শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৩১ অপরাহ্ন

অযোগ্যতা ও দুর্নীতির কারণে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যর্থ সরকার : মির্জা ফখরুল

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৯১ Time View

ডেস্কনিউজঃ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অযোগ্যতা ও দুর্নীতির কারণে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যর্থ সরকার। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বিকার।

রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ডেঙ্গু জ্বরে কাঁপছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্যখাতে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। এ বছর অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে ডেঙ্গু মৃত্যুদূত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে ডেঙ্গুজনিত মৃত্যুর সংবাদই হচ্ছে এখন প্রধান শিরোনাম। প্রতিদিনই গড়ে প্রায় ২০ জন করে লোক মারা যাচ্ছে। শুধু সরকারি হিসেবেই গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৭৪৮ জন। এ বছর মোট মৃত্যু হয়েছে ৭১৬ জনের, যার মধ্যে ৫১৩ জন ঢাকাতে এবং ২০৩ জন ঢাকার বাইরে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৩৫ জন, যার মধ্যে ৬৬ হাজার ৬৫ জন ঢাকাতে এবং ৭৯ হাজার ২৭০ জন ঢাকার বাইরের।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, নিম্নমানের কীট ও সরকারের উদাসীনতার জন্য আমরা জানি না কী পরিমাণ রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত, আসল রোগীর সংখ্যা কত তা সহজেই অনুমেয় যে- কয়েকগুণ বেশী হবে। ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গুকে আমরা চিনছি-জানছি। ২০১৮ সালে এসে তা বিভীষিকাময় রূপ দেখায়। ২০১৮ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২৬ জন, ২০১৯ সালে ১৭৯ জন, ২০২০ সালে ৭ জন। ২০২০ সালে করোনায় যে পরিমাণ মানুষ মারা গিয়েছিল তার হিসাব রাখাই ছিল দায়। ২০২১ সালে ডেঙ্গুতে মারা যান ১০৫ জন, ২০২২ সালে ২৮১ জন আর ২০২৩ এখন পর্যন্ত ৭১৬, আর কত?

বিএনপি মহাসচিব বলেন, হাসপাতালে রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না, আবার চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে মানুষ। লাশের সারি প্রতিদিনই দীর্ঘায়িত হচ্ছে। শিশুরা মারাত্মকভাবে ঝুঁকিতে, মৃতের একটা বড় অংশ শিশু। সম্প্রতি ৭ দিনের ব্যবধানে ২ সন্তান হারিয়ে ঢাকা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার খবর কি ব্যর্থ এই সরকারের বিবেককে নাড়া দেয় না? তাদের এসব নিয়ে কোনো চিন্তা নেই, জবাবদিহিতা নেই।

তিনি বলেন, শুধু সরকারের দুর্নীতি ও অবহেলার কারণে এই রোগ এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে চিকিৎসা সরঞ্জামের দাম বৃদ্ধি যেমন, মশা মারার ওষুধ, স্প্রে, স্যালাইন; রোগ নির্ণয়ের কীটের অপ্রতুলতা ও নিম্নমানের জন্য ডেঙ্গু রোগ প্রকট রূপ নিয়েছে। ঢাকার বাইরে রোগ নির্ণয়ের কীট পাওয়া যাচ্ছে না। ডেঙ্গু প্রতিরোধের নামে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন হাজারো কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে। ২০১৯ সালেই টিআইবি ডেঙ্গু নিয়ে দুর্নীতির কথা বলেছিল। তারা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ১৫টি সুপারিশ করেছিল, কিন্তু সম্প্রতি টিআইবি জানাচ্ছে, তাদের সুপারিশ আমলে নেয়া হয়নি। তাই এই ভয়াবহ অবস্থা।

ডেঙ্গু নিয়ে দুজন সরকারি মুখপাত্রের মতামত তুলে ধরেন, ‘এ বছর ৬৪ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ কোন ধরনের মশায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, তা আমরা জানি না’। অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন), স্বাস্থ্য অধিদফতর।

‘মশার প্রাণরাসায়নিক চরিত্র এবং মশার আচরণগত পরিবর্তন কী হয়েছে, তা নিয়ে নিয়মিত গবেষণা হওয়া দরকার’। স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান মো: গোলাম ছারোয়ার।

তিনি আরো বলেন, এই যদি হয় দায়িত্বশীলদের অসহায় আত্মসমর্পণ তাহলে এত এত টাকা লোপাট ছাড়া আর কি কিছুই করা হয়নি? শুধু ঢাকা সিটিতেই মশকনিধনে বাৎসরিক বাজেট প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা যা ক্ষমতাসীন দলের লোকজনই আত্মসাৎ করছে। ডেঙ্গু শুরু হওয়ার সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মেয়র পরিবারের প্রমোদ ভ্রমণেই প্রমাণিত হয় এই রোগ নিয়ে শাসকগোষ্ঠীর অবহেলা ও উদাসীনতা। মানবতাহীন অনির্বাচিত গণবিরোধী সরকার বলেই তারা জনস্বাস্থ্যের প্রতি ভ্রক্ষেপহীন। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও দুই মেয়রের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করছি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আপনাদের মাধ্যমে দেশের সকল দেশপ্রেমিক মানুষ এবং বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সকল নেতাকর্মীদের দেশের এই দুর্যোগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আমাদের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন ও তাবিথ আওয়াল এবং জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও ড্যাব যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে সকলকে সহযোগিতা করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা: ফরহাদ হালিম ডোনার, ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা: হারুন আল রশিদ, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: মো: রফিকুল ইসলাম, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ডা: পারভেজ রেজা কাকন প্রমুখ।

কিউএনবি/বিপুল/১০.০৯.২০২৩/দুপুর ১.১২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit