নাহিদ-রুমকীর অসমাপ্ত কথোপকথন
———————————————
বেশ কয়েকদিন পর ফোন করল রুমকী। সন্ধ্যার পর রুমকীর ফোন রিসিভ করল নাহিদ। কেমন আছ নাহিদ ? আলহামদুলিল্লাহ বলে জবাব দিল নাহিদ। শুরুতেই দেশের কথা জিজ্ঞাসা করল রুমকী। কেমন আছে বাংলাদেশ ? কেমন চলছে সব ?
নাহিদ হেসে জবাব দিল, তোমার প্রশ্ন দুটো খুবই ছোট। কিন্তু এর জবাব অনেক বড় আর বিস্তারিত। এক কথায় এই প্রশ্নের জবাব দেয়া মুশকিল। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ভালো নেই। প্রচন্ড গরমে দেশের মানুষ অতিষ্ট। বিদ্যুতের লোডশেডিং আগের মতই। সহসা উন্নতির কোন লক্ষণ নেই। একঘন্টার লোডশেডিং এখন কয়েক ঘন্টা ব্যাপি চলে। নামেই শুধু বিদ্যুৎ বিভাগের লোডশেডিং চার্ট করা হয়েছে। বাস্তবের সাথে এর কোন মিল নেই। এছাড়া নিত্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখীতো আছেই।
রাজনীতি সম্পর্কে কিছু বলো। এর মধ্যে তরতাজা দুটো প্রাণ চলে গেল। তুমি ভোলা হত্যাকান্ড সম্পর্কে কিছু বলো। এ নিয়ে বিএনপি কি প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে ? রুমকী অনুরোধ করল নাহিদকে ভোলা হত্যাকান্ড সম্পর্কে। নাহিদ বলল, তোমাকে আগেই বলেছি, বিএনপিকে এখন সকলই মন্দিরের ঘন্টার মত মনে করে। আসতে যেতে আওয়ামী লীগ অথবা সরকার এই ঘন্টায় একটা করে বারী দিয়ে যায়। আঘাতের মাত্রাটা বেশি হলে হাউকাউ দীর্ঘায়িত হয়। আঘাত কম হলে দ্রুত আবার গা সওয়া পরিস্থিতি লাভ করে।
রুমকী বলল, এবার মনে হয় আঘাতের মাত্রাটা বেশি ? দুই দুইটা প্রাণ অকালে চলে গেল ? হ্যা অবশ্যই আঘাতের মাত্রাটা বেশি। তা না হলে পরপর দুই জানাজায় পল্টনে এতো বিপুল নেতাকর্মীর সমাবেশ হতোনা। নাহিদ বলল। এখন কি করবে বিএনপি ? রুমকী জিজ্ঞাসা করল। নাহিদ স্পষ্ট করে বলল, সরকার বিরোধী আন্দোলনে বিএনপি বড় ধরণের ইস্যু পেয়ে গেছে। এই হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় আন্দোলন জমাতে না পারলে বিএনপি আর কোন ইস্যুতে আন্দোলন করবে ?
রুমকী এবার ভিন্ন প্রসঙ্গ উত্থাপন করল। নাহিদ আমি খুব অবাক হচ্ছি, বাংলাদেশের মানুষের কি খেয়ে দিয়ে কাজ নেই? এত ফালতু বিষয়ে কেন তারা রিয়াক্ট করে ? মূল সমস্যার প্রতিবাদ করতে তারা ভুলে গেছে। কি সব ফালতু বিষয় নিয়ে তারা মাতামাতি করছে। নাহিদ জানতে চাইল, কোন বিষয়ে তুমি বলছ ? রুমকী ঘটনাটা খুলে বলল।
ঢাকায় ছেলের বাসায় বেড়াতে এসে সামান আলী সরকার রাজধানীর সনি স্কয়ারে গিয়েছিলেন ‘পরাণ’ সিনেমা দেখতে। কিন্তু লুঙ্গিপরা থাকায় সেই ব্যক্তির কাছে টিকিট বিক্রি করেনি সেই হল কর্তৃপক্ষ। পরে সেই ব্যক্তি সিনেমা না দেখেই বের হয়ে যান। সম্প্রতি ছবিসহ এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। তরুণ যুবকেরা এর প্রতিবাদে লুঙ্গি পরে সিনেমা দেখে প্রতিবাদ জানায়।
নাহিদ বলল, এরকম নন ইস্যুকে ইস্যু বানানোর প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক বিমুখতার কারণে। যে তরুণ যুবকের রক্তে আগুন ধরে যাবে অন্যায় জুলুম দেখে, সেই তরুনের মাথায় কাজ করে উদ্ভট কিছু করে আলোচনায় থাকতে। ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে তরুণ যুবকেরা এখন নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। এই পরিস্থিতির জন্যে সম্পূর্ণভাবে রাজনীতিবিদরা দায়ী।
রুমকী নাহিদের কথাকে সমর্থন করে জানতে চাইল, এর থেকে পরিত্রানের উপায় কি ? নাহিদ বলল, উপায় একটাই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া গুলোকে নিস্কলুষ করতে হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি তৈরী করতে হবে। ভাল কাজের প্রতিযোগীতার মধ্যে রাজনীতিবিদরা যখন ব্যস্ত হয়ে পড়বে তখন অটোমেটিক সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। মানুষ আবার রাজনীতিমুখী হবে।
রুমকী বলল, সেটার আদৌ কোন লক্ষণ দেখিনা। কয়েকদিন আগে প্রেসক্লাবে বক্তব্য দিতে যেয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসলে একদিনেই সারাদেশে ৫ লক্ষ লোক মারা যাবে। কারা এই হত্যার শিকার কে হবে সেটা সহজেই অনুমেয়। নাহিদ বলল, আমিও শুনেছি এমন কথা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদেরের মুখে। কিন্তু এমনটি কেন হবে?
৯ বছর দোর্দন্ড প্রতাপে স্বৈরশাসক এরশাদ ক্ষমতায় ছিলেন, আন্দোলনের মুখে এরশাদের পতন ঘটলেও জাতীয় পার্টির একটি লোকও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেনি। বিএনপিও ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে বহাল তবিয়তে এই দেশেই বাস করেছে। কিন্তু এখন কাদের সিদ্দিকীর যা বলছে তাও অস্বীকার করার উপায় নেই।
রুমকী বলল, তাহলে এর কারণ কি ? নাহিদ বলল, সে অনেক কথা। আরেকদিন বলব তোমাকে।
লেখকঃ লুৎফর রহমান। রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট।
কিউএনবি/বিপুল/০৫.০৮.২০২২/ রাত ১১.৫০