ডেস্ক নিউজ : জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যুক্তিতর্ক শেষে অ্যাটর্নি জেনারেলের সমাপনী বক্তব্যের বিরোধিতা করে শেখ হাসিনার আইনজীবী বলেছেন, তার আসামি পালিয়ে যাননি, তাকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলাটির যুক্তিতর্ক শেষে সমাপনী বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
বক্তব্যের একপর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কী এমন হলো যে তাকে (শেখ হাসিনা) পালিয়ে যেতে হলো? উনারা খুন করেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। প্রসিকিউশন তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছেন। তারা জানতেন বিচার হবে। তাই পালিয়ে গেছেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, উনারা (যারা অপরাধ করেছে) সব খবর রাখছেন। জানেন কী হচ্ছে। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, উনারা এই ট্রাইব্যুনালে হাজির হবেন না। সন্দেহাতীতভাবে আমরা তাদের অপরাধ প্রমাণ করতে পেরেছি। অ্যাপ্রুভার রয়েছেন। সলিড পিস অব এভিডেন্স (বস্তুগত সাক্ষ্য), সারকামস্টেন্সিয়াল এভিডেন্স–সবকিছু সন্দেহাতীতভাবে এই বিচার প্রমাণ করবে।
তিনি বলেন, যেসব সাক্ষ্য ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের যেকোনো দেশে যেকোনো আদালতে প্রমাণিত হবে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মানবতাবিরোধী অপরাধে বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া কয়েকজন সরকারপ্রধানের তথ্য ট্রাইব্যুনালে জমা দেন। তাদের মধ্যে জাপানের প্রধানমন্ত্রী, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজনের কথা উল্লেখ আছে। গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
বিচারের মুখোমুখি হওয়া প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) আরেকজনকে বলেছিলেন সাহস থাকলে যেন দেশে এসে বিচারের মুখোমুখি হন। আমি সেটা বিশ্বাস করেছিলাম, তিনি এটা মন থেকে বলেছেন। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি মন থেকে বলেননি। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে ইঙ্গিত করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, যদি এই আসামিদের মৃত্যুদণ্ড হয়, তাহলে অনেকেই প্রতিবাদ করবেন। এই দুইজনের যদি বিচার না হয়, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ ভীরু-কাপুরুষ হয়ে উপহাসের পাত্র হয়ে থাকবে। আমি আশা করি, আসামিরা এই বিচারের রায় মেনে নেবেন; অন্য কোনো পথ বেছে নেবেন না। আমি আশা করি, এই আদালত সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করবে।
এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেন, কোন পক্ষ কী উপস্থাপন করল, কে কী বলল তা বড় কথা নয়; ট্রাইব্যুনাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শেষ হলে ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম উঠে আদালতের অনুমতি নিয়ে শেখ হাসিনার আইনজীবীর যুক্তিতর্কে দেওয়া বক্তব্যের জবাব দেন। শেখ হাসিনার আইনজীবী বলেছিলেন, ‘এই আইনে বিচার করা মানে আসামিকে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে বলা, ‘সাতার কাটো’।’
তিনি বলেন, এ আইনটি (আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন, ১৯৭৩) রোম স্ট্যাটিউটের সঙ্গে ‘কমপেটিবল’ করা হয়েছে। সংবিধান এই আইনকে ‘প্রটেকশন’ দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে আইনটির ১৯ ধারার কথা উল্লেখ করেন প্রধান কৌঁসুলি তাজুল। এছাড়া ভিডিও, অডিও যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এনটিএমসি, বিবিসি এবং আল জাজিরার সঠিকতা যাচাইয়ের কথা উল্লেখ করেন।
সব শেষে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, মাননীয় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, আমার আসামি পালিয়ে গেছেন। আমি বলতে চাই, তিনি পালিয়ে যাননি। তাকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য প্রসঙ্গে আমির হোসেন বলেন, যে কারণে ওই ব্যক্তি (তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে) দেশে আসেননি, আমার আসামিও সে কারণে দেশে আসছেন না।
এরপর ট্রাইব্যুালের চেয়ারম্যান এ মামলার রায়ের তারিখ আগামী ১৩ নভেম্বর জানানো হবে বলে জানান। এ মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনও আসামি। তাদের মধ্যে মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন। গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আন্দোলন দমনে ১৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচ অভিযোগে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
কিউএনবি/আয়শা/২৩ অক্টোবর ২০২৫,/সন্ধ্যা ৭:০৮