণী বর্মন বাড়ি থেকে প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে বের হয়।
ওইদিন বিদ্যালয় ছুটির পর প্রতিদিনের ন্যায় তার সহপাঠি ও বন্ধু বান্ধব তানিয়া আক্তার, সাবিনা আক্তার, আকলিমা আক্তার, প্রীতি আক্তার আক্তার, আবু ইউসুফ, শিউলী রানী বর্মন, স্বর্ণা বর্মন, লক্ষী রানী বর্মনদের সাথে বাড়ি ফেরার পথে প্রেম নগর এলাকায় কংস নদীর পাড়ে পুরাতন ঈদগাহ মাঠের দক্ষিণ পাশে কাঁচা রাস্তার পাশে পৌঁছা মাত্রই আসামি কাওছার মিয়া (১৪) পিছন দিক হতে এসে কাওছার মিয়ার হাতে থাকা ধারালো দা দিয়ে মুক্তি রানি বর্মনকে খুন করার উদ্দেশ্যে মাথা ও ঘাড় লক্ষ্য করে এলোপাথারীভাবে কোপাইতে থাকে।
ফলে মুক্তি রানী বর্মন এর মাথায় ও ঘাড়ে গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম হয়। এসময় মুক্তি রানী বর্মন মাটিতে পড়ে গেলে তার সহপাঠিসহ ঘটনাস্থলের আশেপাশের লোকজন মুক্তি রানি বর্মনকে গুরুতর আহত অবস্থায় অটো রিক্সাযোগে বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে হাসপাতালে জরুরী বিভাগে কর্মরত ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মুক্তি রানি বর্মনের অবস্থা গুরুতর দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
মুক্তি রানী বর্মনকে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মুক্তি রানি বর্মনকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। আদালতের রায় সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোণা জেলার বারহাট্টা উপজেলার বাউসী ইউনিয়নের প্রেম নগর গ্রামের শামছু উদ্দীনের ছেলে মোঃ কাওছার মিয়ার (১৮+) বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ দন্ড বিধির ৩০২ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হওয়ায় ‘ আসামি কাওছার মিয়াকে উক্ত ধারায় মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হইল।
মাননীয় সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে আসামি মোঃ কাওছার মিয়া এর গলায় রশি দ্বারা ফাঁসিতে ঝুলাইয়া মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হইল। অধিকন্তু আসামি মোঃ কাওছার মিয়াকে উপরোক্ত ধারায় পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদন্ডে দণ্ডিত করা হইল। আসামি মোঃ কাওছার মিয়া আগামী সাত দিনের মধ্যে উচ্চ আদালতে আপীল দায়ের করতে পারবেন। আসামি মোঃ কাওছার মিয়াকে সাজা পরোয়ানামূলে কারাগারে পাঠানো হোক।
কিউএনবি/আয়শা/২৮ মে ২০২৫, /রাত ৮:২১