শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন

শরীয়তপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দালালসহ বহুমুখী প্রভাব, অতিরিক্ত টাকায় মিলে পাসপোর্ট

খোরশেদ আলম বাবুল শরীয়তপুর প্রতিনিধি ।
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০২২
  • ৩০৪ Time View

খোরশেদ আলম বাবুল শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস দালাল, সাংবাদিক, আইনজীবী, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারী ও রাজনৈতিক প্রভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় বলে জানাগেছে। কর্তৃপক্ষের সহায়তায় দালালচক্র টিকে আছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। পাসপোর্ট অফিসে দায়িত্বরত আনসার. আউট সোর্সিং পদে নিয়োগ প্রাপ্তরা ও স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীরাও দালালির সাথে জড়িত। পাসপোর্ট অফিস ঘিরে রয়েছে কম্পিউটার দোকান ও এজেন্ট ব্যাংকিং। ফরম পূরণের আড়ালে চলছে তাদেরও পাসপোর্ট দালালী। শরীয়তপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস বহুমুখী প্রভাবে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে বলে দাবী করেছেন সহকারী পরিচালক সাদ্দাম হোসেন।


হয়রানীর শিকার গ্রাহকদের অভিযোগের সূত্র ধরে শরীয়তপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে রয়েছে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত দালাল চক্র। দালালদের হাত ধরে যে সকল গ্রাহক এসেছে তাদের আবেদন ফরমে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে বিশেষ চিহ্ন দিয়ে দেয়া হয়। ফরম যাচাই কাউন্টারে শুধু চিহ্ন দেখা হয়। যে সকল ফরমে চিহ্ন থাকে সেই সকল ফরম গ্রহণ করা হয়। চিহ্ন বিহীন ফরম বিভিন্ন কৌশলে ফেরত পাঠানো হয়। পরবর্তীতে দালালের হাত ধরে আসলেই সকল সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।

পাসপোর্ট অফিসের অপেক্ষমান কক্ষে আঙ্গুল ও চোখের ছাপ দেওয়ার জন্য ফরম হাতে বসে থাকা গ্রাহকদের সাথে আলাপ হয়। তাদের হাতে থাকা ফরমে নিখুত ভাবে দৃষ্টি রাখতে দেখা যায় বিশেষ ধরণের চিহ্নগুলো। ফরমের ভিন্ন ভিন্ন স্থানের কোথাও কলমের কালির ফোটার মতো, কোথাও টিক আবার কোথাও গোল চিহ্ন রয়েছে। সহজে পাসপোর্ট পাওয়ার সহজ উপায় হলো এই বিশেষ চিহ্ন। তারা প্রত্যেকেই দালালের হাত ধরে এসেছে। দালালদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, শরীয়তপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস কর্তৃপক্ষের নিবন্ধিত দালাল চক্র রয়েছে। প্রত্যেকের রয়েছে আলাদা আলাদা কোড নম্বর। কোড নম্বরতো আর ফরমে লেখা যায় না। তাই তারা ফরমের একেক জায়গায় একেক দালাল বিশেষ চিহ্ন দিয়ে দেয়। ফরম জমা কাউন্টারে দায়িত্বরত কর্মচারি ছাড়া ওই চিহ্ন সাধারণ মানুষের চোখে পড়ার কথা না। ফরম জমা কাউন্টারে ফরমের ভুল দেখা হয়না। ফরম উল্টে পাল্টে শুধু চিহ্ন দেখা হয়। চিহ্ন থাকলেই ফরম ওকে। জমা নিয়ে নেয়।

পরে তারা বিশেষ চিহ্নের সাথে কোড নম্বরের সমন্বয় করে হিসেব কষে কার কোডে কয়টি ফরম জমা পড়েছে। অফিস টাইম শেষে আমাদের কাছ থেকে প্রতি ফরম বাবদ ১১০০ টাকা করে নিয়ে নেয়। যে দালাল টাকা পরিশোধ না করে পরের দিন সেই দালালের ফরম ফেরত যাবে। একেকটা পাসপোর্ট থেকে আমরা হয়তো ৩০০ টাকা পাই। সিংহ ভাগ টাকাতো অফিসেই দিতে হয়। কর্মকর্তাদের সহায়তা ছাড়া আমাদের দালালি করার সুযোগ নাই। তাই দালালি টিকিয়ে রাখতেই আমরা অফিস নির্ধারিত টাকা পরিশোধ করি। ডিসি অফিসের নওশের, দুলাল, মাসুদসহ কয়েকজন আইনজীবীর মোহরারের কোড আছে। ডিসি অফিস ও পাসপোর্ট অফিস ঘিরে যে সকল কম্পিউটারের দোকান রয়েছে তাদের অনেকেরই দালালি কোড রয়েছে। তারাতো প্রকাশ্যেই লিখে রাখে এখানে পাসপোর্টের ফরম পূরণ ও ফি গ্রহণ করা হয়। গ্রাহক তাদের কাছেই বেশী যায়।

পাসপোর্টের ভুল সংশোধনের জন্য হাফিজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি আইনজীবীর কাছে যায়। সেই আইনজীবী ভুল সংশোধন করে হাফিজুর রহমানের পাসপোর্ট করে ১ মাসের মধ্যে পাসপোর্ট হস্তান্তরের নিশ্চয়তা দিয়ে ১৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। অথচ সব মিলিয়ে তার সর্বোচ্চ লাগতে পারত ৬ হাজার টাকা। পাসপোর্টের ফরম জমা দিতে না পেরে জাজিরা এলাকার আহসান হাবিব জানায়, সে একজন ছাত্র। ছাত্র ভিসায় বিদেশে যাওয়ার জন্য তার পাসপোর্ট প্রয়োজন। তাই সে নিজেই ফরম পূরণ করে প্রথম দিন জমা কাউন্টারে যায়। কাউন্টারে থাকা ব্যক্তি তার ফরম উল্টে পাল্টে দেখে ফেরত দিয়ে বলেন পেশার স্থলে ছাত্র কেটে কৃষক লিখে নিয়ে আসেন। পরের দিন তিনি অফিস স্ট্যাফদের পরামর্শে দালালের হাত ধরে গিয়ে ছাত্র পেশা দিয়েই তার ফরম জমা হয়।

রুহুল আমিন নামে এক ব্যক্তি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দক্ষিন পার্শ্বে কম্পিউটার কম্পোজের ব্যবসা খুলে বসেছেন। সাথে লিখে রেখেছেন পাসপোর্ট ফি কালেকশন বুথ। এখানে পাসপোর্টের সকল কার্যক্রম ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের কাজ করা হয়। একই নামে আরো একটি শাখা খুলেছেন পাসপোর্ট অফিসের সামনে। তাদের কাছে কোন গ্রাহক গেলেই সুবিধা প্যাকেজে জড়িয়ে যায়। পাসপোর্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, ন্যাশনাল আইডি, নতুন ভোটার হওয়াসহ ড্রাইভিং লাইসেন্সের সুবিধা দিয়ে থাকেন প্রতিটি কম্পিউটার দোকানদার।

শরীয়তপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক সাদ্দাম হোসেন সকল অনিয়ম সমর্থন করে বলেন, চাকুরি পাওয়ার পরে শরীয়তপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসেই তার প্রথম যোগদান। দালাল, সাংবাদিক, আইনজীবী, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারী ও রাজনৈতিক প্রভাবে তিনি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছেন। অনেকে নিজের পরিচয়ে আবার অন্যের ভায়া হয়ে মাঝে মাঝে ফরমে সাক্ষর করিয়ে নেয়। অনেকটাই আমার নিয়ন্ত্রণের বাহিরে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৪.০৫.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৩:০২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit