বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৩৯ অপরাহ্ন

আল্লাহ ও রসুল থেকে মুখ ফেরানোর কোরআনিক শাস্তি

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০২৪
  • ৭১ Time View

ডেস্ক নিউজ : আল্লাহ বলেন,وَاَنِ احۡکُمۡ بَیۡنَہُمۡ بِمَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ وَلَا تَتَّبِعۡ اَہۡوَآءَہُمۡ وَاحۡذَرۡہُمۡ اَنۡ یَّفۡتِنُوۡکَ عَنۡۢ بَعۡضِ مَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ اِلَیۡکَ ؕ فَاِنۡ تَوَلَّوۡا فَاعۡلَمۡ اَنَّمَا یُرِیۡدُ اللّٰہُ اَنۡ یُّصِیۡبَہُمۡ بِبَعۡضِ ذُنُوۡبِہِمۡ ؕ وَاِنَّ کَثِیۡرًا مِّنَ النَّاسِ لَفٰسِقُوۡنَ

(আমি আদেশ করছি যে,) তুমি মানুষের মধ্যে সেই বিধান অনুসারেই বিচার করবে, যা আল্লাহ নাজিল করেছেন এবং তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবে না। তাদের ব্যাপারে সাবধান থেকে, পাছে তারা তোমাকে এমন কোন বিধান থেকে বিচ্যুত করে, যা আল্লাহ তোমার প্রতি নাজিল করেছেন। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রেখ, আল্লাহ তাদের কোনও কোনও পাপের কারণে তাদেরকে বিপদাপন্ন করার ইচ্ছা করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ফাসিক। (সুরা মায়েদা ৪৯)

এ আয়াতের তাফসিরে মুফতি তাকি উসমানি বলেন, ‘কোনও কোনও পাপ’ বলা হয়েছে এ কারণে যে, সাধারণভাবে সব গুনাহের শাস্তি তো আখেরাতেই দেওয়া হবে, কিন্তু আল্লাহ ও রাসূল হতে মুখ ফেরানোর শাস্তি দুনিয়াতেও দেওয়া হয়। সুতরাং অঙ্গীকার ভঙ্গ ও ষড়যন্ত্র করার কারণে তাদেরকে দুনিয়াতেই নির্বাসন ও মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে। এ বিধান সেই অমুসলিমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যে ইসলামি রাষ্ট্রের আইনসম্মত নাগরিক হয়ে যায়। ফিকহি পরিভাষায় তাকে ‘জিম্মি’ বলে।

কিংবা কোনও অমুসলিম যদি স্বেচ্ছায় তার বিচার-নিষ্পত্তি মুসলিম কাজি (বিচারক) দ্বারা করাতে চায় তার ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। এ অবস্থায় মুসলিম বিচারক সাধারণ রাষ্ট্রীয় আইন-কানুনের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়াবলিতে তো ইসলামি বিধান অনুসারেই রায় দেবে, কিন্তু তাদের একান্ত ধর্মীয় বিষয়াবলি, যথা ইবাদত-উপাসনা, বিবাহ, তালাক ও উত্তরাধিকারে তারা নিজ ধর্ম অনুযায়ী বিচার-নিষ্পত্তি করতে পারবে। তবে সেটা করবে তাদেরই ধর্মের লোক। এ আয়াতগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে কিছু ঘটনার কথাও তাফসিরে মাআরেফুল কোরআনে মুফতি শফী রহ. বর্ণনা করেছেন।

বনি কুরায়যা ও বনি নুযায়রের একটি মোকদ্দমা রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এজলাসে উত্থাপিত হয়েছিল। বনি নুযায়র গায়ের জোরে বনি কুরায়যাকে বাধ্য করে রেখেছিল যে, বনি নুযায়রের কোন ব্যক্তি যদি তাদের কোন ব্যক্তিকে হত্যা করে তবে প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ নেওয়া হবে এবং রক্ত-বিনিময়ও গ্রহণ করা হবে। পক্ষান্তরে যদি বনি নুযায়রের কোন ব্যক্তি বনি কুরায়যার কোন ব্যক্তিকে হত্যা করে, তবে কিসাস নয়, শুধু রক্ত বিনিময় দেওয়া হবে। তাও বনি নুযায়য়ের রক্ত বিনিময়ের অর্ধেক।

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা তাদের এ জাহিলিয়াতের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছেন যে, স্বয়ং তওরাতের কিসাস ও রক্ত বিনিময়ের ক্ষেত্রে সমতার বিধান রয়েছে। তারা জেনেশুনে তার প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে এবং শুধু বাহানাবাজির জন্য নিজেদের মোকদ্দমা রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এজলাসে উপস্থিত করে।

আয়াতের শেষে বলা হয়েছে وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَঅর্থাৎ যারা আল্লাহ-প্রেরিত বিধান অনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারা জালিম, আল্লাহর বিধানে অবিশ্বাসী এবং বিদ্রোহী। তৃতীয় আয়াতের প্রথমে হজরত ঈসা (আ.)-এর নবুয়ত প্রাপ্তি প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি পূর্ববর্তী গ্রন্থ তওরাতের সত্যায়নের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। এরপর ইঞ্জিল সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এটিও তওরাতের মতই হিদায়েত ও জ্যোতি। চতুর্থ আয়াতে বলা হয়েছে যে, ইঞ্জিলের অধিকারীদের ইঞ্জিলে অবতীর্ণ আইন অনুযায়ী ফয়সালা করা উচিত। যারা এ আইনের বিরুদ্ধে ফয়সালা করে, তারা অবাধ্য ও উদ্ধৃত।

কোরআন, তওরাত ও ইঞ্জিলের সংরক্ষক

পঞ্চম ও ষষ্ঠ আয়াতে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে আমি আপনার প্রতি কোরআন অবতরণ করেছি, যা পূর্ববর্তী গ্রন্থ তওরাত মঞ্জিলের সত্যায়ন করে এবং এদের সংরক্ষকও বটে। কারণ যখন তওরাতের অধিকারীরা তওরাতে এবং ইঞ্জিলের অধিকারীরা ইঞ্জিলের পরিবর্তন সাধন করে, তখন কোরআনই তাদের পরিবর্তনের মুখোশ উন্মোচন করে সংরক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

তওরাত ও ইঞ্জিলের প্রকৃত শিক্ষা আজও কোরআনের মাধ্যমেই পৃথিবীতে বিদ্যমান রয়েছে। অথচ এসব গ্রন্থের উত্তরাধিকারী এবং অনুসরণের দাবিদাররা এদের রূপ এমন ভাবে বিগড়ে দিয়েছে যে, সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। শেষাংশে মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তওরাতধারী ও ইঞ্জিলধারীদের অনুরূপ নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে আপনার যাবতীয় নির্দেশ ও ফয়সালা আল্লাহ-প্রেরিত নির্দেশ অনুযায়ী হতে হবে। যারা আপনার দ্বারা স্বীয় বৈষয়িক কামনা-বাসনা অনুযায়ী ফয়সালা করাতে চায়, তাদের ষড়যন্ত্র থেকে হুঁশিয়ার থাকবেন। 

এরূপ বলার একটি বিশেষ কারণ ছিল এই যে, ইহুদীদের কতিপয় আলিম মহানবী (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে নিবেদন করল, আপনি জানেন আমরা ইহুদীদের আলিম ও ধর্মীয় নেতা। আমরা মুসলমান হয়ে গেলে তারাও সবাই মুসলমান হয়ে যাবে। তবে আমাদের একটি শর্ত আছে। তা হলো এই যে, আপনার কওমের সাথে আমাদের একটি মোকদ্দমা রয়েছে, আমরা মোকদ্দমাটি আপনার কাছে উত্থাপন করব। আপনি এর ফয়সালা আমাদের পক্ষে করে দিলে আমরা মুসলমান হয়ে যাব।

আল্লাহ তাআলা হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ বিষয়ে সতর্ক করে বলছেন আপনি এদের মুসলমান হওয়ার প্রেক্ষিতে ন্যায়, সুবিচার ও আল্লাহ-প্রেরিত আইনের বিপক্ষে কোন ফয়সালা দেবেন না এবং এরা মুসলমান হবে কি হবে না-এ বিষয়ের প্রতি ভ্রুক্ষেপও করবেন না।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১১ জুলাই ২০২৪,/সন্ধ্যা ৬:১৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit