রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫৬ অপরাহ্ন

জীবনের সিঁড়ি

রুপা মোজাম্মেল। কানাডা প্রবাসী।
  • Update Time : শুক্রবার, ২০ মে, ২০২২
  • ৫২৫ Time View

জীবনের সিঁড়ি
—————–

কি ভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছি না!

জীবনে অনেকবার অনেক কিছু হতে ইচ্ছে হয়েছে বা হতে চেয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত কিছুই হতে পারলাম না। জীবন স্রোত ধাক্কা দিয়ে যেখানে নিলো, সেখানেই ঠেকে রইলাম।

কয়েক বছর আগে ইচ্ছে পোষণ করলাম, একটা Canadian ডিগ্রি নিলে কেমন হয়! যেই ভাবা, সেই কাজ। খোঁজ নিতে থাকলাম কোন কলেজ গেলে আমার জন্য সুবিধা হবে। কারণ চাকরি বাদ দেয়া যাবে না। চাকরির পাশাপাশি পড়ালিখা করতে হবে। অনেক খুজে একটা কলেজ ঠিক করলাম, যেটার night ক্লাস শুরু হবে ৬-১১ টা। আর আমার অফিস টাইম ৯-৫ টা। অফিস থেকে কলেজের দূরত্ব ১৫ মিনিট। সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম, এখানেই ভর্তি হব। “Subject HR” যেহেতু ম্যানেজমেন্ট জবে আছি, HR ভাল হবে।

ভর্তি হতে গেলাম অবশেষে, খুশি লাগছে! যখন কলেজ Location choose করলাম, ওরা বললো ওই location আর যে সময় টা আমি নিতে চাচ্ছি, তখন শুধু মাত্র Business management আর Payroll class হয়।

মাথাটা চক্কর মারলো, এখন কি করি, Payroll জীবনেও হবে না আমাকে দিয়ে। হিসেবে আমি খুবই কাচা। Business Management এর কথা শুনলে বমি বমি লাগে। কান্না আসছে! তাহলে কি আর ডিগ্রি নেওয়া হবে না!

অবশেষে রাস্তা না পেয়ে বমি বমি ভাব নিয়ে বিসমিল্লাহ্ বলে Business Management এই ভর্তি হলাম। মনকে সান্তনা দিলাম ডিগ্রি একটা হলেই হলো।

একসময় গ্রাজুয়েট ও করে ফেললাম ভালো নম্বর নিয়ে। তখনও বুঝতে পারিনি এই Business management তো আমার রগে রগে দৌড়াচ্ছে তখন থেকেই, যখন বয়স আমার ৭/৮। ছাড়তে চাইলেই কি আর ছাড়তে পারি!

ছোট বয়সে বিজনেস ভাল জমে আর প্রফিট ও ভালো হয়, যদি ২/৪ টা সুন্দরী অবিবাহিত খালা বা বড় বোন থাকে।

এখন আসল কথায় আসি

প্রথম প্রফিট শুরু হয়েছিল চকলেট দিয়ে। খালাদের হাতে একটা করে চিঠি পৌঁছে দিতে পারলে বেশ ভাল ভাল চকলেট পাওয়া যেত। সেগুলো পেতাম মহল্লার মামাদের থেকে, যারা খালাদের জন্য প্রেম নিবেদন করতে চাইতো।

অনেক দিন যাওয়ার পর খুব ভাল এক্সপার্ট হয়ে যাই, এক হাত চিঠি নিলে আরেক হাত টেরই পায় না, এরকম আরকি।

চকলেট তখন একা খাই না, সাথে ছোট দুই ভাইকে নিয়েও খাই। অনেক গিফট আর চকলেট খাওয়া হলো, এখন আর মুখে মজা লাগে না।

একবার ছোট খালার জন্য একটা চিঠি এলো। বলেই ফেললাম আর চিঠি নিবো না, চকলেট মজা না। মামা তখনই জোর করে হাতে একটা ৫ টাকার নোট ধরিয়ে বলল “তাহলে যা ইচ্ছা কিনে খাও”।

এই প্রথম ক্যাশ প্রফিট হেব্বি খুশি হয়ে গেলাম।

একদিন হঠাৎ বড় বোনের জন্য একটা চিঠি এলো। নিতে রাজি হলাম না, ভিষণ রিস্ক আছে। আম্মা জানতে পারলে দুনিয়া ছাড়া করে ফেলবে।

ক্যাশের পরিমাণ টা বড় ছিল, কি আর করা, রিস্ক নিয়েই ফেললাম। এমন উদ্যোগ না নিলে কি আর লাভ আসে নাকি !

খুব ভালোই চলছে দিনকাল। এর মধ্যে মেজবোনের জন্য চিঠি আসা শুরু হলো। মহল্লার ভাইয়ারা উত্তর পাক আর না পাক, তাদের চিঠি ভালোলাগার মানুষের হাতে গিয়ে পৌঁছেছে, তাতেই উনারা খুশি!

সবচেয়ে বেশি লাভ হয়েছে মেজো বোনের চাহিতিদের থেকে।

আমি এখন বড়লোক, ভিষণ বড়লোক! স্কুলে টিফিন পিরিয়ডে বন্ধুদের সাথে ভীষন টাকা খরচ করি!

হঠাৎ একটা ঝড় এসে সব লন্দ ভন্ড করে দিলো।

আম্মার কানে কথাটা পৌঁছে দিল আমারই এক স্কুল শত্রু “রূপা টিফিনে অনেক কিছু কিনে খায়”

বাসায় এলাম, এমন ধুলাই খেলাম আম্মার হাতে, পায়খানার স্যান্ডেল থেকে শুরু করে রান্নার খুন্তি পর্যন্ত কিছুই বাকি ছিল না।

আমি গরীব হতে থাকলাম, ভিষণ গরীব, এখনো পর্যন্ত গরীবই রয়ে গেলাম।

লেখিকাঃ রুপা মোজাম্মেল। কানাডা প্রবাসী। তাঁর অনুমতি স্বাপেক্ষে পোস্টটি সংগৃহিত।

কিউএনবি/বিপুল/২০.০৫.২০২২ খ্রিস্টাব্দ /সকাল ১২.৫৭

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit