·
ঈদ মোবারক।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের আজ ২য় দিন নাড়ীর টানে প্রিয় সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে। এ যেন ঢাকার বুকে ছোট্ট একখানা কাশ্মীর, যদিও এসএসএম হলের অন্তত ৯০ এর সময়কালীন সৌন্দর্য এখন আর নেই।
নাড়ীর টানে এই জন্য যে, আমার শৈশবের বেড়ে উঠার দিনগুলো থেকে শুরু করে ছাত্রজীবনের শেষ অধ্যায়টুকু এই সলিমুল্লাহ হল অর্থাৎ এসএম হলের ক্যাম্পাসেই কেটেছে, যা সম্ভব হয়েছে অামার মরহুম পিতার কল্যানে। যিনি ১৯৬৫-৬৬ সাল থেকে শুরু করে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত প্রায় টানা ৩২ বছর ছিলেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের পেশ ইমাম। যার ফলে আমার সাংসারিক জীবনের শুরুটাও কেটেছে এই ঐতিহ্যবাহী এসএম হলের দক্ষিণ পশ্চিম কর্নারের কোয়ার্টারে।
এই এস এম হলের ক্যাম্পাসের কোয়ার্টারে অবস্থান করার বদৌলতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ১৯৭৪ সাল থেকে শুরু করে ১৯৯৬ সালের সংগঠিত হাজার ঘটনাবলীর একজন নিরব দর্শক থাকার ভাগ্য কিংবা সৌভাগ্য হয়েছিল। ৭৫’ এর দুঃখজনক ১৫ই আগষ্ট, তৎপরবর্তী সময়ে এসএম হলের ক্যাম্পাসের সেই মিছিলের স্লোগান- “এই মাত্র খবর এলো, মান্না- আখতার জিতে গেল”, “জেলের তালা ভাংবো, জলিল ভাইকে আনবো”, বাকশালী ছাত্রলীগের স্লোগান- “অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, বাকশাল দিবে সমাধান”, জাসদ ছাত্রলীগের স্লোগান- “অস্ত্র- শিক্ষা এক সংগে চলবে না”, ” দেশ শাসন করবে কারা, কৃষক শ্রমিক সর্বহারা”, ইত্যাদি হরেক রকমের স্লোগান অাজে হঠাৎ হঠাৎ অবচেতন মনে এসে মনে করিয়ে দেয়।
মনে পড়ে যায়, সেই আবুল কাসেম চৌধুরী, নারায়নগঞ্জের অধিবাসী বদু ভাই থাকতেন এস এম হলের দক্ষিণ পশ্চিম কর্নারের দোতলায়, মফিকুল হাসান তৃপ্তি ভাই, ইকবাল রশিদ অপু ভাই, অাবুল বাসার ভাই, সাবেক ভিপি মুনির হোসেন ভাই, সাবেক জিএস মঞ্জুর এলাহী ভাই (অামার অাপন খালাতো ভাই), জাসদ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা অাবদুস সাত্তার ভাই, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মেহেদী হাসান সহ অনেকেরই সাথে ছিল সুসম্পর্ক, আবার সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ভুলে গেছি অনেকের নাম। দেখেছি অনেক উত্থান পতন, দেখেছি কত হল দখল, পালটা দখল, নিরব দর্শক ছিলাম ক্যাম্পাসের অজস্র সংঘর্ষের ঘটনার।
উপভোগ করেছি এস এম হলের ১৯৭৯ সালের সূবর্ণ জয়ন্তী। এসএম হলের কেন্টিনের সামনের লনে বিশাল প্যান্ডেলের অনুষ্ঠান বাসার সামনের জানালা দিয়ে উপভোগ করেছি, যেখানে রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, আবিদা সুলতানা থেকে শুরু করে প্রখ্যাত সব শিল্পীর উপস্থিতিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত হতে গিয়ে জাসদ ছাত্রলীগের বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
আমার গুছায়ে লিখার অভ্যাস কোন কালেই ছিল না, এখনো নেই। যাহোক, এসএম হলে নাড়ির টানে যাওয়ার কথা লিখতে গিয়ে অগোছালোভাবে যা মনে ছিল বা আসছে তাই লিখলাম। আমার এসএম হলে আজকের যাওয়াটাও আমার ছোট ছেলে তাওসিফ এলাহীর ঈদে এস এম হল ঘুরতে যাওয়ার উসিলায়।
আমাদের কথাঃ কুইকনিউজবিডি.কমে ফেসবুক কর্নার নামে আমরা একটি নতুন বিভাগ চালু করেছি। প্রতিদিন ফেসবুক টাইমলাইনে অনেকেই জীবনের খন্ডচিত্র এঁকে থাকেন। আমরা সে খন্ডচিত্র গুলোকে জোড়া দেয়ার চেষ্টা করছি। এখন থেকে ফেসবুক কর্নার নামের এই বিভাগে নিয়মিতভাবে অনেকের জীবনের খন্ডচিত্র তুলে ধরা হবে।
আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাবেক আবাসিক ছাত্র মোহাম্মদ মাহবুবে এলাহী‘র ফেসবুক টাইমলাইন থেকে উপরোক্ত পোস্ট সংগ্রহ করা হয়েছে।
কিউএনবি/বিপুল/বুধবার, ০৫ মে ২০২২খ্রিস্টাব্দ/ রাত ০১.৫১