ডেস্ক নিউজ : ঢলের পানি বিছানা যেনো ছুঁই ছুঁই। এমন অবস্থায় গত কদিন ধরেই চৌকির উপর চৌকি দিয়ে দিনানিপাত করছেন নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলাসহ বন্যা কবলিত এলাকাগুলোর পানিবন্দী মানুষেরা। পানিতে পড়ে মৃত্যু ভয়ে শিশুদের কোলে কোলেই রাখতে হয় দিনভর। কারো কারো কোন রকম একবেলা খাওয়া হলেও কেউ কেউ চিড়া মুড়িতেই সীমাবদ্ধ। নেই বিদ্যুৎ সরবারাহ। কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সটিও পানিতে ভরে আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সোমেশ্বরী নদীর কলমাকান্দা শাখার উব্দাখালির পানি বিপৎসীমার ১১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে নতুন করে কংশ নদীর পানি বিপৎসীমার ১১১ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফলে গত শুক্রবার নেত্রকোনা সদর উপজেলার মেদনী ইউনিয়নের জঙ্গল বড়ওয়ারী শহর রক্ষা বাঁধের ৫০ মিটার ধসে যায়। নেত্রকোনা জেলা সদর পড়ে হুমকির মুখে। এরপর শনিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে ফেলা হচ্ছে বালু ভর্তি সিনথেটিক প্লাস্টিক ব্যাগ। এ পর্যন্ত ৩৪০০ ব্যাগ ফেলে বাঁধের ৫০ মিটার ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা মেরামত চলছে। বাঁধে আরও ফেলা হবে ৫০০০ ব্যাগ। ইউপি চেয়ারম্যান খাজা মিজানুর রহমান জানান মোহনগঞ্জ উপজেলার গাগলাজুর থেকে আনা হচ্ছে ব্যাগগুলো। এগুলো দিয়ে বাঁধ রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
সরেজমিন দেখা গেছে, পাহাড়ি ঢলে এবং অব্যাহত ভারি বর্ষনে ডুবে গেছে নেত্রকোনা জেলার ৬ উপজেলার ৩৯ টি ইউনিয়ন। তারমধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সীমান্ত উপজেলা কলমাকান্দা। যার আটটি ইউনয়নের ৩৪৫ টি গ্রামের প্রায় সবগুলোই। এদিকে পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর উপজেলারও চিত্র একই। এছাড়াও নেত্রকোনা সদর, বারহাট্টা, আটপাড়া ও মোহনগঞ্জসহ পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন জেলার লক্ষধিক মানুষ। অনেকেই বাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে চলে গেলেও বেশির ভাগ মানুষই পানির উপর নিজ বাড়িতেই রয়েছেন বন্দী দশায়। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ১৮৮ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তারমধ্যে ১৬১১৮ জন আশ্রয় নিয়েছেন।
অনেকেই দিন কাটাচ্ছেন চিড়া মুড়িতে। আবার অনেকে দুদিন ধরে না খেয়ে। তাদের সাথে গৃহ পালিত পশু গুলোও পড়েছে খাদ্যাভাবে। নিজেরা কোন রকম পানির উপর ভর করে থাকলেও বৃষ্টিতে পশুদেরকে রাখছেন সড়কেই। দেখা দিয়েছে খাদ্য সঙ্কট। সুপেয় পানি না থাকায় বাধ্য হয়েই ময়লা পানি পান করছেন পানিবন্দী মানুষেরা। তাদের অনেকের অভিযোগ নির্বাচন আসলেই জন প্রতিনিধেদের দেখা মেলে। এখন কষ্টের দিনে তারা পাচ্ছেন না কারো দেখা। অন্যদিকে হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরী উপজেলার উঁচু এলাকাগুলোও প্লাবিত হয়ে ঢুকছে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে।
কিউএনবি/আয়শা/১৯.০৬.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৫:০৮