বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৬ অপরাহ্ন

বংশধরদের সঙ্গে নবীজির আচরণ

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৭১ Time View

ডেস্ক নিউজ : মানব সভ্যতার অহংকার রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাঝে পিতাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। সন্তানসন্ততি ও বংশধরদের উত্তমরূপে প্রতিপালনে তিনি মানবজাতির সামনে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। সিরাতের পাতায় পাতায় সেসব দৃষ্টান্ত দ্যুতি ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত।

হজরত ফাতেমা (রা.) নবীজি (সা.)-এর আদরের কনিষ্ঠা কন্যা। নবীজি (সা.) ও ফাতেমা (রা.)-এর আচরণে পিতা ও কন্যার এক চমৎকার হৃদয়স্পর্শী সম্পর্ক দেখতে পাওয়া যায়। নবীজির প্রিয় পুত্র ইবরাহিম (রা.) যখন ইন্তেকাল করেন তখনো প্রকাশ পেয়েছিল তাঁর স্নেহ ও ভালোবাসার গভীরতা। সন্তানকে লক্ষ করে নবীজির বলা কথাগুলো সন্তানের প্রতি পিতার হৃদয় নিংড়ানো স্নেহের অপার নিদর্শন বহন করে।

আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, আমরা রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে আবু সায়ফ কর্মকারের কাছে গেলাম। তিনি ছিলেন (নবীতনয়) ইবরাহিম (রা.)-এর দুধ-সম্পর্কীয় পিতা। রসুলুল্লাহ তাঁকে তুলে নিয়ে চুমু খেলেন এবং তাঁকে নাকেমুখে লাগালেন। এরপর (আর একদিন) আমরা তাঁর (আবু সায়ফের) বাড়িতে গেলাম। তখন ইবরাহিম (রা.) মুমূর্ষু অবস্থায়। এতে রসুলুল্লাহর উভয় চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে লাগল। তখন আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আর আপনিও (কাঁদছেন?) তখন তিনি বললেন, ইবনে আওফ, এ হচ্ছে মায়ামমতা। তারপর পুনর্বার অশ্রু ঝরতে থাকল। এরপর তিনি বললেন, অশ্রু প্রবাহিত হয় আর হৃদয় হয় ব্যথিত। তবে আমরা মুখে তাই বলি, যা আমাদের রব পছন্দ করেন। আর হে ইবরাহিম! তোমার বিচ্ছেদে আমরা অবশ্যই শোকাভিভূত (সহিহ বুখারি)।

নবীজি নিজের নাতিনাতনিদের ক্ষেত্রেও অনেক যত্নবান ছিলেন। তাঁদের অনেক আদর করতেন। ভালোবাসতেন। তাদের জন্য সুন্দর সুন্দর নাম নির্বাচন করতেন। নাতিনাতনিদের প্রতি নবীজির ভালোবাসা ছিল অত্যধিক প্রগাঢ় ও গভীর। ভালোবাসার সৌরভ জড়ানো একাধিক দ্যুতিময় গল্প ছড়িয়ে আছে সিরাতের পাতায় পাতায়।

‘আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদাহ (রহ.) হতে তাঁর পিতার থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, একদা রসুলুল্লাহ আমাদের সামনে খুতবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় শিশু হাসান ও হোসাইন লাল রঙের জামা পরিহিত অবস্থায় আছাড় খেতে খেতে এগিয়ে এলে নবী (সা.) খুতবা বন্ধ করে মিম্বার থেকে নেমে তাঁদের নিয়ে এসে মিম্বারে উঠে বললেন, আল্লাহ সত্যই বলেছেন, ‘তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানাদি ফিতনাহস্বরূপ’ (সুরা তাগাবুন-১৫)। আমি এ দুজনকে দেখে ধৈর্য ধারণ করতে পারিনি। অতঃপর তিনি খুতবা দিতে লাগলেন (সুনানে আবু দাউদ)। এমন ভালোবাসা নবীজি (সা.) তাঁর অন্য নাতিনাতনির ক্ষেত্রেও প্রসারিত রেখেছিলেন।

আবু কাতাদা আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত; আল্লাহর রসুল তাঁর মেয়ে জয়নবের গর্ভজাত ও আবুল আস ইবনু রাবি’আ ইবনু আবদ শামস (রহ.)-এর ঔরশজাত কন্যা উমামা (রা.)-কে কাঁধে নিয়ে সালাত আদায় করতেন। তিনি যখন সিজদায় যেতেন তখন তাঁকে রেখে দিতেন আর যখন দাঁড়াতেন তখন তাঁকে তুলে নিতেন (সহিহ বুখারি)। নবীজি (সা.) নিজে যেমন বংশধরদের স্নেহ ও ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে রাখতেন তেমনি অন্যদেরও স্নেহ-ভালোবাসার সৌরভ ছড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দিতেন। একটি হাদিস দেখুন।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, আল-আকরা’ ইবনু হাবিস (রা.) রসুলুল্লাহ (সা.)-কে দেখলেন, তিনি হোসাইন (রা.)-কে চুমু দিচ্ছেন। আল-আকরা বললেন, আমাদের দশটি সন্তান আছে, আমি তাদের একজনকেও চুমু দিইনি। রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন; যে অনুগ্রহ করে না, তাকেও অনুগ্রহ করা হয় না (সুনানে আবু দাউদ)।

একজন পিতা ও নানা হিসেবে সন্তান ও নাতিনাতনিদের সঙ্গে নবীজি (সা.)-এর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত ছিল অপার স্নেহ, সহানুভূতি ও ভালোবাসার ওপর। তাঁর মহানুভব ছায়ায় পরিবারের সবাই শান্তি ও স্বস্তি অনুভব করত। হে আল্লাহর রসুল! পিতা ও নানা হিসেবে আপনি কতই না মহান!

লেখক : আউচপাড়া জামে মসজিদ টঙ্গী, গাজীপুর

কিউএনবি/অনিমা/১৩ নভেম্বর ২০২৪,/রাত ৯:০১

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit