শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৪৫ পূর্বাহ্ন

ইরানের হুমকি কি কেবলই ফাঁপা বুলি

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০২৪
  • ১১০ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরানের রাজধানী তেহরানে গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া। শুধু তিনি নন, তার দেহরক্ষীকেও গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) রাত ২টার দিকে বিমান হামলা চালিয়ে ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করা হয়েছে। এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে হামাস, যদিও ইসরায়েলের তরফ থেকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

এদিকে হামলার পাল্টা জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে ‘কাপুরুষোচিতভাবে’ হত্যার জন্য ইসরায়েলকে ‘অনুশোচনা’ করতে হবে। ইরান তার আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সম্মান গর্ব ও মর্যাদা রক্ষা করবে। ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়াকে ‘তেহরানের কর্তব্য’ বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।

ইরানের এমন হুমকির পর নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠক আহ্বান করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট সেনাদের উদ্দেশে বলেছেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, তবে আমরা সমস্ত সম্ভাবনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইরানের এই হুমকিকে কেবলই ফাঁপা বুলি বলে মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তারা বলেন, এর আগে ইরানের কুদস ফোর্সের জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার পর প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলেছিল মুসলিম বিশ্বের কথিত শক্তিধর এই রাষ্ট্রটি।

২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ইরাকের রাজধানী বাগদাদে মার্কিন সামরিক হামলায় নিহত হন ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ডের এলিট শাখা কুদ্‌স ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। ওই সময় দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছিলেন, যারা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী, সেই সব অপরাধীদের জন্য কঠিন প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে। যদিও আজ পর্যন্ত সোলাইমানি হত্যার বদলা নিতে পারেনি ইরান। অথচ সোলাইমানিকে হত্যা ছিল ইরানের হৃৎপিণ্ডে বর্শা নিক্ষেপতুল্য।

আগুন ঝরানো বক্তৃতা-বিবৃতি ছাড়া খামেনি-রুহানিরা ইরানের আহত হৃদয়ে সামান্যই প্রলেপ দিতে পেরেছেন। এরপর দেশটি প্রায় একই প্রতিপক্ষের কাছে হারিয়েছে আরেক শ্রেষ্ঠ সন্তান পরমাণুবিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে। সোলাইমানি খুন হন দেশের বাইরে, ফাখরিজাদেহ খোদ তেহরানে। প্রথমজন ইরানের প্রধানতম স্থলযোদ্ধা; দ্বিতীয়জন ছিলেন তাদের পরমাণু কৌশল ও মিসাইলবিদ্যার মেরুদণ্ডতুল্য। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বলা হয়, এসব হত্যাকাণ্ড ইরানের নিরাপত্তাকাঠামোর চরম অকার্যকারিতা প্রকাশ করে।

সোলাইমানি ও ফাখরিজাদেহ প্রতিপক্ষের ঘোষিত নিশানা ছিলেন। দামেস্ক বা বাগদাদে সোলাইমানিকে নিরাপত্তা দেওয়া না গেলেও তেহরানে যখন ফাখরিজাদেহকে নির্বিঘ্নে খুন করা যায়, তখন সেই ব্যর্থতার দায় শাসকদের ওপরও বর্তায়। রিপাবলিকান গার্ড সরাসরি তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। অথচ এই শাসকেরা দেশে গণতান্ত্রিক দাবিদাওয়ার ক্ষোভ-বিক্ষোভ দমনে দশকের পর দশক বেশ সিদ্ধহস্ত। শিক্ষার্থী থেকে পরিবেশবাদী—কেউই বাদ যায়নি তাতে।

চলতি বছরের ২ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেট ভবনে ইসরায়েলের হামলায় সাত কর্মকর্তা নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে এলিট ফোর্স কুদসের সিনিয়র কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি এবং তার সহযোগী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ হাদি হাজি-রহিমিও ছিলেন।

ওই হামলার বদলা নিতে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এ বছরের ১৩ এপ্রিল অনেকটা ঘোষণা দিয়ে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের ‘বিশাল ঝাঁক’ ছোড়ে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের ৯৯ শতাংশ আকাশে ধ্বংস করা হয় বলে দাবি করেছিল ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী।

তবে হামলায় ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের একটি বিমানঘাঁটি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত এবং এক শিশু গুরুতর আহত হওয়ার কথা সেসময় জানায় দেশটি। কিন্তু ইরানের দাবি, হামলায় ইসরায়েলের ওই বিমানঘাঁটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

গুঞ্জন আছে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ান হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহতের নৈপথ্যেও মুসলিম নিধনের জন্য কুখ্যাত দেশ হিসেবে পরিচিত ইসরাইলের হাত রয়েছে।

ইরান ও ইসরায়েলের সামরিক শক্তির বিষয়ে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক লেখক ও বিশ্লেষক আলি সদরজাদেহ বলেছেন, সামরিক সক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইসরায়েলের সঙ্গে বড় ধরনের সংঘাতে যাওয়ার সামর্থ্য ইরানের নেই।

ইরান মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ছড়াতেই মূলত হুমকি দিচ্ছে বলে মনে করেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা।

ইসরায়েল ও ইরানের সামরিক সক্ষমতায় কে এগিয়ে

ইরানের বর্তমানে ৬ লাখ ১০ হাজার সক্রিয় সেনাসদস্য রয়েছে। সংরক্ষিত সদস্য রয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার জন। ইসরায়েলের সক্রিয় সেনাসদস্য রয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার। রিজার্ভ সেনা ৪ লাখ ৬৫ হাজার।

ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল অত্যাধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তির দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানও সামরিক প্রযুক্তিতে অনেক দূর এগিয়েছে।

ইরানের মোট সামরিক উড়োজাহাজ রয়েছে ৫৫১টি। আর ইসরায়েলের ৬১২টি। ইরানের যুদ্ধবিমান রয়েছে ১১৬টি। ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান রয়েছে ২৪১টি। হামলায় ব্যবহৃত ইরানের যুদ্ধবিমান ২৩টি। ইসরায়েলের ৩৯টি। ইরানের পরিবহন উড়োজাহাজ রয়েছে ৮৬টি। ইসরায়েলের রয়েছে ১২টি।

ইরানের হেলিকপ্টার রয়েছে ১২৯টি। ইসরায়েলের ১৪৬টি। হামলায় ব্যবহৃত ইরানের হেলিকপ্টার রয়েছে ১৩টি। ইসরায়েলের ৪৮টি। ইরানের ট্যাংক রয়েছে ১ হাজার ৯৯৬টি। ইসরায়েলের রয়েছে ১ হাজার ৩৭০টি। ইরানের সাঁজোয়া যানের সংখ্যাও ইসরায়েলের থেকে বেশি। ইরানের ৬৫ হাজার ৭৬৫টি সাঁজোয়া যান রয়েছে। আর ইসরায়েলের রয়েছে ৪৩ হাজার ৪০৩টি।

ইরানের যুদ্ধজাহাজ (ফ্লিট) রয়েছে ১০১টি এবং ইসরায়েলের রয়েছে ৬৭টি। ইরানের সাবমেরিন রয়েছে ১৯টি আর ইসরায়েলের ৫টি।

যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মতো পারমাণবিক শক্তি রাষ্ট্র নয় ইরান। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ৭ হাজার ২০০টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে। এদিকে ইসরাইলের রয়েছে ২০০টি।

বিশ্বের নয়টি দেশের কাছে প্রায় ১২ হাজার ৫১২টি পারমাণবিক অস্ত্র আছে। দেশগুলো হলো- যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া এবং ইসরায়েল।

এই তালিকায় ইরানের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র কখনোই ছিল না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার দাবি করেছে যে ইরান তাদের ইউরেনিয়ামের মজুদ দিয়ে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে। ইরান দাবি করে তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/৩১ জুলাই ২০২৪,/রাত ৮:৪৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit