মোঃ সালাহউদ্দিন আহমেদ, নরসিংদী : বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এ যেন সবুজের মাঝে হলুদের সমাহার। যতদূর চোখ যায়, সূর্যের দিকে মুখ করে হাসছে সূর্যমুখী। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুলের দিক পরিবর্তন হয়। সকালে পূর্ব দিকে তাকিয়ে থাকলেও বিকেলে দিক পরিবর্তন করে ধাবিত হয় পশ্চিমে। নরসিংদীর মেঘনা নদীর পাড়ের সূর্যমুখী ফুলের বাগানে এমন দৃশ্য দেখা মিলল। আর এমন মনোরম দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। এদিকে, বাগান মালিকরা ফুলের চাষের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছেন ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য। এ জন্য জনপ্রতি গুণতে হবে ২০ টাকা। এই টিকেট বিক্রি করে আয় করছেন ১০ হাজার টাকা। অন্যদিকে বিঘাপ্রতি ২০ হাজার টাকা খরচে ৫০ হাজার টাকা আয় হবে বলে জানায় চাষিরা। তবে জেলায় সূর্যমুখী আবাদ বাড়াতে কৃষক পর্যায়ে সরকারিভাবে প্রণোদনা এবং পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পড়ন্ত বিকেলে একদল মেয়ে সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে হাসছে। দৃষ্টিকাড়া ফুলের মধ্যে মুঠোফোনে বাক্সবন্দি করছে প্রিয় মুহূর্তগুলো। কেউ প্রিয়জনের হাত ধরে উপভোগ করছে শেষ বিকেলের হলুদ আভা। কেউ আবার নাচের তালে মিশিয়ে দিচ্ছে গোধূলি। সূর্যমুখী ফুলের বাগানের পাশেই মেঘনা নদী। নদীর ঢেউ আছড়ে পড়ছে বাগানের সীমানা ঘেঁষে। এই দৃশ্য নরসিংদীর নাগরিয়াকান্দি শেখ হাসিনা সেতুর পাশের সূর্যমুখী বাগানের। ব্রিজের দক্ষিণ পাশে তাকালেই হলুদ আর হলুদ। উপর থেকে তাকালে মনে হয়, হলুদ সুতোয় গিট দিয়ে কোনো কাঁথা সেলাই করা হয়েছে। তবে সেই কাঁথার অন্দর মহলে ঢুকে নিজেকে রাঙাতে গুণতে হবে জনপ্রতি ২০ টাকা। একটু প্রশান্তির খোঁজে এখানে হাজারও ফুলপ্রেমী প্রতিদিন জড়ো হন সৌন্দর্য্য দেখতে। নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ হয়েছে। বীজ বপনের পর ফসল সংগ্রহ করতে প্রায় তিনমাস সময় লাগে। প্রতিটি গাছে একটি করে ফুল আসে।
সরিষা চাষ থেকেও খরচ কম ও ফলন বেশি এবং লাভজনক। ৪ থেকে ৫ কেজি বীজ দিয়ে ১ কেজি তেল পাওয়া যায়, যার বাজার মূল্য ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। তবে তারা সূর্যমুখী চাষ করে দ্বিগুণ লাভ করতে পারবেন। সূর্যমুখী চাষ যাতে বৃদ্ধি পায় এ জন্য কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় কৃষকদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই ফুলের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। সূর্যমুখী বাগানে ঘুরতে আসা আরেক দর্শনার্থীরা বলেন, চমৎকার লাগছে। আসলেই সূর্যমুখী বাগান আমাদের মুগ্ধ করেছে। ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, বাসা বাড়িতে বিভিন্ন ফুলের বাগান করা গেলেও সূর্যমুখী ফুলের বাগান করাটা খুব একটা হয়ে উঠে না। এ ছাড়া একসঙ্গে অনেকগুলো সূর্যমুখী ফুল দেখে মনটা ভরে যায়। তাই ঢাকা থেকে এখানে এসে বাগানটিও দেখা হলো। বন্ধুমহল সানফ্লাওয়ার গার্ডেনের সদস্যরা বলেন, বর্ষার সময় রাস্তার দু’পাশে পানি থাকায় এই এলাকায় পর্যটন ও দর্শনার্থীদের মুখরিত থাকে।
নদীর চরাঞ্চলের অধিকাংশ জমি পতিত অবস্থায় পড়ে থাকে। দর্শনার্থীদের কথা চিন্তা করে আমরা বন্ধুমহল ১৩ বিঘা জমিতে এবার সূর্যমূখী ফুল চাষ করেছি। ফুল চাষ করার উদ্দেশ্যই হলো দর্শনার্থীদেরকে বিনোদন দেওয়ার পাশাপাশি এলাকার কিছু বেকার ও কর্মহীনদের কর্মসংস্থা করে সহযোগিতা করা। প্রকৃতি আর ফুলপ্রেমীদের মুগ্ধ করেছে আমাদের সূর্যমুখী বাগান। দর্শনার্থী ও সৌন্দর্য প্রিয় ছাড়াও জুটিবদ্ধ হয়ে শত শত তরুণ-তরুণী প্রতিদিন ঘুরতে আসেন ফুলের বাগানে। তবে আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো। প্রতি বিঘা জমিতে ৪ হাজার টাকা খরচ করে বিঘা প্রতি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভের আশা করছি।
নরসিংদীর সদরে পৌর এলাকার নাগরিয়াকান্দি (শেখ হাসিনা সেতু) মেঘনা নদীর পশ্চিম দিকে সানফ্লাওয়ার গার্ডেন ও নজরপুর ইউনিয়নের দড়িনবীপুরে (শেখ হাসিনা সেতু) মেঘনা নদী পূর্ব পাশে বন্ধুমহল সানফ্লাওয়ার গার্ডেন নামে আরও একটি পর্যটনমুখী সূর্যমুখী বাগান আছে এবং পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে আরও একটি পর্যটনমুখী সূর্যমুখী বাগান রয়েছে। এর মাধ্যমে চাষিরা তাদের ফুলের চাষের পাশাপাশি পর্যটনের জন্য একটু বাড়তি আয় করছেন।
কিউএনবি/অনিমা/২৭শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/দুপুর ১:৪১