ডেস্ক নিউজ : অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হলে আগামী সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়বে বলে মনে করেন দেশের কয়েকজন রাজনীতি ও আইন বিশ্লেষক। যুগান্তরকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেন, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার স্বার্থে যেসব উপদেষ্টার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলের প্রতি সহানুভূতির অভিযোগ রয়েছে তাদের দ্রুত পদত্যাগ করে সরে যাওয়া উচিত। একইসঙ্গে মাঠ প্রশাসন নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের দিয়ে সাজানো দরকার। কারণ নির্বাচন সামনে রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে গেলে আইনি প্রশ্ন উঠতে পারে এবং ভোট আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চরিত্রে যেতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর বিএনপির আস্থা কমেছে বলে মনে করেন এ সংবিধান বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, দৃশ্যমান সংস্কার এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে না পারায় সরকারের ওপর আস্থা কমেছে। তারা দ্রুত নির্বাচনের দিকে যেতে চাইছে। তাই দলটি অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চরিত্রে যাওয়ার দাবি করেছে। আমি মনে করি, যেসব উপদেষ্টারা রাজনৈতিক দলের প্রতি সহানুভূতিশীল তাদের সরকার থেকে দ্রুত সরে যাওয়া উচিত।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মঙ্গলবার সাক্ষাৎ করে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়ার দাবি জানায়। বুধবার দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে বিএনপির দাবির বিষয়টি আরও স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, যেহেতু নির্বাচনের আগে আর কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসবে না, সেহেতু এই সরকারকে শিগগিরই কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক) সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। যারা সরকারে আছেন, অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি আমাদের সম্মান আছে, ওনাদের তো সম্মানের সঙ্গে যেতে হবে, আমরা সেটা চাই। কিন্তু কিছু লোকের কার্যকলাপের মাধ্যমে সেটা বিঘ্নিত হতে পারে। এ জন্য বলি, পুরোপুরি কেয়ারটেকার সরকারের মুডে চলে যান। যাদের নিয়ে বিতর্ক আছে, এই লোকগুলোকে চলে যেতে হবে। তারা সেখানে থাকলেই সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনায় নীতি-নির্ধারণী অনেক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তবে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার সময়ে এই সরকারকে শুধু রুটিন কাজে চলে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এখন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আছে, এই সরকার তো অনেক কাজ করতে পারে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিন্তু এত কাজ করতে পারে না। তার মূল কাজ হলো নির্বাচন করা। মানে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা এবং নির্বাচন আয়োজনে কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা করা। অর্থাৎ সরকারের মূল ফোকাসটাই হবে নির্বাচন। তারা (সরকার) রুটিন কাজ করবে। নির্বাচন কমিশনই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আরেক অধ্যাপক মোহাম্মদ আইনুল ইসলাম এখন তো নতুন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার করার সুযোগ নাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানেও নাই। এখন উনারা (বিএনপি) চায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হোক। তারা সাময়িক সময় পার করবে এবং আগামী রাজনৈতিক সরকার আসা পর্যন্ত থাকবে। তাদের প্রধান কাজ হবে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করা।
কিউএনবি/আয়শা/২৩ অক্টোবর ২০২৫,/বিকাল ৪:৪৩