এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় প্রতিনিয়ত গবাদিপশুর খাদ্যের দাম বাড়ছেই। মাথায় হাত পড়েছে খামার মালিকদের খাদ্যযোগান দিতে রিতিমত হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এ অবস্থায় পশু পালনে খাচ্ছেন ছোট-বড় সব ধরনের খামারি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। খামারিরা বলছেন, দোকানিরা প্রথমে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ধোঁয়া তুলে পশুখাদ্যের দাম বাড়ান। এরপর তারা অজুহাত তুলেছেন তেলের দাম বেশি। দুই মাস আগেও পশুখাদ্যের দাম সহনীয় মাত্রায় ছিল। সম্প্রতি সেই দাম চরম হারে বেড়েছে। ফলে খামারিরা খামার টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে।
খামারি ও গোখাদ্য ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুই মাস আগে এক কেজি গমের ভুসির দাম ছিল ২৬ থেকে ২৭ টাকা, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা। প্রতি কেজি খৈল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। দুই মাস আগে যে পালিশ-কুড়ো ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে, বর্তমানে সে পালিশ-কুড়োর দাম ২৮ থেকে ৩০ টাকা। কয়েক দিন আগেও এক কাউন ধানের বিচালির দাম ছিল তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা, যা বর্তমানে প্রায় ৭ হাজার টাকা। এভাবে সব ধরনের পশু খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। গোখাদ্যের দাম বাড়ার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রান্তিক খামারিরা। উপজেলার সিংহঝুলি গ্রামের গরুর খামারি আব্দুল আলিম, কাজল খান, টনিরাজ, সাবের আলী, খাইরুল সরদার, মিজানুর রহমান কাটুসহ কয়েকজন বলেন, কৃষিকাজ বা অন্য পেশার পাশাপাশি বাড়িতে দু-একটি গরু মোটাতাজা করে বাড়তি উপার্জনের চেষ্টা করি। তবে সম্প্রতি খৈল, ভুসি ও বিচালির দাম এত বৃদ্ধি পেয়েছে গরু পালন করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাদের দাবি কৃষকের উৎপাদিত সবজির দাম বাড়লে পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ সবখানে হইচই শুরু হলেও পশু-খাদ্যের দাম বাড়লে কেউ কিছু বলেন না। একইভাবে কথা বলেন বাগারদাড়ি গ্রামের সোহরাব হোসেন শ্রবণ, অহেদ আলী, স্বরুপদাহ গ্রামের মাসুম হোসেন একই গ্রামের ইউপি সদস্য ফখরুল ইসলামসহ ছোট-ছোট খামারিরা।
চৌগাছা পৌর শহরের বাকপাড়া গ্রামের রেহেনা খাতুনের স্বামী মারা গেছেন কয়েক মাস আগে। স্বামী বেঁচে থাকতেই তিনটি গরু পালন করতেন তিনি। সংসারে দুই ছোট ছেলে ও একটি মেয়ে নিয়ে তিনি গাভি পালন ও সামান্য কিছু জমিতে সবজি চাষ করে সংসার চালাচ্ছিলেন। গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন তিনি কীভাবে গরুগুলোর খাদ্যের জোগান দেবেন, তা নিয়ে মহাচিন্তায় পড়েছেন।তিনি বলেন,এভাবে দাম বাড়তে থাকলে আমরা গরু পালন করব কীভাবে? আর কীভাবেই বা ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার চালাব। খামারই বন্ধ করে দেওয়ার উপক্রম হয়ে উঠেছে। চৌগাছা বাজারের গোখাদ্য বিক্রেতা উসমান গনি বলেন, গবাদিপশুর খাদ্যের দাম ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত ঝগড়া-বিবাদ হচ্ছে। খামারিরা খাদ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছেন।
উপজেলার মসিয়ূরনগর গ্রামের গরুর খামারি মাস্টার আলাউদ্দিন বলেন, প্রতিবছর ঈদুল আজহা সামনে রেখে গরু পালন করে থাকি। এভাবে গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় যে খরচ হবে, বাজারে সে তুলনায় গরুর দাম পাওয়া যাবে কিনা এ নিয়ে সংশয়ে আছি। গরু ব্যবসায়ী আলী আহাম্মেদ বলেন, গরু-ছাগলের দামও খাদ্য মূল্যের মতো বেড়ে যাচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পক্ষে গরু-ছাগল কিনে ব্যবসা করাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। খাদ্য ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের এখনই লাগাম টেনে ধরা দরকার। উপজেলা প্রাণীসম্পাদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রভাষ চন্দ্র গোস্বামী বলেন, সম্প্রতি গো-খাদ্যের দাম আন্তর্জাতিকবাজারে বেড়ে গেছে। তবে আমরা উপজেলা প্রাণীসম্পাদ অফিসের পক্ষ থেকে খামারিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষন দিয়েবেশি বেশী উন্নত জাতের ঘাস চাষ করতে উৎসহ দিয়ে যাচ্ছি।
কিউএনবি/আয়শা/১৪ই মার্চ, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৭:২১