এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েই চলছে। ১৮ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত ৬৭ জন এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে।উপজেলায় জুলাই থেকে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ১০৯ জন। এর মধ্যে চলিতি মাসের ১৮ দিনেই শনাক্ত হয়েছে ৬৭ জন। মৃত্যু হয়েছে ২ জনের।চৌগাছা উপজেলা সরকারি হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, চলতি মাসে গত ১৮ দিনে উপজেলা সরকারি হাসপাতালে ৬৭ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে গত ৪৮ ঘন্টায় হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে শনাক্ত হয়েছেন ৯ জন। এ ৯ জন রোগীর মধ্যে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৬ জন। আক্রান্তদের বেশির ভাগই চৌগাছা পৌর এলাকার বাসিন্দা।ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তারা হলেন, পৌর শহরের কারিগর পাড়ার হাবিবুলাহ (২২), ইছাপুরের হোসেন আলী (৩৩), কালিতলা এলাকার কামাল হোসেন (২৯) ও বাবু কুন্ড (৩৭),খড়িঞ্চা গ্রামের শামিম রেজা (৪৫) ও মাজালি গ্রামের অনিক হোসেন (২৬)।
এছাড়া উপজেলার তিনটি বেসরকারি ক্লিনিকের ল্যাবে সংরক্ষিত তথ্য সুত্রে জানা যায়, চলতি মাসের গত ১৮ দিনে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫২ জন। এর মধ্যে নোভা এইড ক্লিনিকে শনাক্ত হয়েছে ২০ জন, পলবী ক্লিনিকে ২৭ জন এবং কপোতাক্ষী ক্লিনিকে ৫ জন। জুলাই ও আগষ্টে তিন ক্লিনিকে রোগী শনাক্তের সংখ্যা ছিল ২৭ জন।এদিকে উপজেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলো ধুলিয়ানী ইউনিয়নের ধুলিয়ানী গ্রামের জহুরুল ইসলামের স্ত্রী বিউটি বেগম (৩৫)। সে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২ আক্টোবর চৌগাছা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়।সেখানে তার অবস্থার আরও অবনতি হলে সেখান থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ১০ মে উপজেলায় আব্দুল হান্নান (৬৫) নামের আরও একজন মৃত্যুবরণ করেন।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে প্রচুর সংখ্যক জ্বরে আক্রান্ত রোগী রয়েছে। শুধুমাত্র জটিল রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়ে থাকে। এছাড়া অনেক ডেঙ্গু আক্রান্ত অসুস্থ রোগী যশোর সদরসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ায় প্রকৃত রোগীর সংখ্যা জানা যাচ্ছে না বলে জানান তারা। তাছাড়া আলাদা ওয়ার্ড না থাকায় সাধারণ রোগীদের সাথে ডেঙ্গু রোগীদের রাখা হয়েছে। হাসপাতালের চারপাশে এক সপ্তাহ আগের বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে। এসব পানিতে প্রচুর মশার লার্ভা দেখা গেছে। এ সময় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা মন্তব্য করেন, হাসপাতাল নিজেই যেন ডেঙ্গু রোগের আঁতুর ঘর।
পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পানি অপসরণে একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েও কোন সমাধান করতে পারেনি।গত ১৫ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডেঙ্গু বিষয়ক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে একদিনে এক হাজার ১০৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৪ হাজার ৭৬৪ জন।এদিকে উপজেলার ওষুধ ব্যবসায়ীরা জানান, ফার্মেসিগুলোতেও নাপা, প্যারাসিটামল,এইচ-প্লাস জাতীয় ওষুধের ক্রেতা বেশি।উপজেলা সরকারি হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার সুরাইয়া বলেন,বহির্বিভাগে আসা জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের ডেঙ্গু টেস্টে অনিহা রয়েছে। পরীক্ষার পরিমাণ বাড়লে রোগীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুননাহার লাকি জানান, অন্য বছর গুলোতে বাইরে থেকে আক্রান্ত রোগী চৌগাছায় আসতো। এবার স্থানীয় ভাবে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। মাত্র ৪ জন ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে চৌগাছায় এসেছেন। স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়াটা দুশ্চিন্তার বিষয়। যদিও পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্মমিতা সাহা বলেন, জনসচেতনতা তৈরির মাধ্যমে এডিস লার্ভা জন্মানোর উৎস বন্ধ করতে হবে। সচেতনতায় প্রতি পৌর এলাকা ও ইউনিয়নে মাইকিং করা হয়েছে।
কিউএনবি/অনিমা/১৮ অক্টোবর ২০২৪,/সন্ধ্যা ৬:০৩