গুলশান আরা ইসলাম এর জীবনের খণ্ডচিত্র : দুঃস্বপ্ন
—————————————————————
রাতের খানা সেরে আমাদের পরিবার সারাদিনে সকলের কর্ম এবং আত্নীয় পরিজন বন্ধু সম্পর্কে কে কার খবর জানি একে অপরকে শেয়ার করি। টেলিভিশনে নিউজ দেখি, দেশের হাল চাল নিয়েও মাঝেমধ্যে কথা বলি। ইদানিং একটু বেশিই দেশ ভাবনা হচ্ছে যেনো।
এখন দেশে একধরনের রক্তপাত হীন যুদ্ধ চলছে। গভমেন্ট পলিসি কি হওয়া উচিৎ সাথে বিশ্বের অন্যতম শাসক ভ্লাদিমির পুতিন এর ক্ষমতা বুদ্ধিমত্তা এবং আরো নানা বিষয়ে নানা রকম কথা বলি আমরা। ছেলে বলে এতো কথা বলছো তোমরা দেওয়ালেরও কান আছে!
আমরা দুজনই বন্ধু পরায়ণ। আত্বীয় স্বজনের সাথে যোগাযোগ টা আমাদের মতো আর সবার সমান ভাবে নেই। সকলের সব খবর আমাদের মোটামুটি জানা থাকে। এই জানার ইচ্ছা টা প্রকৃতপক্ষে অন্যের উপকারের সার্থে যেমন তেমনি আবার মৃত্যু ভয় থেকেও।
সবসময় একটা দুশ্চিন্তা কাজ করে এতো এতো ভালো মানুষ কত রকম দুর্ঘটনায় মারা যায়। দুনিয়ার কঠিন চক্রে ফেলে যায় তাদের প্রিয় সন্তান কে। আল্লাহর কাছ থেকে সন্তান উপহার পাবার পর থেকে আমি সব সময় রহমতকারিকে বলি আমাদের বাচ্চাটাকে অনাথ করো না। আমরা দুজনই চেষ্টা করি আমাদের চারপাশের মানুষ গুলোর বিপদে আপদে পাশে দাঁড়াতে যেনো আমাদের অবর্তমানে আমাদের সন্তান তাদের সাহচর্যে স্নেহ ভালবাসায় অন্তত বেঁচে থাকতে পারে।
এরই ধারাবাহিকতায় এক অসুস্থ আত্নীয় কে দেখতে যাবার সময় তাদের জন্য ঘরে রান্নাকরা খাবার নিয়ে তাদের বাড়িতে গিয়েছি। আমরা স্বামী স্ত্রী ঢুকতেই কিভাবে কি হলো আমাদের হাতের খাবারের পোটলা গুলো চোখে পরছে না। তাদেরকেও জিজ্ঞেস করতে লজ্জাবোধ হচ্ছে। তাদের ড্রয়িং রুমে গেলাম সাহেব কে জিজ্ঞাসা করবো বলে প্যাকেটগুলো সে কি গাড়িতেই ফেলে এলো! এরইমধ্যে সাহেব কে তাদের ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে দেখে ভাবলাম তবে তাই বুঝি করেছেন উনি । আমিও বেড়িয়ে পরলাম পোটলা গুলো এগিয়ে আনবার জন্য।
হঠাৎ দেখি সাহেব প্রাণপণে দিলো দৌড় কারন কি বুঝতে আরো একটু এগোতেই চোখে পরলো পোশাকধারী পুলিশ সাহেবের পেছনে ছুটছে। বিষয় বুঝে উঠার আগেই মনে হলো আমার চারপাশে সিভিল পুলিশ ঘিরে ধরেছে। আমি ভয়ে ভয়ে একটু এগিয়ে একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ঢুকে আমরা বিপদে পরেছি জানাতে আমার এক কাজিন কে কল করলাম। সে পুলিশের বড় কর্মকর্তা কিন্তু সে ফোন ধরছে না।
কি করি পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আগে প্রিয় ছেলের কাছে পৌঁছাতে হবে আমায়। মাথায় ওড়না মুরে বেড়িয়ে পরলাম বাসার উদ্দেশ্যে। কিছুটা পথ পারি দিতেই রক্তচক্ষু ভয়ংকর এক রাক্ষস আমার দিকে এগিয়ে আসছে দেখে প্রাণপণে ছুটে এক জঙ্গলে ঢুকে পরলাম। সেখানে আরেক রহস্য, কতগুলো মনুষ্য খুলি সামনে নিয়ে বসে এক দৈত্য ধোয়া উড়িয়ে ঢোল বাজিয়ে এক মানব শিশুর শরীর থেকে মাথা আলাদা করতে মত্ত !
ঐ দৃশ্য দেখে সেখান থেকে পালাতে যেয়ে এক মহাবিপদে কোনো দিকেই কোন পথ চোখে পরছে না চারিদিকে কেবল কর্দমাক্ত দুর্গন্ধযুক্ত জলাশয়। দূরে একটা পুরোনো মন্দির টাইপ বাড়ি হয়তো ঐ বাড়িটির ওপারে যেতে পারলে নতুন কোন রাস্তা মিলবে ছেলের কাছে পৌঁছাবার।
ভাবার সময় কোথায় পেছন থেকে ছুটে আসছে তীর হাতে সেই দৈত্য! যেই দেখা সেই জলাশয়ে লাফ ! আর কি অদ্ভুত এক অনুভব সমস্ত দুরগন্ধ কর্দমাক্ত পানি হয়ে গেলো টলটলে সুঘ্রাণ সুপেয় জল! তারপর ছেলের হাতে নিজের হাত আবিষ্কার। সে রেডি কলেজেযাবে বলে গেট লাগাতে ডাকছে।
আর পাশেই পেয়ে গেলাম পুলিশের ধাওয়া খাওয়া সাহেবকেও। বুঝে গেলাম দেশ নিয়ে আর ভাবা যাবে না কখনো।
লেখিকাঃ ‘গুলশান আরা ইসলাম’ এর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে পোস্টটি সংগ্রহ করা হয়েছে। ঢাকার মোহাম্মদপুরের গুলশান আরা ইসলাম নিয়মিতভাবে চমৎকার লেখনীর মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক চমৎকার পোস্ট উপহার দিয়ে থাকেন।
কিউএনবি/বিপুল/১০.০৮.২০২২/সন্ধ্যা ৭.১০